ক্যান্সারের সঙ্গে চার বছরের লড়াই শেষে চির বিদায় নিলেন অভিনেতা, নির্দেশক আলী যাকের। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।
আলী যাকের আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) । আজ শুক্রবার সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন বরেণ্য এই অভিনেতা। তাঁর বয়স ছিল ৭৬ বছর। মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংসদ আসাদুজ্জামান নূর।
আলী যাকেরের ছেলে ইরেশ যাকের ফেইসবুকে এক পোস্টে জানিয়েছেন, দুদিন আগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণও ধরা পড়েছিল তার বাবার।
গত শতকের সত্তর থেকে নব্বইয়ের দশকে মঞ্চ আর টেলিভিশনে দাপুটে অভিনয়ের জন্য দর্শক হৃদয়ে স্থায়ী আসন নিয়ে আছেন আলী যাকের।
একুশে পদকপ্রাপ্ত এই নাট্যজনের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, “বরেণ্য অভিনেতা আলী যাকের ছিলেন দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র । তার মৃত্যুতে দেশ একজন বরেণ্য অভিনেতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে হারালো।”
আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “মহান মুক্তিযুদ্ধ, দেশের শিল্পকলা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আলী যাকেরের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি আসাদুজ্জামান নূর জানান, আলী যাকেরের মরদেহ শুক্রবার বেলা ১১টায় নিয়ে যাওয়া হবে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রাঙ্গণে।তবে কোথায় দাফন হবে, এখনো সেটা ঠিক হয়নি।
১৯৪৪ সালে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এ নাট্য ব্যক্তিত্ব। আলী যাকের ছিলেন চার ভাই-বোনের মধ্যে তৃতীয়। তাঁর বাবা মোহাম্মদ তাহের ছিলেন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। বাবার চাকরির বদলি সূত্রে অল্প বয়সে কুষ্টিয়া ও মাদারীপুরে কাটান আলী যাকের।
আলী যাকের ১৯৭২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন। ওই বছরেরই জুন মাসে তিনি নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে যোগ দেন। তখন থেকে নাগরিকই তাঁর ঠিকানা। ‘বাকি ইতিহাস’, ‘সৎ মানুষের খোঁজে’, ‘দেওয়ান গাজীর কিস্সা’, ‘কোপেনিকের ক্যাপটেন’, ‘গ্যালিলিও’, ‘ম্যাকবেথ’সহ অনেক আলোচিত মঞ্চনাটকের অভিনেতা ও নির্দেশক তিনি। পাশাপাশি টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেও তিনি পেয়েছেন জনপ্রিয়তা। ‘আজ রবিবার’, ‘বহুব্রীহি’, ‘তথাপি’, ‘পাথর’, ‘দেয়াল’সহ বহু নাটকে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন আলী যাকের। বেতারে ৫০টির বেশি নাটক করেছেন তিনি। অভিনয় করেছেন বেশ কিছু চলচ্চিত্রে।
টেলিভিশনের জন্য মৌলিক নাটক লিখেছেন। নানা বিষয়ে দৈনিক পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখিও করেছেন দীর্ঘদিন। প্রকাশিত হয়েছে বই—‘সেই অরুণোদয় থেকে’, ‘নির্মল জ্যোতির জয়’। শখ করে ফটোগ্রাফিও করেন তিনি।