ঢাকা ০১:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম

’বিদ্রোহ’ ও ‘দেশদ্রোহ’ নিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক করলেন যুক্তরাষ্ট্রের ৩ বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডাররা

গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনে ক্যাপিটল ভবনে হামলার সাথে বেশ ক’জন সাবেক এবং কর্মরত সেনা সদস্য জড়িত থাকার অভিযোগ উঠতে থাকায়, সেনা নেতৃত্ব স্পষ্টতই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি ডেমোক্রেটদের কাছ থেকে পেন্টাগনের ওপর চাপও তৈরি হয়েছে।

ফলে ৬ জানুয়ারির নজিরবিহীন তাণ্ডবের এক সপ্তাহ পর মঙ্গলবার ওই ঘটনা নিয়ে স্থল, নৌ এবং বিমান বাহিনীসহ মার্কিন সেনাবাহিনীর সব শাখার শীর্ষ কম্যান্ডাররা যৌথভাবে সব সেনা সদস্যদের প্রতি একটি বার্তা পাঠিয়েছেন। খবর বিবিসির।

যৌথ বাহিনীর চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলিসহ সাতজন শীর্ষ জেনারেল ও একজন অ্যাডমিরালের সই করা বিবৃতিটি সৈনিকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া হলেও যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়া তা প্রকাশ করেছে।

নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ২০ তারিখের শপথকে সামনে রেখে ট্রাম্প শিবির এ পদক্ষেপ নিচ্ছে। এমতাবস্থায় আরো ভয়াবহ হামলার আশঙ্কা করছে মার্কিন নিরাপত্তা সংস্থাগুলো। এরই মধ্যে গোয়েন্দা সংস্থাসহ অন্যান্য বাহিনীগুলোকে সতর্ক রাখা হয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল মঙ্গলবার মার্কিন তিন বাহিনীর প্রধানরা সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যের উদ্দেশে নজিরবিহীন একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তাতে দেশের সংবিধান সমুন্নত রাখাসহ সব ধরনের চরমপন্থা প্রত্যাখ্যানের আহ্বান জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, সংবিধান রক্ষার শপথ করে থাকেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। চরমপন্থা মোকাবেলা করাই এর মর্মকথা।

জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তাদের সই করা এক পৃষ্ঠার যৌথ বিবৃতিতে আরো বলা হয়, মার্কিন সেনাবাহিনী বেসামরিক রাষ্ট্রপ্রধানের আইনগত আদেশ পালন করে আসছে। দেশে-বিদেশে শত্রুর হাত থেকে জনগণ ও সম্পদ রক্ষায় কাজ করছে, সংবিধান সমুন্নত রাখতে সহায়তা করেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক বিষয়ে মার্কিন সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ তো দূরের কথা, জড়ানোর নজির সাধারণত দেখা যায় না। তার ওপর আবার এভাবে যৌথবাহিনীগুলোর প্রধানদের বিবৃতি অতি বিরল ঘটনা।

এর আগে মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটির প্রধান চ্যাড উল্ফ পদত্যাগ করেন। ট্রাম্পের প্রশাসনের তৃতীয় শীর্ষ ব্যক্তি হিসেবে সরে দাঁড়ান তিনি। আগামী ২০ জানুয়ারি বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব ছিল তার ওপর।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ওই ঘটনা নিয়ে অনেক সেনা কর্মকর্তা ব্যক্তিগতভাবে তাদের মত দিতে শুরু করেছেন। এমনকি তাদের অনেকে এমন উদ্বেগও প্রকাশ করেন যে, ৬ জানুয়ারির নজিরবিহীন ঘটনার পর কমান্ডাররা কোনো দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন না।

এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় মোতায়েন মার্কিন সেনাবাহিনীর কমান্ডার টুইট করেন, ৬ জানুয়ারির ঘটনা ছিল ‘বিদ্রোহের অপচেষ্টা।’ জেনারেল রবার্ট অ্যাব্রামস বলেন, ‘আপনি যদি ইউনিফর্ম পরা সৈন্য হন এবং ওই ঘটনাকে গুরুত্ব না দেন, তাহলে আমি আপনাদের অনুরোধ করবো বসে ঠান্ডা মাথায় সংবিধানটি পড়ুন- যে সংবিধান রক্ষার জন্য আপনি শপথ নিয়েছেন।’

ক্যাপিটাল ভবনে ওই তাণ্ডবের পর সেনাবাহিনীর মধ্যে কট্টর মতবাদের উপস্থিতি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। কারণ বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর বেরিয়েছে হামলাকারীদের অনেকেই সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য ছিলেন। অনেক মিডিয়া এমন কথাও বলছে, হামলায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের কেউ কেউ এখনও সেনাবাহিনী এবং পুলিশে কাজ করছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের টিভি নেটওয়ার্ক সিবিএসর এক খবরে বলা হয়েছে, নর্থ ক্যারোলাইনা থেকে একদল ট্রাম্প সমর্থককে নেতৃত্ব দিয়ে ওয়াশিংটনে নিয়ে আসার জন্য ক্যাপ্টেন র‌্যাংকের একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে সেনাবাহিনী।

Tag :
জনপ্রিয়

“প্রবৃদ্ধিতে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ, এটা একেবারে ভুয়া”

