করোনা সংক্রমণ-মৃত্যু বাড়ছেই খোলার সিদ্ধান্ত রিভিউ করার দাবি অভিভাবকদের নতুন চালান না আসায় রয়েছে টিকার সঙ্কট শিক্ষা মন্ত্রণালয় পুনর্বিবেচনা করবে মনে করেন : স্বাস্থ্যমন্ত্রী সংক্রমণ
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর গতবছরের ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ করে দেয়া হয় দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সংক্রমণ কিছুটা কমে আসায় আগামী ৩০ মার্চ থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু এরই মধ্যে আবার নতুনভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরেই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। যুক্তরাজ্যে পাওয়া করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইনও পাওয়া গেছে বাংলাদেশে। আক্রান্ত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। গতকাল করোনাভাইরাস সনাক্ত হয়েছে এক হাজার ৭৭৩ জনের মধ্যে। মৃত্যুবরণ করেছেন ২৬ জন। যুক্তরাজ্য ও ইতালিতেও ভাইরাসের সংক্রমণ কমে আসার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে ফের বাড়তে থাকে সংক্রমণ। এরপরই দেশ দুটিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে একই পরিস্থিতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সংক্রমণ এমন থাকলে বা আরও বাড়লে এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পক্ষে নন তারা। এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ঘোষণার পর যেসব শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবার রাজধানীসহ বড় শহরগুলো ছেড়ে নিজ নিজ গ্রামে ফিরে গিয়েছিলেন তারা আবারও ফিরতে শুরু করেছেন, অনেকেই নিচ্ছেন ফেরার প্রস্তুতি। এমন অবস্থায় সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। করোনা সংক্রমণ বাড়ায় স্কুল-কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত রিভিউ করার দাবি জানিয়েছে অভিভাবক ঐক্য ফোরাম।
এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার আগে সকল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টিকা নিশ্চিত করার কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেশে আসা ৯০ লাখ টিকার মধ্যে গতকাল সোমবার পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ৪৪ লাখ ৮৫ হাজার ৯৫৪জন। নিবন্ধন করেছেন ৫৭ লাখ ৭০ হাজার ১৯৮ জন। নিবন্ধিতদের মধ্যে প্রায় ১৩ লাখ এখনো টিকা নেয়ার অপেক্ষায়। অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে টিকা আছে ৪৫ লাখ। সে হিসেবে দ্বিতীয় ডোজের টিকাই এখন শুধু আছে। নতুন করে টিকার চালান কবে আসবে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোন তারিখ বলতে পারছেন না স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে টিকার নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অনেকেই নিবন্ধনই করতে পারছেন না। কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন টিকা স্বল্পতার কারণে অধিদপ্তরই টিকার নিবন্ধন ও টিকা গ্রহণ দুটি ক্ষেত্রে কমিয়ে রাখার কৌশল হাতে নিয়েছে। টিকার নতুন চালান না আসলে আগামী ৩০ মার্চের আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টিকা প্রদান করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সেক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে বলেও মনে করছেন তারা।
বিশাল সংখ্যক শিক্ষক, কর্মচারীদের ভ্যাকসিন কাভারেজের বাইরে রাখার ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু হলে বর্তমান মহামারি আরও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা
এদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩ লাখ ৫৪ হাজার শিক্ষকের টিকাদান কার্যক্রম শুরু করেছে। ইতোমধ্যে প্রায় ২ লাখ শিক্ষকের টিকাদান কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এ মন্ত্রণালয়ের আওতায় দেশে বিদ্যমান অর্ধ লাখ কিন্ডারগার্টেন স্কুল থাকলেও এসব স্কুলের শিক্ষকরা টিকাদানের বিশেষ অগ্রাধিকার সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকছেন বলে জানা গেছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, গত দুই সপ্তাহ ধরে করোনার পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় সরকারের বিভিন্ন দফতর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরিস্থিতির সর্ম্পকে জানতে চাওয়া হয়েছে। অধিদফতর জানিয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ। তবে স্কুল খুললে পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় শষ্কার কথা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা জানিয়েছেন। এ উদ্বেগের বিষয়টি পরবর্তী সভায় তোলা হবে।
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, শিক্ষাখাতে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সবাইকে টিকাদানের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। আমাদের কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকায় একসঙ্গে সবাইকে এ সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। ধাপে ধাপে সবাইকে টিকাদান করা হবে।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়লে আগামী ৩০ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা থাকলেও তা পেছাতে পারে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করা হচ্ছে। যদি সংক্রমণ বাড়তে থাকে তবে সিদ্ধান্তে (৩০ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার) পরিবর্তন আসতে পারে। তবে এ ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়টা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে। এটাকে (শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত) রিভিউ করতে পারে। সংক্রমণ যদি বেড়ে যায়, তাহলে নিশ্চয় তারা হয়তো এটাকে রিভিউ করবেন। আর যদি করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাহলে হয়ত তারা তাদের মত করে সিদ্ধান্ত নেবেন।