বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ০৮:০২ অপরাহ্ন
১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ হেমন্তকাল, ১৫ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
ব্রেকিং নিউজ
ফরিদপুরে উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়ন পত্র জমা দিলেন প্রার্থীরা আবারো ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ডেকেছে বিএনপি নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন, নিক্সন চৌধুরীকে তলব করেছে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি মানবতাবিরোধী অপরাধ বাগেরহাটের ৭ জনের মৃত্যুদণ্ড পর্যবেক্ষক পাঠানো না-পাঠানো জাতিসংঘের বিষয়, আমরা চিন্তিত নই: ওবায়দুল কাদের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় সাকিব আল হাসানকে তলব করেছে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো পর্যবেক্ষক পাঠাবে না জাতিসংঘ যুদ্ধবিরতি মেয়ার অতিরিক্ত একদিনের জন্য বাড়ানো হয়েছে ককটেল ফাটিয়ে গাজীপুরের ঢাকা বাইপাস মহাসড়কে দুটি কাভার্ড ভ্যানে আগুন

সময়ের সাথে রিচ-ফুড কাচ্চি বিরিয়ানি হয়ে গেল মিডল ক্লাস ফুড

অনলাইন ডেস্ক
  • Update Time : বুধবার, ১৫ মার্চ, ২০২৩
  • ৬৮ Time View

কাচ্চি বিরিয়ানির জন্ম মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে। তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তানের লোকেদের পছন্দ ছিল লাল মাংস (খাসি/ভেড়ার মাংস)। এই লাল মাংস দিয়েই কাচ্চির প্রচলন শুরু করে শীতপ্রধাণ এই অঞ্চলের মানুষগুলি। চাল, মাখন, লবণ, গোলমরিচ, এলাচ আর স্থানীয় মসলা জয়ফল সহযোগে একটি খাবার প্রস্তুত করতো তারা।

কাচ্চি বিরিয়ানি সারাদেশেই একটি পরিচিত নাম, বিয়েবাড়ির লোভনীয় ডিশ। ‘কাচ্চি আপু’ থেকে ‘কাচ্চি ফুপু’- নানাবিধ নামের কাচ্চি রেস্টুরেন্টে দেশ সয়লাব। সম্প্রতি কাচ্চি আবার নতুনভাবে আলোচনায় এসেছে কাচ্চিতে ব্যবহৃত সন্দেহজনক মাংসের জন্য।

বিরিয়ানি বর্তমানে উপমহাদেশের সিগনেচার ডিশ হলেও মধ্য এশিয়ার অনেক দেশেই বিভিন্ন নামে বিরিয়ানির মত খাবার প্রচলিত। তবে আমাদের নিজস্ব রন্ধনশৈলী এবং মসলা বিরিয়ানিকে সম্পূর্ণ ভিন্ন বৈশিষ্ট্য দিয়েছে। বিরিয়ানির উৎস নিয়ে বহু মতবাদ রয়েছে। তবে আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে সম্রাট শাহজাহানের সাথে সম্পর্কিত ঘটনাটি।

১৬৩৮ এর দিকে সম্রাট শাহজাহান লাল কেল্লার কাজ শুরু করেন। অনেক সময় তিনি নির্মাণ কাজ ঘুরে ফিরে দেখতেন। এমনই একদিন পরিদর্শনের সময় নির্মাণ কর্মীদের থাকার জায়গার পাশ দিয়ে হাঁটছিলেন। তখন অদ্ভুত সুন্দর এক খাবারের ঘ্রাণ তার নাকে আসে। প্রাসাদে ফিরে এসে প্রধান পাচককে ডেকে ঘটনাটি বলেন, সাথে নির্দেশ দেন কে কী খাবার রান্না করছিল তা জানার জন্য।

