ঢাকা ০৮:০০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেশজুড়ে আবারও করোনার টিকাদান শুরু

মহামারি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশে বিস্তৃত পরিসরে আবারও টিকাদান শুরু হয়েছে। সোমবার থেকে সারা দেশে দেওয়া হচ্ছে চীনের তৈরি সিনোফার্মের টিকা।
আর আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে দেশের ১২টি সিটি করপোরেশন এলাকায় দেওয়া হবে মডার্নার টিকা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এ কথা জানিয়েছেন।
দ্বিতীয় পর্যায়ে গণটিকাদান এমন সময় শুরু হচ্ছে, যখন দেশে সংক্রমণ, রোগী শনাক্তের হার ও করোনায় মৃত্যু অনেক বেশি। পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য দেশে বিধিনিষেধ চলছে।
এই পরিস্থিতিতে গণটিকাদানের গুরুত্ব কতটুকু বা টিকাদান কতটা কাজে আসবে, এমন প্রশ্নের উত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, মানুষের মধ্যে টিকা নেয়ার ব্যাপারে আগ্রহ আছে। কিন্তু একসঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন টিকা দেওয়ার কারণে কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ আছে। টিকা ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু করার পাশাপাশি এক টিকার চেয়ে অন্য টিকার গুণমান নিয়ে মানুষের মনে যেন কোনো প্রশ্ন না ওঠে, সে ব্যাপারে সবাইকে আশ্বস্ত করার দায়িত্ব সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের।
দেশে প্রথম পর্যায়ে গণটিকাদান শুরু হয়েছিল ৭ ফেব্রুয়ারি। শুরুতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়া হয়। দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিত না করেই ৫৮ লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষকে ওই টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৪৩ লাখ ৯৫ হাজার ২১৮ জনকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। গতকাল রোববার ঢাকার একটি ও কুমিল্লার একটি কেন্দ্রে ৩০৭ জনকে এই টিকা দেওয়া হয়েছে। এখনো ১৫ লাখ ২৪ হাজারের বেশি মানুষ দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় আছে।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বুলেটিনে মাতৃ, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্য কর্মসূচির পরিচালক সামসুল হক বলেন, কোনো টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন এমন ব্যক্তিদের দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে অন্য টিকা নেয়া ঠিক হবে না। জুলাই মাসের শেষ দিকে বা আগস্ট মাসে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেশে আশার সম্ভাবনা আছে।
দেশে এ পর্যন্ত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা এসেছে ১ কোটি ৩ লাখ। এর মধ্যে ৭০ লাখ টিকা সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে কেনা। বাকি ৩৩ লাখ টিকা ভারতের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া। উপহার হিসেবে চীন সিনোফার্মের ১১ লাখ টিকা দিয়েছে। সরকার সিনোফার্মের টিকা কিনেছে দেড় কোটি, এর মধ্যে দেশে এসেছে ২০ লাখ। অন্যদিকে করোনা টিকা সংগ্রহ ও বিতরণের বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স পাঠিয়েছে ফাইজারের টিকা ১ লাখ এবং মডার্নার টিকা ২৫ লাখ। সব মিলিয়ে দেশে এখন টিকার মজুত আছে ৫৮ লাখ ৫৪ হাজারের কিছু বেশি।
সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, চীন থেকে কেনা বাকি টিকা সেপ্টেম্বরের মধ্যে দেশে আসার কথা রয়েছে। কোভ্যাক্স থেকে আগস্টের প্রথম ভাগে আসবে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৩৫ লাখ টিকা। এ ছাড়া অন্যান্য টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ও দেশ থেকে টিকা কেনার চেষ্টা অব্যাহত আছে। টিকা কেনার জন্য যথেষ্ট বরাদ্দও আছে। সরকার দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে চায়।
টিকা দেয়া হবে যেখানে:
দ্বিতীয় পর্যায়ে গণটিকাদানের আওতায় ঢাকা দক্ষিণ, ঢাকা উত্তর, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট—এই ১২টি মহানগরে আগামীকাল থেকে শুধু মডার্নার টিকা দেওয়া হবে। অন্যদিকে দেশের বাকি সব জেলা শহর ও উপজেলায় আজ দেয়া হবে সিনোফার্মের টিকা। সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, তাপমাত্রার স্পর্শকাতরতার কারণে মহানগরগুলোতে মডার্নার টিকা দেয়া হবে। যে তাপমাত্রায় মডার্নার টিকা সংরক্ষণ দরকার, তেমন ধরনের ব্যবস্থা দেশের সব জেলা শহর বা উপজেলা পর্যায়ে নেই। মডার্নার টিকা ও সিনোফার্মের টিকার কার্যকারিতায় কোনো পার্থক্য নেই।
Tag :

