ঢাকা ০৭:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

“দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জামিন বিবেচনা করা হবে না”প্রধান বিচারপতি

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, ছবি:সংগৃহীত

দেশের ইমেজ ক্ষুন্ন হয় এমন বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখা নিয়ে সর্তক করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
রবিবার (৭ মার্চ) ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় গোলাম সারোয়ারের জামিন শুনানিকালে প্রধান বিচারপতি আসামি পক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, লেখেন, কিন্তু এরকমভাবে কিছু করবেন না, যা একজন শিক্ষিত মানুষের শোভা পায় না। মনে রাখবেন দেশের ইমেজ সবার আগে।
গত বছরের মার্চে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সিলেটে গোলাম সারোয়ারের বিরুদ্ধে মামলা হয়। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে নিয়ে কটাক্ষ ও ছবি বিকৃতি করে ফেসবুকে কুরুচিপূর্ণ পোস্ট ও শেয়ারের অভিযোগে এ মামলা দায়ের করা হয়।
মামলায় গত বছরের অক্টোবরে হাইকোর্ট রুল দিয়ে সারোয়ারকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন। জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১৮ অক্টোবর চেম্বার আদালতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত হয়। পরে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে জামিন আবেদন করা হয়।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ দেশের রাজনৈতিক নেতাদের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কটূক্তি করায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা এক মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ওপর (ভার্চুয়াল) শুনানিতে রোববার এ মন্তব্য করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সম্পর্কে কটাক্ষ ও নেতিবাচক বিভিন্ন পোষ্ট ও ছবি বিকৃত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট ও শেয়ার করার অভিযোগে গোলাম সারোয়ারের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গত বছরের মার্চ মাসে সিলেট থানায় মামলা হয়। এ মামলায় গত বছরের অক্টোবরে হাইকোর্ট রুল দিয়ে সারোয়ারকে অর্ন্তবর্তীকালীন জামিন দেন। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করলে গত বছরের ১৮ অক্টোবর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেন। এর ধারাবাহিকতায় রোববার আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে আবেদনের ওপর শুনানি হয়। এ সময় গ্রেফতার সিলেটের গোলাম সরোয়ারকে স্বাস্থ্যগত কারণে হাইকোর্টের দেয়া জামিন বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।

শুনানিতে সারোয়ারের আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান আদালতকে বলেন, এক বছর ধরে কারাগারে আছেন সারোয়ার। এই মামলায় এখন পর্যন্ত চার্জশিট দেওয়া হয়নি। তার হৃদযন্ত্রে চারটি রিং (স্টেন্ট) পরানো আছে, স্বাস্থ্যগত কারণে জামিন চাওয়া হয়েছে।

আদালত বলেন, এত স্টেন্ট থাকার পরেও আপনি এসব কেন করেন? এ সময় আসাদুজ্জামান বলেন, গত ১৪ মার্চ থেকে কারাগারে আছেন। প্রায় এক বছর ধরে বিনা বিচারে কারাগারে আছেন। হাইকোর্ট মূলত স্বাস্থ্যগত কারণে জামিন দিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ কথা লেখার বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করে আইনজীবীদের প্রধান বিচারপতি বলেন, লেখেন, কিন্তু কোনোভাবেই যেনো দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন না হয়। শিক্ষিত মানুষরা কুরুচিপূর্ণ ভাষা কিভাবে লেখেন? তাদের শিক্ষার দাম কী রইলো। তিনি বলেন, দেশের ইমেজ সবার আগে। কারও লেখায় দেশের ইমেজ নষ্ট হলে ভবিষ্যতে আমরা জামিন বিবেচনা করব না।

তিনি বলেন, আমেরিকাতেও তো মানুষ ‘স্যাটায়ার’ করে। কিন্তু আমাদের এখানকার মতো এতো কুরুচিপূর্ণ কথা লেখা না। এসময় আসামি গোলাম সরোয়ারের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা সতর্ক করে দিচ্ছি, এ রকম হলে আর জামিন হবে না। আদালতে এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, আপনি লিখেন, কিন্তু এ রকমভাবে কিছু করবেন না, যেটি একজন শিক্ষিত মানুষের জন্য শোভা পায় না। শুনানি নিয়ে আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে আদেশ দেন। শুনানি শেষে সারোয়ারকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।