বাদশাহী বাবুর্চী খবর নিতে গিয়ে জানতে পারেন, সে সময়ে সবাই কাজে থাকে, কেউ ডেরায় থাকে না। ঘটনা হলো শ্রমিকরা রান্না করার সময় পায় না, তাই সকালে কাজে বের হবার আগে এক হাড়িতে চাল, ডাল, মাংস মিলিয়ে তার মুখ ময়দার ডেলা দিয়ে সিল করে দেয়। অল্প আঁচে ঘণ্টার পর ঘন্টা সেটা রান্না হতে থাকে। তারা যখন খেতে আসে, খাবার প্রায় প্রস্তুত হয়ে যায়। সেদিন মাংস আর চাল ছিল। রান্না সম্পূর্ণ হয়ে গেলে ময়দার সিল ভেঙ্গে খাবারের ঘ্রাণ বের হয়, আর সেটাই সম্ভবত বাদশাহর নাকে এসেছে। পরে বাদশাহী বাবুর্চী তার মনমতো শাহী মসলার মাধুরী মিশিয়ে রান্না শুরু করেন বিরিয়ানি, যা ছড়িয়ে পরে মোগল সাম্রাজ্যে।

যদি এ ঘটনা বিশ্বাস করতে হয়, তাহলে বিরিয়ানি রান্না শুরু হয়েছিল কাচ্চি বিরিয়ানি দিয়ে, যা ভারত ও পাকিস্তানে দম বিরিয়ানি নামেই বেশি পরিচিত। এভাবে দমে বিরিয়ানি রান্নার সমস্যা হলো, চাল মাংসসহ অন্যান্য উপকরণের সঠিক অনুপাত এবং কী তাপে ততক্ষণ রাখতে হবে তার নিখুঁত ভারসাম্য করতে হয়। ফলে বিরিয়ানির কিছু সহজ সংস্করণও তৈরি হয়, যা হলো পোলাও আর মাংস আলাদা রান্না করে পরে মিলিয়ে দিয়ে বা স্তরে স্তরে সাজিয়ে আরেকটু দম দিয়ে রান্না করা। অনেকটা ‘মেইড ইন জাপান, এসেমবলড ইন তাইওয়ান’ এর মতো। এসব বিরিয়ানিই এখন বিরিয়ানি হিসেবে বহুল প্রচলিত এবং সহজলভ্য।

ভারতে দম বিরিয়ানি থাকলেও বাংলাদেশের ঢাকাই কাচ্চির মত অনন্য নয়। কয়েক দশক আগেও ঢাকায় অনেক বিরিয়ানির দোকান ছিল, কিন্তু অধিকাংশই এসেমবলড বিরিয়ানি। এক ডেগে পোলাও থাকত, আরেক পাতিলে মুরগির এক চতুর্থাংশ, দুটো মিলিয়ে খাদককে পরিবেশন করা হতো। বিয়েবাড়িতেও ছিল পোলাও, রোস্ট, রেজালার প্রচলন। কাচ্চি বিরিয়ানি ছিল পুরনো ঢাকার একদম অভ্যন্তরীণ খাবার। তারা নিজেদের অনুষ্ঠানে কিংবা বিয়েতে বা স্বল্পপরিসরের কোন আয়োজনে কাচ্চি রান্না করত।

এমনকি দেশভাগের পর বিহার থেকে আসা বিহারি পল্লীতে কাবাব, মোগলাই সহ অনেক খাবারের সমারোহ থাকলেও, কাচ্চি ছিল নিতান্তই পুরান ঢাকার ব্যাপার; যারা নবাবি আমল থেকে সেখানে বসবাস করছে। এমনকি কোন রেস্টুরেন্টেও তেমন কাচ্চি বিক্রি হতো না। তাই পুরান ঢাকার বাসিন্দা না হলে কাচ্চির স্বাদ পাওয়ার সম্ভাবনাই ছিল ক্ষীণ।

বলা চলে স্টার হোটেল (রেস্টুরেন্ট) প্রথমবারের মতো কাচ্চির একটি সস্তা সংস্করণ তৈরি করে গণমানুষের জন্য। কাচ্চি কোন সস্তা খাবার না, তারপরেও অল্প টাকায় কাচ্চির একটি সংস্করণ তারা জনপ্রিয় করে তোলে, আর তাদের দেখাদেখি ঢাকার অনেক রেস্টুরেন্ট কাচ্চি পরিবেশন শুরু করে। বলা চলে একই ধারাবাহিকতায় ফখরুদ্দিনের মত বড় বাবুর্চিরা বিয়েবাড়ির জন্য কাচ্চি রান্না করেন। পরবর্তীতে কাচ্চি হয়ে যায় বিয়ের সিগনেচার ফুড।

