করোনার কারণে এক বছর বন্ধ থাকার পরে আগামী ৩০ মার্চ থেকে খুলবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই দীর্ঘ সময় শ্রেণিকক্ষে সরাসরি পাঠদান বন্ধ থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে চলতি শিক্ষাবর্ষের তিন মাস শেষ হয়ে গেছে। বাকি নয় মাসে এক বছরের সিলেবাস শেষ করা সম্ভব হবে না। এ বাস্তবতায় স্কুল খোলার পরে ক্লাসে পাঠদান করে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার পাঠপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। পাঠপরিকল্পনা অনুযায়ী মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ১৫০ কর্ম দিবস ক্লাস হবে। আর ২০২২ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের নির্ধারিত সিলেবাস ৩০ শতাংশ কমিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে। চলতি সপ্তাহে দুই পরীক্ষার সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে। আর গত সপ্তাহে প্রকাশিত প্রাথমিকের সিলেবাসও পুনর্বিন্যাস করে নতুন করে প্রকাশ করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
শিরোনাম
২০২২ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে
-
অনলাইন ডেস্ক
- Update Time : ০৫:১৬:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১
- ৪৩৬ Time View
এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানান, চলতি শিক্ষাবর্ষের তিন মাস বা তার বেশি সময় ক্লাস হবে না ধরেই চলতি শিক্ষাবর্ষের সিলেবাস ছোট করা হয়েছে। যদি এপ্রিলে স্কুল খুলে দেওয়া হতো সে ভাবনা থেকে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে কোনো তারিখ রাখা হয়নি। শিক্ষাবর্ষের মাসভিত্তিক কত কর্মদিবস ক্লাস করা সম্ভব হবে সেভাবে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বিষয়ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে। উদাহরণ দিয়ে কর্মকর্তারা বলেন, যেমন সপ্তাহে বাংলার ক্লাস থাকে পাঁচ দিন। আবার গণিতের ক্লাস থাকে তিন দিন। সবমিলিয়ে ১৫০ কর্মদিবসের সিলেবাস তৈরি করা হয়েছে।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, বর্তমানে যারা নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত তারা ২০২২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিবে। তাদের জন্যও সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরির কাজ করছেন এনসিটিবির কর্মকর্তারা। ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীর জন্য ৩০ শতাংশ সিলেবাস কমানো হবে। একইভাবে যারা ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দিবে তাদেরও সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করার কাজ চলছে। আগামী বুধবারের মধ্যে দুই পরীক্ষার সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য পাঠানোর কথা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি ধাপে ধাপে বাড়িয়ে আগামী ২৯ মার্চ পর্যন্ত করা হয়েছে। গত শনিবার সন্ধ্যায় শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সাংবাদিকদের বলেন, উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের দ্বাদশ, মাধ্যমিক পর্যায়ে দশম এবং প্রাথমিক পর্যায়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন (সপ্তাহে ছয় দিন) ক্লাস হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিকে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে একদিন ক্লাস অনুষ্ঠিত হবে। নবম এবং একাদশ শ্রেণির সপ্তাহে দুইদিন করে ক্লাস হবে। তারপর পরিস্থিতির আরো উন্নতি হলে একটু একটু করে বাড়িয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় শতভাগ ক্লাস চালু হবে।
এর আগে চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে। গত ২৭ জানুয়ারি এনসিটিবিতে কারিকুলাম বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সেখানে কর্মকর্তাদের ৬০ দিন এসএসসি এবং এইচএসসির ৮৪ দিন ক্লাস করার জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরির নির্দেশ দেন। এরপর এনসিটিবির বিশেষজ্ঞরা এসএসসি-এইচএসসির প্রতিটি বিষয়ের অভিজ্ঞ শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে দুইদিন করে ওয়াকর্শপ করে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করেন। ৪ ফেব্রুয়ারি দুই পরীক্ষার সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রকাশ করে শিক্ষাবোর্ডগুলো। তাতে এসএসসির পরীক্ষার্থীদের ৬০ দিন ক্লাস নির্ধারণ করা হয়। আর বিষয়প্রতি সর্বোচ্চ ৩০ কর্মদিবস ক্লাস করার সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করে দেওয়া হয়। এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ৮৪ দিন ক্লাসের সিলেবাস প্রকাশ করা হয়েছে। মোট ৫০৪টি ক্লাস হবে। গড়ে ৩৮টা ক্লাস পাবে পরীক্ষার্থীরা। এর আগে ২৫ জানুয়ারি গড়ে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ এসএসসি সিলেবাস কমিয়ে শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
সংক্ষিপ্ত এ সিলেবাস এক বছরেও শেষ করা সম্ভব হবে বলে শিক্ষক, পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা শিক্ষামন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন। এরপর মন্ত্রী সেই সিলেবাস আরো সংক্ষিপ্ত করে নির্দিষ্ট ক্লাস ও দিন উল্লেখ করে দেওয়ার নির্দেশনা দেন।
প্রাথমিকের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস পুনর্বিন্যাস হবে: ১ মার্চ স্কুল খুলবে ধরে আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত প্রাথমিক স্তরের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করেছিল এনসিটিবি। জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির (নেপ) পরামর্শে এটি প্রণয়ন করা হয়। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য পুনর্বিন্যাস করা পাঠপরিকল্পনা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠায়। কিন্তু আগামী ৩০ মার্চ থেকে স্কুল খোলার নির্দেশনায় এ পাঠপরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। নতুন করে আবার পাঠপরিকল্পনা করা হবে।
যেহেতু মার্চের ৩০ তারিখ খুলে শুধু পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস নিয়মিত হবে। অন্য শ্রেণির ক্লাস সপ্তাহে একদিন করে হবে। সে অনুযায়ী নতুন করে পাঠপরিকল্পনা করা হবে। কতটুকু সিলেবাস কমানো হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কারিকুলামের নিয়ম নীতি অনুযায়ী নেপ এবং এনসিটিবি মিলে সিলেবাস প্রণয়ন করা হবে।
Tag :
জনপ্রিয়