Tag :

“দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জামিন বিবেচনা করা হবে না”প্রধান বিচারপতি

Update Time : ০৪:৩৪:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ মার্চ ২০২১
দেশের ইমেজ ক্ষুন্ন হয় এমন বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখা নিয়ে সর্তক করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
রবিবার (৭ মার্চ) ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় গোলাম সারোয়ারের জামিন শুনানিকালে প্রধান বিচারপতি আসামি পক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, লেখেন, কিন্তু এরকমভাবে কিছু করবেন না, যা একজন শিক্ষিত মানুষের শোভা পায় না। মনে রাখবেন দেশের ইমেজ সবার আগে।
গত বছরের মার্চে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সিলেটে গোলাম সারোয়ারের বিরুদ্ধে মামলা হয়। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে নিয়ে কটাক্ষ ও ছবি বিকৃতি করে ফেসবুকে কুরুচিপূর্ণ পোস্ট ও শেয়ারের অভিযোগে এ মামলা দায়ের করা হয়।
মামলায় গত বছরের অক্টোবরে হাইকোর্ট রুল দিয়ে সারোয়ারকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন। জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১৮ অক্টোবর চেম্বার আদালতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত হয়। পরে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে জামিন আবেদন করা হয়।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ দেশের রাজনৈতিক নেতাদের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কটূক্তি করায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা এক মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ওপর (ভার্চুয়াল) শুনানিতে রোববার এ মন্তব্য করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সম্পর্কে কটাক্ষ ও নেতিবাচক বিভিন্ন পোষ্ট ও ছবি বিকৃত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট ও শেয়ার করার অভিযোগে গোলাম সারোয়ারের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গত বছরের মার্চ মাসে সিলেট থানায় মামলা হয়। এ মামলায় গত বছরের অক্টোবরে হাইকোর্ট রুল দিয়ে সারোয়ারকে অর্ন্তবর্তীকালীন জামিন দেন। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করলে গত বছরের ১৮ অক্টোবর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেন। এর ধারাবাহিকতায় রোববার আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে আবেদনের ওপর শুনানি হয়। এ সময় গ্রেফতার সিলেটের গোলাম সরোয়ারকে স্বাস্থ্যগত কারণে হাইকোর্টের দেয়া জামিন বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।

শুনানিতে সারোয়ারের আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান আদালতকে বলেন, এক বছর ধরে কারাগারে আছেন সারোয়ার। এই মামলায় এখন পর্যন্ত চার্জশিট দেওয়া হয়নি। তার হৃদযন্ত্রে চারটি রিং (স্টেন্ট) পরানো আছে, স্বাস্থ্যগত কারণে জামিন চাওয়া হয়েছে।

আদালত বলেন, এত স্টেন্ট থাকার পরেও আপনি এসব কেন করেন? এ সময় আসাদুজ্জামান বলেন, গত ১৪ মার্চ থেকে কারাগারে আছেন। প্রায় এক বছর ধরে বিনা বিচারে কারাগারে আছেন। হাইকোর্ট মূলত স্বাস্থ্যগত কারণে জামিন দিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ কথা লেখার বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করে আইনজীবীদের প্রধান বিচারপতি বলেন, লেখেন, কিন্তু কোনোভাবেই যেনো দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন না হয়। শিক্ষিত মানুষরা কুরুচিপূর্ণ ভাষা কিভাবে লেখেন? তাদের শিক্ষার দাম কী রইলো। তিনি বলেন, দেশের ইমেজ সবার আগে। কারও লেখায় দেশের ইমেজ নষ্ট হলে ভবিষ্যতে আমরা জামিন বিবেচনা করব না।

তিনি বলেন, আমেরিকাতেও তো মানুষ ‘স্যাটায়ার’ করে। কিন্তু আমাদের এখানকার মতো এতো কুরুচিপূর্ণ কথা লেখা না। এসময় আসামি গোলাম সরোয়ারের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা সতর্ক করে দিচ্ছি, এ রকম হলে আর জামিন হবে না। আদালতে এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, আপনি লিখেন, কিন্তু এ রকমভাবে কিছু করবেন না, যেটি একজন শিক্ষিত মানুষের জন্য শোভা পায় না। শুনানি নিয়ে আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে আদেশ দেন। শুনানি শেষে সারোয়ারকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।