ঢাকা ০৪:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফরিদপুরে অনিয়ম ও অসাধুতায় নায্যমূল্যে দুধ, ডিম বিক্রির সুফল পাচ্ছে না জনগণ

  • মাহবুব পিয়াল
  • Update Time : ১২:৪৮:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ এপ্রিল ২০২১
  • ২৫৭ Time View

করোনাকালে একদিকে খামারীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অন্যদিকে জনসাধারনের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে সরকার নায্যমূল্যে ভ্রাম্যমান দোকানের মাধ্যমে প্রাণিজাত পণ্য বাড়িতে বাড়িতে পৌছে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। গত এক সপ্তাহ যাবত শুরু হওয়া এ বিশেষ প্রকল্পে এখনো কাঙ্খিত সুফল পাচ্ছে না জনগণ। বরং প্রচার প্রচারণার অভাব পাশাপাশি অনিয়মের মাধ্যমে একটি চক্র প্রণোদনার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধানে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে আমিষ তথা দুধ, ডিম ও মাংসজাত পণ্যের ঘাটতি মেটাতে সরকার খামারীদের বিশেষ প্রণোদনা দিয়ে এই প্রকল্পটি চালু করে এক সপ্তাহ আগে। এখানে প্রতি কেজি গরুর দুধ ৬ টাকা, প্রতি পিচ মুরগীর ডিম ৬ টাকা হতে সাড়ে ৬ টাকা, মুরগীর মূল্য সোনালী প্রতি কেজি ২৪০ টাকা, ব্রয়লার ১৪০ টাকা, প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫শ’ টাকা এবং খাসির মাংস ৭শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রির জন্য মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। পাড়া মহল্লায় ঘুরে ঘুরে এসব পণ্য বিক্রির জন্য নির্দিষ্ট খামারীদের জন প্রতি প্রতিদিন এশ’ টাকা পাচ্ছেন। ফরিদপুর জেলার পাঁচটি উপজেলার দশজন খামারী এই বিশেষ প্রণোদনা পাচ্ছেন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৬জন এবং বোয়ালমারী, মধুখালী, ভাঙ্গা ও সালথা উপজেলায় একজন করে রয়েছেন।

অভিযোগ উঠেছে জেলায় প্রায় এক হাজারের মতো গরিব খামারী থাকলেও এই সুবিধা পাচ্ছেন দশজন। তারা প্রণোদনার টাকা ঠিকই তুলে নিচ্ছেন কিন্তু জনসাধারণের নায্যমূল্যের এসব প্রাণীজাত পণ্য দিচ্ছেন না। প্রচারণার অভাবে অনেকেই জানেনই না সরকার এমন একটি মহতি উদ্যোগ নিয়েছেন। ভোক্তারা অভিযোগ করেন, এখন পর্যন্ত দুধ ব্যতিত অন্য কোন পণ্য এই ভ্রাম্যমান দোকানে মিলছে না। আর যেই পরিমাণ দুধ বিক্রির কথা সেই পরিমানও বিক্রি করা হচ্ছে না। দু’ একটি স্থানে মুরগির ডিম পাওয়া গেলেও কোথাও মাংস বিক্রি হচ্ছে না। এসব ভ্রাম্যমান দোকান পরিচালনাতেও অনিয়ম ও দূর্নীতি হচ্ছে।

ফরিদপুর জেলার প্রাণিসম্পদ কমর্কর্তা নুরুল্লাহ মো. আহসান জানান, গত মঙ্গলবার হতে জেলায় এই কর্মসূচি উদ্বোধন করা হয়েছে। বাংলাদেশ ডেইরী ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন ফরিদপুর জেলা শাখার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যে দশজন খামারীদের তালিকা দেয়া হযেছে তাদেরই এ প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। তিনি জানান, প্রতিদিনই এই কর্মসূচীর মাঠ পর্যায়ে তদারকি করা হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার সরেজমিনে তিনি মধুখালি উপজেলার ভ্রাম্যমান দোকান পরিদর্শনে যান।

