দেখিয়েছে। বেশির ভাগ সংস্কার প্রস্তাবের সঙ্গে তারা ঐকমত্য পোষণ করে।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘উনারা (বিএনপি নেতারা) বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন করলে ভালো হয়। আমরা বলেছি, আমাদের কারো কারো কথার মধ্যে যদি অস্পষ্টতা থাকে, আমাদের মধ্যে কোনো কোনো উপদেষ্টা অন্য রকম কথা বলেন, যে যেটাই বলুন না কেন, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে যেটা বারবার বলেছেন, সেটাই সরকারের অবস্থান। সেখান থেকে অন্য কেউ যদি বেফাঁস কথা বা নিজস্ব বিবেচনায় কথা বলেন, সেটাতে তাঁরা যেন বিভ্রান্ত না হন।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি আমরা ডিসেম্বরে সম্ভব হয় ডিসেম্বরেই, না হয় জানুয়ারিতে, এভাবে বলেছি। ডিসেম্বর থেকে জুন মানে আমরা ইচ্ছা করে একটু বেশি সময় ক্ষমতা ভোগ করার জন্য অকারণে এক মাস বা দুই মাস বেশি দিন ক্ষমতায় থাকলাম, মোটেই সেটা না।’
সংস্কার শেষ হলে নির্বাচন কেন দেরি হবে—বিএনপি এই প্রশ্ন তুলেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যাখ্যা করে বুঝিয়েছি, জুলাই চার্টার্ড প্রণীত হলেও প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা, নীতিগত ব্যবস্থা, যেটি গ্রহণ করতে মাঝেমধ্যে সময় লাগে। উদাহরণ দিয়ে বলেছি যে ডিজিটাল সুরক্ষা আইন ২৩ বার ড্রাফট করেছি বিভিন্ন অংশীজনের মতামত নেওয়ার জন্য এবং বেশ কয়েক মাস সময় লেগেছে। সে জন্য আমরা বলেছি, আমরা তো পিন পয়েন্ট করতে পারব না।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, ‘রোডম্যাপ ঘোষণা করতে কত দিন লাগতে পারে সেটা নিয়ে তো আলোচনা হয়নি। এই সিদ্ধান্ত প্রধান উপদেষ্টা নেবেন। আগের সংসদ নির্বাচনের ধরন দেখলে বোঝা যায়, শিডিউল ঘোষণা করার পর ৬০ দিন দিলেই হয়। সেই হিসাবে যখন আমরা নির্বাচন করব, তার অন্তত দুই মাস আগে রোডম্যাপটা ঘোষণা করতে হবে।’
আসিফ নজরুল আরো বলেন, ‘জনগণের তো একটা আকাঙ্ক্ষা আছে যে আমরা বিচার করে যাই। আজকে বাংলাদেশে দুই হাজারের বেশি তরুণ জীবন দিয়েছে, আর ৫০-৬০ হাজার মানুষ শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, চোখ হারিয়েছে। তাদের বিচারের যে দাবি, এটা তো গণ-অভ্যুত্থানের প্রধান আকাঙ্ক্ষা। আমরা যদি কোনো বিচার না করে যাই, আমরা যদি (বিচারের আগেই) নির্বাচন দিই, মানুষের কাছে, নিজের কাছে জবাব দেব কিভাবে? নির্বাচন সংস্কার, বিচার এবং আমাদের সরকারের গৃহীত কিছু পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করে। এ জন্যই ডিসেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত সময়ের কথা বলা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার অঙ্গীকার বারবার বলেছেন, কোনো অবস্থায়ই জুন অতিক্রম করা হবে না।’
নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব সন্তুষ্ট হননি, এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আসিফ নজরুল বলেন, ‘বিএনপি মহাসচিবের এটা বলার অবশ্যই অধিকার আছে। একটা আলোচনা থেকে একজন একভাবে পারসিভ করে, আরেকজন আরেকভাবে পারসিভ করে।’ তিনি বলেন, ‘যখন আলোচনা শেষ হয়েছে, আমার কাছে উনাদের দেখে খুশি লেগেছে। মনে হয়েছে, উনাদের মনে যে প্রশ্ন ছিল, তার অনেকগুলো উত্তর উনারা পেয়েছেন। আমার কাছে এটা মনে হয়েছে। ফখরুল ভাইয়ের কাছে অন্য রকম মনে হতে পারে।’
আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের কানো দূরত্ব তৈরি হয় নাই। আলোচনার শেষ প্রান্তে আমাদের কাছে মনে হয়েছে যে আমাদের অনেক ব্যাখ্যা উনারা বুঝতে পেরেছেন। আমার কাছে মনে হয়েছে, উনারা সন্তুষ্ট।’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘উনারা বলেছেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার মামলা বিলম্ব হচ্ছে। আমরা বলেছি যে এর আগে বিচার হয়েছে, সেটা কম্পেয়ার করে দেখিয়েছি। বলেছি যে কোনো রকম বিলম্ব করা হচ্ছে না। আমরা উনাদের সবকিছু বুঝিয়ে বলার পর উনারা আর কথা বলেননি। তার মানে, উনারা বুঝতে পেরেছেন। তাঁরা আরেকটা ট্রাইব্যুনাল গঠন করার কথা বলেছেন। আমরা বলেছি যে এটা অচিরেই হয়ে যাবে। বৈঠকে বিএনপি বলেছে, গত ১৫ বছর ধরে তারা নিরবচ্ছিন্নভাবে নির্যাতিত হয়েছে। অবশ্যই এটার জন্য আমরা শ্রদ্ধাবোধ দেখিয়েছি। উনারা বলেছেন যে অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু সিদ্ধান্ত বিএনপির প্রতিকূলে গেছে। আমরা উদাহরণ দিয়েছি, কিছু সিদ্ধান্ত আছে, যেটা বিএনপির অনুকূলে গেছে। তার পরও উনারা বলেছেন যে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারে বিলম্ব হচ্ছে। আমরা বলেছি যে পাবলিক প্রসিকিউটর অফিস পুনর্গঠন হয়েছে মাত্র তিন মাস আগে। এই সময়ে আট হাজারের মতো মামলা প্রত্যাহার হয়েছে, ১৬ হাজারের মতো মামলা লিস্টেড আছে। আমরা বলেছি যে এত দ্রুতগতিতে সম্ভব কি না? উনারা আমাদের বলেছেন, আমাদের বুঝতে পেরেছেন।’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘উনারা (বিএনপি নেতা) বলেছেন, দলের যে সংস্কার ভাবনা, এটা বহু পুরনো। উনারা সব সময় সংস্কারপন্থী দল। আমরা এটাতে সম্মতি দিয়েছি। অবশ্যই বিএনপি সব সময় সংস্কারের কথা বলেছে। সবচেয়ে বড় কথা, বিএনপি আমাদের সংস্কারের জন্য যেসব কমিশন আছে, ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবাবলি আছে, সেটার ক্ষেত্রে বিএনপি অত্যন্ত পজিটিভ রেসপন্স দেখিয়েছে। তারা বলেছে যে তারা শিগগিরই ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে মিটিংয়ে বসবে এবং কমিশনের বেশির ভাগ সংস্কার প্রস্তাবে তারা ঐকমত্য পোষণ করে। জুলাই চার্টার্ড খুব দ্রুতগতিতে হয়ে যাবে, এটা তারাও আমাদের আশ্বাস দিয়েছে। আমাদের কাছে মনে হয়েছে, বিএনপি সংস্কারের ব্যাপারে অত্যন্ত আন্তরিক। এটাও বলেছি, জুলাই চার্টার্ড দ্রুত হয়ে গেলে তা নির্বাচন ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে একটা ভূমিকা রাখতে পারে।’