২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম তিনজন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হবার কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। এরপর সে বছরের ২০ ডিসেম্বর শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়ায়। এরপরের ৯৯ দিনে আরও এক লাখ রোগী শনাক্ত হওয়ার মাধ্যমে গত ২৯ মার্চ শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ছয় লাখ ছাড়ায়। মধ্য মার্চে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে হুহু করে, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ অভিহিত করা হলেও চিকিৎসকরা একে ‘করোনা সুনামি’ বলে আখ্যা দেন । আর এই ‘সুনামি’র মধ্যেই মাত্র ১৬ দিনে আরও এক লাখ মানুষ শনাক্ত হবার মাধ্যমে গত ১৪ এপ্রিল শনাক্ত রোগীর সংখ্যা সাত লাখ ছাড়ায়। এরমধ্যেই গত ৭ এপ্রিল রেকর্ড ৭ হাজার ৬২৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়।এরপর সাত লাখ থেকে আট লাখ রোগী শনাক্ত হতে সময় লেগেছে ৪৭ দিন। এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে রোগীর সংখ্যা কমে এলেও আবার সেটা বাড়তে শুরু করেছে।
ঈদকেন্দ্রিক কেনাকাটা ও যাতায়াতে বিপুল লোকসমাগম দেখে জনস্বাস্থ্যবিদরা এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর একাধিকবার আশঙ্কা করেছিল, ঈদের পর সংক্রমণ আবার বেড়ে যাবে। এখনও সেভাবে সংক্রমণ না বাড়লেও ঈদের পর থেকে ঊর্ধ্বগতির প্রবণতা রয়েছে। এদিকে ভারত সীমান্তবর্তী ১৫টি জেলায়ও রোগী দ্রুত বাড়ছে। জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আবারও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবারও দেশে সংক্রমণ বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, দেশের ১১ জেলায় উচ্চ সংক্রমণ রয়েছে। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে এমন রোগী পাওয়া গেছে যাদের ভারত ভ্রমণের ইতিহাস নেই। অর্থ্যাৎ, দেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের সামাজিক সংক্রমণ হয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঈদের সময়ে মানুষের অবাধ চলাচল, সম্প্রতি মাস্ক ব্যবহারে আবার মানুষের অসচেতনতা, সামাজিক দূরত্ব না মানা এবং বিশেষ করে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের সামাজিক সংক্রমণের কারণে জুন মাসে করোনা আবার ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম জানিয়েছেন, শনাক্ত হারের বিপরীতে বর্তমানে দেশের ১১ জেলায় সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরার্মশক কমিটি গত ১ জুন তাদের বৈঠকে করোনা সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে মনে করেন তারা।বিশেষ করে সীমান্তবর্তী ( রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, রাজশাহী, নওগাঁ এবং খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা ও বাগেরহাট) এলাকায় সংক্রমণের উচ্চহার দেখা গেছে। এছাড়াও আরও কিছু জেলাতে উচ্চ সংক্রমণ রয়েছে। এছাড়াও কমিটির এক সূত্র জানায়, এ আট জেলা ছাড়াও সিলেট, কক্সবাজার ও ফেনীতেও সংক্রমণের উচ্চহার রয়েছে।
ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের সামাজিক সংক্রমণও হয়েছে। আর এটা যদি ছড়িয়ে পড়ে তাহলে চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য বড় রকমের চ্যালেঞ্জ হতে পারে। তাই অবস্থা বিবেচনায় সংক্রমণ প্রতিরোধের কোনও বিকল্প নেই এবং এতে জনপ্রশাসনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সারাদেশেসরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ কঠোরভাবে পালন করতে হবে জানিয়ে সীমান্তবর্তী জেলা ও উচ্চ সংক্রমিত এলাকায় সম্পূর্ণ লকডাউন দেওয়া জরুরি বলে সুপারিশ করে কমিটি।
কোভিড-১৯ প্রতিরোধের বিধিনিষেধ পালনে স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’