’বিদ্রোহ’ ও ‘দেশদ্রোহ’ নিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক করলেন যুক্তরাষ্ট্রের ৩ বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডাররা

Update Time : ০৬:৩৯:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২১

গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনে ক্যাপিটল ভবনে হামলার সাথে বেশ ক’জন সাবেক এবং কর্মরত সেনা সদস্য জড়িত থাকার অভিযোগ উঠতে থাকায়, সেনা নেতৃত্ব স্পষ্টতই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি ডেমোক্রেটদের কাছ থেকে পেন্টাগনের ওপর চাপও তৈরি হয়েছে।

ফলে ৬ জানুয়ারির নজিরবিহীন তাণ্ডবের এক সপ্তাহ পর মঙ্গলবার ওই ঘটনা নিয়ে স্থল, নৌ এবং বিমান বাহিনীসহ মার্কিন সেনাবাহিনীর সব শাখার শীর্ষ কম্যান্ডাররা যৌথভাবে সব সেনা সদস্যদের প্রতি একটি বার্তা পাঠিয়েছেন। খবর বিবিসির।

যৌথ বাহিনীর চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলিসহ সাতজন শীর্ষ জেনারেল ও একজন অ্যাডমিরালের সই করা বিবৃতিটি সৈনিকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া হলেও যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়া তা প্রকাশ করেছে।

নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ২০ তারিখের শপথকে সামনে রেখে ট্রাম্প শিবির এ পদক্ষেপ নিচ্ছে। এমতাবস্থায় আরো ভয়াবহ হামলার আশঙ্কা করছে মার্কিন নিরাপত্তা সংস্থাগুলো। এরই মধ্যে গোয়েন্দা সংস্থাসহ অন্যান্য বাহিনীগুলোকে সতর্ক রাখা হয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল মঙ্গলবার মার্কিন তিন বাহিনীর প্রধানরা সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যের উদ্দেশে নজিরবিহীন একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তাতে দেশের সংবিধান সমুন্নত রাখাসহ সব ধরনের চরমপন্থা প্রত্যাখ্যানের আহ্বান জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, সংবিধান রক্ষার শপথ করে থাকেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। চরমপন্থা মোকাবেলা করাই এর মর্মকথা।

জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তাদের সই করা এক পৃষ্ঠার যৌথ বিবৃতিতে আরো বলা হয়, মার্কিন সেনাবাহিনী বেসামরিক রাষ্ট্রপ্রধানের আইনগত আদেশ পালন করে আসছে। দেশে-বিদেশে শত্রুর হাত থেকে জনগণ ও সম্পদ রক্ষায় কাজ করছে, সংবিধান সমুন্নত রাখতে সহায়তা করেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক বিষয়ে মার্কিন সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ তো দূরের কথা, জড়ানোর নজির সাধারণত দেখা যায় না। তার ওপর আবার এভাবে যৌথবাহিনীগুলোর প্রধানদের বিবৃতি অতি বিরল ঘটনা।

এর আগে মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটির প্রধান চ্যাড উল্ফ পদত্যাগ করেন। ট্রাম্পের প্রশাসনের তৃতীয় শীর্ষ ব্যক্তি হিসেবে সরে দাঁড়ান তিনি। আগামী ২০ জানুয়ারি বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব ছিল তার ওপর।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ওই ঘটনা নিয়ে অনেক সেনা কর্মকর্তা ব্যক্তিগতভাবে তাদের মত দিতে শুরু করেছেন। এমনকি তাদের অনেকে এমন উদ্বেগও প্রকাশ করেন যে, ৬ জানুয়ারির নজিরবিহীন ঘটনার পর কমান্ডাররা কোনো দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন না।

এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় মোতায়েন মার্কিন সেনাবাহিনীর কমান্ডার টুইট করেন, ৬ জানুয়ারির ঘটনা ছিল ‘বিদ্রোহের অপচেষ্টা।’ জেনারেল রবার্ট অ্যাব্রামস বলেন, ‘আপনি যদি ইউনিফর্ম পরা সৈন্য হন এবং ওই ঘটনাকে গুরুত্ব না দেন, তাহলে আমি আপনাদের অনুরোধ করবো বসে ঠান্ডা মাথায় সংবিধানটি পড়ুন- যে সংবিধান রক্ষার জন্য আপনি শপথ নিয়েছেন।’

ক্যাপিটাল ভবনে ওই তাণ্ডবের পর সেনাবাহিনীর মধ্যে কট্টর মতবাদের উপস্থিতি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। কারণ বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর বেরিয়েছে হামলাকারীদের অনেকেই সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য ছিলেন। অনেক মিডিয়া এমন কথাও বলছে, হামলায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের কেউ কেউ এখনও সেনাবাহিনী এবং পুলিশে কাজ করছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের টিভি নেটওয়ার্ক সিবিএসর এক খবরে বলা হয়েছে, নর্থ ক্যারোলাইনা থেকে একদল ট্রাম্প সমর্থককে নেতৃত্ব দিয়ে ওয়াশিংটনে নিয়ে আসার জন্য ক্যাপ্টেন র‌্যাংকের একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে সেনাবাহিনী।