সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের এক দফা দাবিতে এক মাস ধরে লাগাতার হরতাল-অবরোধ করছে বিএনপি-জামায়াত। এই হরতাল-অবরোধে গেল এক মাসে ২১৭টি যানবাহন আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এসব অগ্নিকাণ্ডে মারা গেছেন কয়েক জন। আহত হয়েছেন অনেকে।
সরকারের পদত্যাগের দাবিতে গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে সমাবেশ করে বিএনপি। সরকারের অভিযোগ, সেই সমাবেশ থেকেই শুরু হয় জ্বালাও-পোড়াও এবং হামলার ঘটনা। সমাবেশকে ঘিরে বেপরোয়া বিএনপি কর্মীরা ওই দিন প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা চালায়। ভাঙচুর করে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারস ইনস্টিটিউটে। লম্বা সময় ধরে রাজধানীর কাকরাইল, নয়াপল্টন, রাজারবাগ, শান্তিনগর, মালিবাগ, পল্টন, সেগুনবাগিচাসহ আশপাশের এলাকায় চলে বিএনপি কর্মীদের হামলা। তাদের পিটুনিতে মারা যান পুলিশের কর্তব্যরত এক সদস্য। আহত হন অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক। বিএনপি কর্মীরা রাজারবাগে পুলিশ হাসপাতালে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে অ্যামু্বলেন্সসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি ও মোটরসাইকেলে।
তারপর দিন দেশ জুড়ে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করে বিএনপি। এক দিন বিরতি দিয়ে ৩১ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি-জামায়াত জোট। এরপর থেকে গত এক মাসে শুক্র ও শনিবার এবং মঙ্গলবার বাদ দিয়ে সপ্তাহের বাকি চার দিন অবরোধ ও হরতাল পালন করে আসছে বিএনপি-জামায়াত জোট। সবমিলিয়ে তারা গত এক মাসে আট দফায় মোট ১৫ দিন অবরোধ এবং তিন দিন হরতাল পালন করেছে।
তাদের এই কর্মসূচি চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক কার্যালয় ও সরকারি অফিসসহ ১১টি স্থাপনায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। মানিকগঞ্জ ও গাজীপুরে দুটি স্কুলেও আগুন দেয়া হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে পুলিশ প্রশাসন বলছে, প্রায় প্রত্যেকটি ঘটনার সঙ্গে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিভিন্ন সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা যানবাহনে অগ্নিসংযোগ দিচ্ছে। ইতিমধ্যে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের বেশ কয়েক জন নেতাকর্মীকে হাতেনাতে আটক করেছে পুলিশ।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২৮ অক্টোবর থেকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে পুড়িয়ে দেয়া যানবাহনের মধ্যে ১৩৫টি বাস, ৩৭টি ট্রাক, ১৬টি কাভার্ড ভ্যান, আটটি মোটরসাইকেল এবং দুটি প্রাইভেট কার রয়েছে। এছাড়া তিনটি মাইক্রোবাস এবং একটি করে পিকআপ, অটোরিকশা ও লেগুনায় আগুন দেয়া হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ড থেকে বাদ যায়নি ট্রেনও। সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও সিলেটে স্টেশনে দাঁড়ানো তিনটি ট্রেনে আগুন দেয়া হয়েছে। এতে দুটি আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেন ও একটি কমিউটার ট্রেনে আগুন দেয়ার ঘটনায় পুড়ে গেছে ট্রেনগুলো অন্তত ৯টি কোচ। এছাড়া ১১টি স্থাপনায় আগুন দেয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ অফিস, কাউন্সিলর অফিস, পুলিশ বক্স, বিদ্যুত্ অফিস, বাস কাউন্টার ও শোরুম আগুন দেয়া হয়।