দেশজুড়ে আবারও করোনার টিকাদান শুরু

Update Time : ০৫:৪৯:৫১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ জুলাই ২০২১
মহামারি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশে বিস্তৃত পরিসরে আবারও টিকাদান শুরু হয়েছে। সোমবার থেকে সারা দেশে দেওয়া হচ্ছে চীনের তৈরি সিনোফার্মের টিকা।
আর আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে দেশের ১২টি সিটি করপোরেশন এলাকায় দেওয়া হবে মডার্নার টিকা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এ কথা জানিয়েছেন।
দ্বিতীয় পর্যায়ে গণটিকাদান এমন সময় শুরু হচ্ছে, যখন দেশে সংক্রমণ, রোগী শনাক্তের হার ও করোনায় মৃত্যু অনেক বেশি। পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য দেশে বিধিনিষেধ চলছে।
এই পরিস্থিতিতে গণটিকাদানের গুরুত্ব কতটুকু বা টিকাদান কতটা কাজে আসবে, এমন প্রশ্নের উত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, মানুষের মধ্যে টিকা নেয়ার ব্যাপারে আগ্রহ আছে। কিন্তু একসঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন টিকা দেওয়ার কারণে কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ আছে। টিকা ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু করার পাশাপাশি এক টিকার চেয়ে অন্য টিকার গুণমান নিয়ে মানুষের মনে যেন কোনো প্রশ্ন না ওঠে, সে ব্যাপারে সবাইকে আশ্বস্ত করার দায়িত্ব সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের।
দেশে প্রথম পর্যায়ে গণটিকাদান শুরু হয়েছিল ৭ ফেব্রুয়ারি। শুরুতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়া হয়। দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিত না করেই ৫৮ লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষকে ওই টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৪৩ লাখ ৯৫ হাজার ২১৮ জনকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। গতকাল রোববার ঢাকার একটি ও কুমিল্লার একটি কেন্দ্রে ৩০৭ জনকে এই টিকা দেওয়া হয়েছে। এখনো ১৫ লাখ ২৪ হাজারের বেশি মানুষ দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় আছে।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বুলেটিনে মাতৃ, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্য কর্মসূচির পরিচালক সামসুল হক বলেন, কোনো টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন এমন ব্যক্তিদের দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে অন্য টিকা নেয়া ঠিক হবে না। জুলাই মাসের শেষ দিকে বা আগস্ট মাসে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেশে আশার সম্ভাবনা আছে।
দেশে এ পর্যন্ত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা এসেছে ১ কোটি ৩ লাখ। এর মধ্যে ৭০ লাখ টিকা সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে কেনা। বাকি ৩৩ লাখ টিকা ভারতের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া। উপহার হিসেবে চীন সিনোফার্মের ১১ লাখ টিকা দিয়েছে। সরকার সিনোফার্মের টিকা কিনেছে দেড় কোটি, এর মধ্যে দেশে এসেছে ২০ লাখ। অন্যদিকে করোনা টিকা সংগ্রহ ও বিতরণের বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স পাঠিয়েছে ফাইজারের টিকা ১ লাখ এবং মডার্নার টিকা ২৫ লাখ। সব মিলিয়ে দেশে এখন টিকার মজুত আছে ৫৮ লাখ ৫৪ হাজারের কিছু বেশি।
সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, চীন থেকে কেনা বাকি টিকা সেপ্টেম্বরের মধ্যে দেশে আসার কথা রয়েছে। কোভ্যাক্স থেকে আগস্টের প্রথম ভাগে আসবে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৩৫ লাখ টিকা। এ ছাড়া অন্যান্য টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ও দেশ থেকে টিকা কেনার চেষ্টা অব্যাহত আছে। টিকা কেনার জন্য যথেষ্ট বরাদ্দও আছে। সরকার দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে চায়।
টিকা দেয়া হবে যেখানে:
দ্বিতীয় পর্যায়ে গণটিকাদানের আওতায় ঢাকা দক্ষিণ, ঢাকা উত্তর, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট—এই ১২টি মহানগরে আগামীকাল থেকে শুধু মডার্নার টিকা দেওয়া হবে। অন্যদিকে দেশের বাকি সব জেলা শহর ও উপজেলায় আজ দেয়া হবে সিনোফার্মের টিকা। সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, তাপমাত্রার স্পর্শকাতরতার কারণে মহানগরগুলোতে মডার্নার টিকা দেয়া হবে। যে তাপমাত্রায় মডার্নার টিকা সংরক্ষণ দরকার, তেমন ধরনের ব্যবস্থা দেশের সব জেলা শহর বা উপজেলা পর্যায়ে নেই। মডার্নার টিকা ও সিনোফার্মের টিকার কার্যকারিতায় কোনো পার্থক্য নেই।