মাহবুব পিয়াল, ফরিদপুর প্রতিনিধি ঃ ‘আওয়ামী লীগের গোপন মিটিং হচ্ছে’ এমনটি দাবি করে হামীম গ্রæপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ফরিদপুর-৩ আসনের সাবেক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এ কে আজাদের ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলীস্থ বাড়ির সামনে ফরিদপুর মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল ও বাড়িতে বেআইনিভাবে প্রবেশের মামলায় এজাহারভুক্ত সকল আসামিকে জামিন দিয়েছেন আদালত।
গতকাল মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বেলা ১২টার দিকে ফরিদপুর ১ নম্বর আমলি আদালতে (সদর কোর্ট) আত্মসমর্পণ করেন এ মামলার ১৩জন আসামি। আদালত পরিচালনা করেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যজিস্ট্রেট আসিফ এলাহী।
আসামীদের পক্ষের আইনজীবী ছিলেন জেলা বিএনপির আহŸায়ক কমিটির সদস্য জসীমউদ্দিন মৃধা। এ সময় জেলা বিএনপির আহŸায়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোদাররেছ আলী ইছা, যুগ্ম আহŸায়ক অ্যাডভোকেট গোলাম রব্বানী ভুইয়া রতনসহ বিএনপিপন্থী বেশ কিছু আইনজীবী তাকে সহযোগিতা করেন।
শুনানির সময় আসামিদের পক্ষের আইনজীবীরা জামিনের পক্ষে আদালতের কাছে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন। তবে জামিনের আবেদনের বিরোধীতা করে বক্তব্য দেন বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তৌহিদুল ইসলাম।
এ ঘটনার সতত্যা নিশ্চিত করেছেন আসামি পক্ষের আইনজীবী জসীমউদ্দিন মৃধা বলেন, আদালত দুইপক্ষের বক্তব্য শোনার পর প্রত্যেক আসামিকে ১০০ টাকার বেলবন্ডে এ মামলায় পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সকলের জামিন মঞ্জুর করেছেন। সকলকে স্থায়ী জামিন দিয়েছেন আদালত। মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ১৬জনের মধ্যে ১৩জন আত্মসমর্পণ করেন।
মামলা, ঘটনার দিনের প্রত্যক্ষদর্শী ও একটি সিসি ফুটেজ সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুর-৩ আসনের সাবেক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও হামীম গ্রæপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদের ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলির বাড়িতে ‘আওয়ামী লীগের গোপন মিটিং হচ্ছে’ এমন একটি বিষয় নিয়ে ফরিদপুর মহানগর বিএনপি, মহানগর ছাত্রদল, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা একটি মিছিল নিয়ে এ কে আজাদের বাসভবনের সামনে গিয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকে। সেখানে কিছু সময় অবস্থান করে মিছিল থেকে কয়েকজন নেতাকর্মী এ কে আজাদের বাড়ির প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করে আওয়ামী লীগের মিটিংয়ের ব্যাপারে সিকিউরিটি গার্ডের না বাচক উত্তর শুনে নেতাকর্মীরা শহরের কাঠপট্টি এলাকায় বিএনপির কার্যালয়ের সামনে ফিরে আসেন।
এ ঘটনায় গত ৪ জুলাই দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে এ কে আজাদের বাড়িতে ‘বেআইনী জনতাবদ্ধ হয়ে বাড়িতে অনধিকার প্রবেশ করে হত্যার হুমকি’ দেওয়ার অভিযোগ এনে হামীম গ্রæপের ল্যান্ড হেড কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাফিজুল খান (৪০) বাদী হয়ে ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় মামলা করেন। মামলায় ফরিদপুর মহনগর বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম মোস্তফাসহ(৫৫) ১৬ জন বিএনপির নেতাকর্মীকে আসামি করে অজ্ঞাতনাম আরো ২৫-৩০জনকে আসামি করা হয়।
ফরিদপুর কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদউজ্জামান বলেন, এ কে আজাদের বাড়িতে ‘বেআইনী জনতাবদ্ধ হয়ে বাড়িতে অনধিকার প্রবেশ করে হত্যার হুমকি’ দেওয়ার অভিযোগে এ মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলার এজাহারভুক্ত আসামি বিএনপির কর্মী মির্জা প্রিন্স আলীসান (৪৫) গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ফরিদপুর সদরের চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের মমিনখার হাট এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি দল।
জামিন পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন, ফরিদপুর মহনগর বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম মোস্তফা (৫৫), কোতয়ালী থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান চৌধুরী (৫৬), মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহŸায়ক মিজানুর রহমান (৫৫), মহানগর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম (৪৪) ও মহানগর ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ক্যাপ্টেন সোহাগ (৪০) প্রমুখ।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, জামিন পাওয়ার পর ফরিদপুর মহনগর বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম মোস্তফাসহ জামিনপ্রাপ্তদের নিয়ে শহরে মিছিল বের করে ফরিদপুর মহানগর বিএনপিসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিলটি আদালত চত্বর থেকে শুরু হয়ে মুজিব সড়ক হয়ে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সভার মধ্যে দিয়ে শেষ হয়। এ সময় বক্তব্য রাখেন, ফরিদপুর মহানগর বিএনপির আহŸায়ক এ এফ এম কাইয়ুম, সদস্য সচিব গোলাম মোস্তফা মিরাজ ,যুগ্ম আহŸায়ক মিজানুর রহমান মিনান, এমদাদুল হক এমদাদ, মহানগর যুবদলের সাধারন সম্পাদক আলী রেজওয়ান বিশ্বাস তরুনসহ অন্যান্যরা।