সেনাবাহিনী প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিষ্ঠার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন করাসহ দেশে-বিদেশে সুনাম অর্জন করছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির (বিএমএ) প্যারেড গ্রাউন্ডে ৭৯তম বিএমএ লং কোর্সের সমাপনীতে রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে তিনি এই আহ্বান জানান।
সেনা সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তোমাদের সব সময় এই কথাটা মনে রাখতে হবে যে দেশকে ভালোবাসতে হবে, দেশের জন্য কর্তব্য পালন করতে হবে। কারণ তোমরা যে শপথ গ্রহণ করেছ, এই শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে এ দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার বিরাট দায়িত্ব তোমাদের কাঁধে পড়ল। সেই কথাটা সব সময় মনে রাখতে হবে।“
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেনাবাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যথেষ্ট অবদান রেখে যাচ্ছে। প্রতিটি দেশে প্রত্যেকেই আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর প্রশংসা করেন। যখন এই প্রশংসা আমি শুনি, সত্যিই গর্বে বুক ভরে যায়। কাজেই সবাইকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’
করোনা পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জানি বর্তমানে গোটা বিশ্বের জন্য অত্যন্ত ক্রান্তিকাল যাচ্ছে। বিশেষ করে করোনাভাইরাসের প্রভাব শুধু বাংলাদেশ না, বিশ্বব্যাপী এর প্রভাব পড়ছে এবং এর ফলে আমাদের অর্থনীতি স্থবির হয়ে যাচ্ছে, জীবনযাত্রা সীমিত হয়ে যাচ্ছে।’
১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে নবীন ক্যাডেটদের উদ্দেশে যে ভাষণ দিয়েছিলেন, সেখান থেকে উদ্ধৃত করে তার মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি তোমাদের জাতির পিতা হিসাবে আদেশ দিচ্ছি, তোমরা সৎ পথে থেকো, মাতৃভূমিকে ভালো বাইসো। ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াবা, গুরুজনকে মেনো, সৎ পথে থেকো, শৃঙ্খলা রেখো, তা হলে জীবনে মানুষ হতে পারবা।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জীবনে সব থেকে বড় কথা সততা, নিষ্ঠা, একাগ্রতা এবং দেশমাতৃকাকে ভালোবাসা। জাতির পিতার এই নির্দেশনা, এই উপদেশ আমি মনে করি চলার পথে সব সময় মনে রাখবা।”
মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় তুলে ধরেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনাও স্মরণ করিয়ে দেন।
ঘাতকের বুলেটে সেদিন প্রাণ হারানো জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ পুত্র মুক্তিযোদ্ধা শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, মুক্তিযোদ্ধা শহিদ লেফট্যানেন্ট শেখ জামাল ও শিশু পুত্র শেখ রাসেলের কথাও প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করেন।
কমিশনপ্রাপ্ত নবীন সেনা কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তোমরা দেশকে ভালোবাসবে, মানুষকে ভালোবাসবে, মানুষের জন্য কর্তব্য পালন করবে। যেন এই দেশ এগিয়ে যেতে পারে। ভবিষ্যতে এই দেশ আরো উন্নত, সমৃদ্ধ হতে পারে, সেইভাবেই তোমরা কাজ করবে, সেটাই আমরা চাই।”
সেনা সদস্যদের দক্ষতা অর্জনের উপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, “দেশে বিদেশে আমাদের সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। তাই সর্বক্ষেত্রে তারা দক্ষ থাকবে, উপযুক্ত থাকবে, আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন হবে, যেন সারা বিশ্বে যেখানেই যাবে, সেখানেই দেশের সম্মান অক্ষুন্ন রাখে, সেদিকে সর্বদা সজাগ থাকতে হবে।”
করোনা মোকাবিলায় সেনাবাহিনীর অবদানের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় আমাদের সেনাবাহিনী সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় মানুষকে সচেতন করা, মানুষের পাশে দাঁড়ানো, তাদের সাহায্য করাসহ বিরাট অবদান রেখে যাচ্ছে। এটা করতে যেয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়েছেন। এর মধ্যে কেউ সুস্থ হয়েছেন, কেউ হয়তো মৃত্যুবরণ করেছেন। যাঁরা মৃত্যুবরণ করেছেন, তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি এবং তাঁদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।’