বাংলাদেশ ডেইরী ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন ফরিদপুর জেলা শাখার সভাপতি মীর কাশেম বলেন, গত বছর করোনার কারণে ভ্রাম্যমান দোকানে করে প্রাণিজাত পণ্য বিক্রির উধ্যোগ নেয়া হলে সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর সরকার সারাদেশে এবছর এই প্রকল্প গ্রহণ করে। তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহ আগ হতে এটি শুরু হলেও ফরিদপুরে তিনদিন যাবত চালু হয়েছে। শহরের ঝিলটুলীতে প্রাণিজাত পণ্য বিক্রি কর্ণারের সামনে তার ভ্যান গাড়িতে প্রতিদিন সকাল ও বিকেল প্রায় ৬’শ লিটার দুধ তিনি বিক্রি করেছেন।

অভিযোগ উঠেছে এই অনিয়ম ও দূনীতিতে অফিসের একিট অসাধু চক্র জড়িত। তারা সরকারের প্রণোদনা নিলেও ভ্রাম্যমান দোকান পরিচালনা করছেন না। দু’একটি স্থানে ভ্রাম্যমান এসব প্রণিজাত পণ্যের দোকান দেখা গেলও তা খুব কম সমযই সেসব অটো বা ভ্যান দেখা যায়। কোথাও মাইকিৎ করা হয়নি।

ফরিদপুর জেলার প্রাণিসম্পদ কমর্কর্তা নুরুল্লাহ মো. আহসান জানান, কারো বিরুদ্ধে অনিয়ম বা দূনীর্তির অভিযোগ পেলে সেটি তদন্ত করে দেখা হবে। তবে দু’একজনের জন্য এমন একটি ভাল উদ্যোগ যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেদিকেও খেযাল রাখাতে হবে। তিনি বলেন, বুধবার ১০টি দোকানহতে প্রায় ৭ হাজার লিটার দুধ ও ৭৪০০ পিচ মুরির ডিম বিক্রি করা হয়েছে। আমরা প্রতিদিন সন্ধ্যায় অনলাইন ফরমে এসব তথ্য সংগ্রহ করেছি। এসব দোকানে মুরগি, গরু ও খাসীর মাংস এমনকি  ঘি বিক্রির জন্যও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

 

Tag :

ফরিদপুরে অনিয়ম ও অসাধুতায় নায্যমূল্যে দুধ, ডিম বিক্রির সুফল পাচ্ছে না জনগণ

Update Time : ১২:৪৮:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ এপ্রিল ২০২১

করোনাকালে একদিকে খামারীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অন্যদিকে জনসাধারনের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে সরকার নায্যমূল্যে ভ্রাম্যমান দোকানের মাধ্যমে প্রাণিজাত পণ্য বাড়িতে বাড়িতে পৌছে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। গত এক সপ্তাহ যাবত শুরু হওয়া এ বিশেষ প্রকল্পে এখনো কাঙ্খিত সুফল পাচ্ছে না জনগণ। বরং প্রচার প্রচারণার অভাব পাশাপাশি অনিয়মের মাধ্যমে একটি চক্র প্রণোদনার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধানে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে আমিষ তথা দুধ, ডিম ও মাংসজাত পণ্যের ঘাটতি মেটাতে সরকার খামারীদের বিশেষ প্রণোদনা দিয়ে এই প্রকল্পটি চালু করে এক সপ্তাহ আগে। এখানে প্রতি কেজি গরুর দুধ ৬ টাকা, প্রতি পিচ মুরগীর ডিম ৬ টাকা হতে সাড়ে ৬ টাকা, মুরগীর মূল্য সোনালী প্রতি কেজি ২৪০ টাকা, ব্রয়লার ১৪০ টাকা, প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫শ’ টাকা এবং খাসির মাংস ৭শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রির জন্য মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। পাড়া মহল্লায় ঘুরে ঘুরে এসব পণ্য বিক্রির জন্য নির্দিষ্ট খামারীদের জন প্রতি প্রতিদিন এশ’ টাকা পাচ্ছেন। ফরিদপুর জেলার পাঁচটি উপজেলার দশজন খামারী এই বিশেষ প্রণোদনা পাচ্ছেন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৬জন এবং বোয়ালমারী, মধুখালী, ভাঙ্গা ও সালথা উপজেলায় একজন করে রয়েছেন।

