আগামী ১০ ডিসেম্বর হচ্ছে সেই স্বপ্নের স্বার্থক রূপায়ন। এদিন বসবে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান। অনেক বাধা ও বিপত্তি পেরিয়ে সেই স্বপ্ন সত্যি হতে এখন অপেক্ষা শুধু সময়ের। রাজনৈতিক অস্থিরতা, অবকাঠামোগত দুর্বলতা, সামর্থ্যের ঘাটতি, পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে বিশ্ব অর্থনীতির মোড়লের পিছিয়ে যাওয়া-কোনো কিছুই শেষ পর্যন্ত স্বপ্নপূরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আজ সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানান, ১০ ডিসেম্বর বসবে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান। সেটি বসানোর পরে পদ্মা সেতুর বাকি কাজ শেষ হতে সময় লাগবে ১০ মাসের মতো।
গত শুক্রবার মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর ১১ ও ১২ নম্বর পিয়ারের ওপর ৪০তম স্প্যান বসানো হয়েছে। এর ফলে ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুর ছয় কিলোমিটার অংশই দৃশ্যমান হয়েছে। এখন আর মাত্র একটি স্প্যান বসানো বাকি।
২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে বসানো হয়েছিল প্রথম স্প্যানটি। এরপর ধাপে ধাপে স্প্যান বসিয়ে এ পর্যন্ত ৪০টি স্প্যান বসানো হয়েছে। সেতুর মোট পিলার ৪২টি এবং এতে স্প্যান বসবে ৪১টি। পদ্মা সেতুতে রেলওয়ে স্ল্যাব ও রোডওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজও চলমান আছে। সেতুতে প্রয়োজন হবে দুই হাজার ২৯১৭টি রোড স্ল্যাব। এরমধ্যে নভেম্বর পর্যন্ত বসানো হয়েছে এক হাজার ২৩৯টির বেশি স্ল্যাব। রেলওয়ের জন্য প্রয়োজন হবে দুই হাজার ৯৫৯টি রেল স্ল্যাব। এ পর্যন্ত বসানো হয়েছে এক হাজার ৮৬০টির বেশি স্ল্যাব।
ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতু। সেতুর ওপরের অংশে যানবাহন ও নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড (এমবিইসি) ও নদী শাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন।
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের অনেক দিনের স্বপ্ন পদ্মা সেতু। সেই স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে ২০০১ সালের ৪ জুলাই পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর পদ্মায় অনেক পানি গড়ালেও পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করা যায়নি। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা আবারও সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই নিয়োগ করা হয় পদ্মা সেতুর ডিজাইন কনসালট্যান্ট। ২০১০ সালে প্রিকোয়ালিফিকেশন দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরপর ঘটনাবহুল সময় পেরিয়ে যায়। পদ্মা সেতুর মূল দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক নানা টালবাহানার পর ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পদ্মা সেতুর ঋণচুক্তি স্থগিত করে, পরে চুক্তি বাতিল করে দেয়। এরপর নিজস্ব অর্থায়নে ২০১৪ সালে সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ।
আয়তন ও নির্মাণ ব্যয়ের দিক থেকে পদ্মা সেতু দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। ৬.১৫ কিলোমিটারের সেতুটি বাংলাদেশের দীর্ঘতম এবং দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম সেতু। এটাই হবে দেশের প্রথম দ্বিতল সেতু। ওপরতলায় চলবে মোটরযান। নিচের তলায় ট্রেন। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগের নতুন এই সেতু চালু হলে তার হাওয়া লাগবে অর্থনীতির পালে। পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের চেহারা পাল্টে দেবে। পদ্মা সেতু যে দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতিতে নতুন গতির সঞ্চার করবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সবচেয়ে বড় কথা, দেশের সামর্থ্য ও যোগ্যতার একটি উদাহরণ সৃষ্টি হবে পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে। কৃষিনির্ভর দক্ষিণাঞ্চলে শিল্পায়নের গতিও ত্বরান্বিত হবে।