রাজধানীর গুলশানের অভিজাত ফ্ল্যাট থেকে কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার (২১) রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় মামলা তুলে নিতে প্রলোভন দেখানো হচ্ছে। এজন্য মামলার প্রধান আসামি বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের পক্ষ থেকে মুনিয়ার ‘রক্তের মূল্য হিসেবে’ পরিবারকে যেকোনো অঙ্কের টাকা দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
গণমাধ্যম কর্মী ও সিসি ক্যামেরাবিহীন স্থানে মামলার বাদী নুসরাত জাহান তানিয়া ও তার স্বামীর সঙ্গে গোপন বৈঠক করতে চান আনভীর। একই সঙ্গে আপাতত তিন মাস চুপচাপ থাকার কথা বলা হচ্ছে। সম্প্রতি জনৈক ব্যক্তিকে কুমিল্লার বাড়িতে পাঠিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপ এমন প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে আসামিপক্ষের এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে মুনিয়ার পরিবার জানিয়ে দিয়েছে, তারা বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়েও সমঝোতা করবেন না। মামলা তুলে নিবেন না। তবে মুনিয়ার প্রেমিক বসুন্ধরা এমডি আনভীর যদি মিডিয়ার সামনে কিংবা ফেসবুক লাইভে তার দোষ স্বীকার করেন সেক্ষেত্রে চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে।
এদিকে মুনিয়া হত্যার প্রতিবাদে গত শনিবারও কুমিল্লা টাউন হল প্রাঙ্গণে মানববন্ধন করেছে স্থানীয় জনতা। এতে মুনিয়ার প্রেমিক ও বিশ্বাসঘাতক আনভীরের কঠোর শাস্তি দাবি করা হয়েছে। একই সঙ্গে আসামিকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবিও জানানো হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।
জানতে চাইলে মুনিয়ার বড় বোন ও মামলার বাদী নুসরাত জাহান মানবকণ্ঠকে বলেন, আমি আমার বোনের হত্যার বিচার চাই। আমরা কোনো সমঝোতায় যাব না। ক্ষমতাধর আসামিপক্ষ নানা অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে জানিয়েছে। চরিত্রহননের পাশাপাশি তাদের আর্থিকভাবেও ক্ষয়ক্ষতি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন নুসরাত।
দেশজুড়ে আলোচিত এ মামলা থেকে আনভীরকে রক্ষা করতে ইতোমধ্যে মুনিয়ার ভাই আশিকুর রহমান সবুজকে নিজেদের পক্ষে নেয়া হয়েছে। এখন বড় বোন ও গুলশান থানার মামলার বাদী নুসরাত জাহান তানিয়ার সঙ্গে সমঝোতার অপকৌশল নিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ।
হুইপপুত্র শারুনের ওপর দোষ চাপানোর পাশাপাশি নুসরাতের চরিত্রহনন, ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নানা কল্পকাহিনী ছড়িয়ে দিয়ে চাপে রাখার পর গোপনে নানা মাধ্যমে বড় কোনো প্রলোভন দেখানোর অপচেষ্টা চলছে।
চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বসুন্ধরা এমডি আনভীর ও মুনিয়ার পরকীয়ার কাহিনী ঘটনার শুরুতেই নিশ্চিত হওয়া গেছে। স্বামী-স্ত্রীর মতো দীর্ঘদিন বসবাস করার পর বিয়ে করার বিষয়টি সামনে আসার পরই দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করে আনভীর। নানা অপবাদ ও অজুহাত দেখিয়ে মুনিয়াকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়া হয়। ফলে ওই তরুণী যদি আত্মহত্যা করে থাকে তাহলে এর প্ররোচনা যে বসুন্ধরা এমডি দিয়েছে, সেটিও পুলিশি তদন্তে উঠে আসছে।
তবে মুনিয়ার মৃত্যু হত্যাকাণ্ডও হতে পারে, সেটি শতভাগ নিশ্চিত হতে ময়নাতদন্তসহ ফরেনসিক প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছে পুলিশ। সম্ভাব্য সব দিক মাথায় রেখেই আলোচিত এ মামলার তদন্ত চলছে।
মামলা দায়েরের পর নুসরাত পুলিশকে জানিয়েছেন, তাদের সম্পর্কের বিষয়টি পারিবারিকভাবে জানাজানি হওয়ার পর আনভীর মুনিয়াকে কৌশলে কুমিল্লায় পাঠিয়ে দেন এবং পরে বিয়ে করবেন বলে আশ্বাস দেন। গত ১ মার্চ গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাসার বি/৩ ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন আনভীর।
১ মার্চ থেকে মুনিয়া সেই ফ্ল্যাটেই ছিলেন এবং আনভীর মাঝে মাঝে ওই ফ্ল্যাটে আসা যাওয়া করতেন। তারা স্বামী-স্ত্রীর মতো বসবাস করতেন। ১ লাখ ১১ হাজার টাকার ওই অভিজাত ফ্ল্যাটের ভাড়া দিতেন আনভীর।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাসার তৃতীয় তলার একটি অভিজাত ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাসার তৃতীয় তলার একটি অভিজাত ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সূত্র: মানবকণ্ঠ