অভিযোগ উঠেছে জেলায় প্রায় এক হাজারের মতো গরিব খামারী থাকলেও এই সুবিধা পাচ্ছেন দশজন। তারা প্রণোদনার টাকা ঠিকই তুলে নিচ্ছেন কিন্তু জনসাধারণের নায্যমূল্যের এসব প্রাণীজাত পণ্য দিচ্ছেন না। প্রচারণার অভাবে অনেকেই জানেনই না সরকার এমন একটি মহতি উদ্যোগ নিয়েছেন। ভোক্তারা অভিযোগ করেন, এখন পর্যন্ত দুধ ব্যতিত অন্য কোন পণ্য এই ভ্রাম্যমান দোকানে মিলছে না। আর যেই পরিমাণ দুধ বিক্রির কথা সেই পরিমানও বিক্রি করা হচ্ছে না। দু’ একটি স্থানে মুরগির ডিম পাওয়া গেলেও কোথাও মাংস বিক্রি হচ্ছে না। এসব ভ্রাম্যমান দোকান পরিচালনাতেও অনিয়ম ও দূর্নীতি হচ্ছে।

ফরিদপুর জেলার প্রাণিসম্পদ কমর্কর্তা নুরুল্লাহ মো. আহসান জানান, গত মঙ্গলবার হতে জেলায় এই কর্মসূচি উদ্বোধন করা হয়েছে। বাংলাদেশ ডেইরী ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন ফরিদপুর জেলা শাখার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যে দশজন খামারীদের তালিকা দেয়া হযেছে তাদেরই এ প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। তিনি জানান, প্রতিদিনই এই কর্মসূচীর মাঠ পর্যায়ে তদারকি করা হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার সরেজমিনে তিনি মধুখালি উপজেলার ভ্রাম্যমান দোকান পরিদর্শনে যান।

বাংলাদেশ ডেইরী ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন ফরিদপুর জেলা শাখার সভাপতি মীর কাশেম বলেন, গত বছর করোনার কারণে ভ্রাম্যমান দোকানে করে প্রাণিজাত পণ্য বিক্রির উধ্যোগ নেয়া হলে সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর সরকার সারাদেশে এবছর এই প্রকল্প গ্রহণ করে। তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহ আগ হতে এটি শুরু হলেও ফরিদপুরে তিনদিন যাবত চালু হয়েছে। শহরের ঝিলটুলীতে প্রাণিজাত পণ্য বিক্রি কর্ণারের সামনে তার ভ্যান গাড়িতে প্রতিদিন সকাল ও বিকেল প্রায় ৬’শ লিটার দুধ তিনি বিক্রি করেছেন।

অভিযোগ উঠেছে এই অনিয়ম ও দূনীতিতে অফিসের একিট অসাধু চক্র জড়িত। তারা সরকারের প্রণোদনা নিলেও ভ্রাম্যমান দোকান পরিচালনা করছেন না। দু’একটি স্থানে ভ্রাম্যমান এসব প্রণিজাত পণ্যের দোকান দেখা গেলও তা খুব কম সমযই সেসব অটো বা ভ্যান দেখা যায়। কোথাও মাইকিৎ করা হয়নি।

ফরিদপুর জেলার প্রাণিসম্পদ কমর্কর্তা নুরুল্লাহ মো. আহসান জানান, কারো বিরুদ্ধে অনিয়ম বা দূনীর্তির অভিযোগ পেলে সেটি তদন্ত করে দেখা হবে। তবে দু’একজনের জন্য এমন একটি ভাল উদ্যোগ যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেদিকেও খেযাল রাখাতে হবে। তিনি বলেন, বুধবার ১০টি দোকানহতে প্রায় ৭ হাজার লিটার দুধ ও ৭৪০০ পিচ মুরির ডিম বিক্রি করা হয়েছে। আমরা প্রতিদিন সন্ধ্যায় অনলাইন ফরমে এসব তথ্য সংগ্রহ করেছি। এসব দোকানে মুরগি, গরু ও খাসীর মাংস এমনকি  ঘি বিক্রির জন্যও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।