এর পরবর্তী অবস্থা হলো অলি গলি, আনাচে কানাচে কাচ্চি আর কাচ্চি। এর সাথে যোগ হলো আরেকটি মনস্তাত্বিক সমস্যা। একসময় গুলিস্থান ফার্মগেটের মত ঢাকার ব্যস্ত এলাকাগুলোতে বিরিয়ানি বলতে চিকেন বিরিয়ানি পাওয়া যেত, যা ছিল মুরগীর এক রানের সাথে পরিমিত পরিমাণে সাদা পোলাও, এই খাবারের দামও পরিমিত। কাচ্চি বিরিয়ানিকে সেই চিকেন বিরিয়ানির দামের সাথে তাল মিলাতে হলো। সেই ২০ টাকা দিয়ে শুরু হওয়া কাচ্চি কয়েক বছর আগে স্টারে বিক্রি হতো ১৬০-১৭০ টাকায়। কিন্তু তখন স্টারে ভাত মাছ/মাংস ডাল সবজি খেতেও ২০০ টাকা বের হয়ে যেত। এভাবেই সময়ের সাথে রিচ-ফুড বিরিয়ানি হয়ে গেল মিডল ক্লাস ফুড।

এর পরবর্তী অবস্থা হলো অলি গলি, আনাচে কানাচে কাচ্চি আর কাচ্চি। এর সাথে যোগ হলো আরেকটি মনস্তাত্বিক সমস্যা। একসময় গুলিস্থান ফার্মগেটের মত ঢাকার ব্যস্ত এলাকাগুলোতে বিরিয়ানি বলতে চিকেন বিরিয়ানি পাওয়া যেত, যা ছিল মুরগীর এক রানের সাথে পরিমিত পরিমাণে সাদা পোলাও, এই খাবারের দামও পরিমিত। কাচ্চি বিরিয়ানিকে সেই চিকেন বিরিয়ানির দামের সাথে তাল মিলাতে হলো। সেই ২০ টাকা দিয়ে শুরু হওয়া কাচ্চি কয়েক বছর আগে স্টারে বিক্রি হতো ১৬০-১৭০ টাকায়। কিন্তু তখন স্টারে ভাত মাছ/মাংস ডাল সবজি খেতেও ২০০ টাকা বের হয়ে যেত। এভাবেই সময়ের সাথে রিচ-ফুড বিরিয়ানি হয়ে গেল মিডল ক্লাস ফুড।

সুলতানস ডাইন কেন, কোন পরিচিত কিংবা চালু থাকা রেস্টুরেন্টেই কুকুরের মাংস খাওয়াবে না। কেন খাওয়াবে না, তার প্রধান কারণ মোটামুটি নিম্নরূপ।

১. ঢাকার অনেক রেস্টুরেন্টের কাচ্চির মাংসেই এমন চিকন হাড় দেখা যায়। এর কারণ হলো তারা সস্তা দামে ছাগল কিংবা ছোট খাসী কেনে। এদের হাড় এমন আকারেরই হয়। ২. কুকুর ধরা এবং ধরার পর তাকে গোপনে জবাই করা মোটেও সহজ ব্যাপার না। সম্ভব হলেও সেটা ব্যয়বহুল হবে, টাকা দিয়ে অনেকের মুখ বন্ধ রাখতে হবে। ৩. একটি চালু রেষ্টুরেন্ট চেষ্টা করে খরচ কম রেখে যতটা ভালভাবে খদ্দেরকে খুশি রাখা যায়। একদম ১ কেজি সাইজের ইলিশ না দিয়ে হয়ত ৮০০ গ্রামের ইলিশ দিবে, কিন্তু কখনোই জাটকা ইলিশ দিবে না। সে জানে ন্যূনতম মান বজায় না রাখলে তার ব্যবসা চলবে না। ৪. সর্বোপরি, রেষ্টুরেন্ট চালিয়ে রাখার মত অফুরন্ত কুকুর নেই।

More News Of This Category
© স্বর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themesba-lates1749691102