বিভিন্ন সংস্থা থেকে ২১ কোটি ডোজ করোনা ভ্যাকসিন আনতে সরকার চুক্তি করেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
তিনি বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত ২১ কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব সময়মতো পেলে বাংলাদেশ কোনো দেশ থেকে ভ্যাকসিনে পিছিয়ে থাকবে না। যথাসময়ে ৮০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনা যাবে।‘
শনিবার (২৪ জুলাই) বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি প্রতিরোধ, অক্সিজেন সংকট সমাধান, হাসপাতালগুলোতে সুযোগ-সুবিধা ও শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে মতবিনিময় করতে এ সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সবাইকে টিকার আওতায় আনতে আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যে পর্যাপ্ত সংখ্যক টিকা দেশে পৌঁছেছে। ২৬ বা ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে আরও ৩০ লাখ ডোজ সিনোফার্মের টিকা দেশে আসবে।’
তিনি বলেন, ‘টিকা সংরক্ষণে ২৬টি কোল্ড ফ্রিজার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে আনা হয়েছে। এগুলোতে মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখার মতো টিকাও সংরক্ষণ করা যাবে। বিভিন্ন দেশ থেকে নতুন করে আরও যেসব টিকা আসবে, সেগুলো সংরক্ষণ করতে কোনো সমস্যা হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘গ্রামে বয়স্ক লোকজনকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে টিকা দেওয়া হবে। আমরা এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছি। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরও আগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তাদের পরিবারের ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের টিকা দেওয়া হবে।’
মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন— বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এ মুবিন খান, সাধারণ সম্পাদক ড. আনোয়ার হোসেন খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
১৮ বছরের ঊর্ধ্বে দেশের সব নাগরিককেই টিকা দেওয়া হবে
এদিকে আরেক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, এখন থেকে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে দেশের সব নাগরিককেই টিকা দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে সরকারের আইসিটি বিভাগের আওতাধীন জাতীয় সুরক্ষা অ্যাপে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বের সব নাগরিক যেন রেজিষ্ট্রেশন করতে পারে সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
শনিবার বিকেলে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘কোভিডের ৩য় ঢেউ মোকাবিলায় কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি প্রতিরোধ, অক্সিজেন সঙ্কট, হাসপাতালের সুযোগ-সুবিধা ও শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
সভায় দেশের মানুষকে কোভিড মহামারি থেকে রক্ষা করতে ব্যাপক টিকাদান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও মাস্ক পড়ার গুরুত্ব তুলে ধরেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
দেশে টিকাদানের সফলতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন,‘ বর্তমানে সরকারের হাতে এক কোটির ওপরে ভ্যাক্সিন রয়েছে। আগামী মাসের মধ্যেই আরো দুই কোটি ভ্যাক্সিন সরকারের হাতে চলে আসবে। এভাবে চীন থেকে তিন কোটি, রাশিয়া থেকে সাত কোটি, জনসন অ্যান্ড জনসনের সাত কোটি, অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটিসহ আগামী বছরের শুরুর দিকেই সরকারের হাতে প্রায় ২১ কোটি ভ্যাক্সিন চলে আসবে। আশা করা যাচ্ছে, দেশের অন্তত ৮০ ভাগ মানুষকে ভ্যাক্সিন দিতে সক্ষম হবে সরকার।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সভায় কোভিড মোকাবিলায় বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের কাছে আরো বেড বৃদ্ধির অনুরোধ জানান। বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে সভাপতি মুবিন খান স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অন্তত দুই হাজার নতুন কোভিড ডেডিকেটেড বেড বৃদ্ধির আশ্বাস দেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আগামীতে ভারত থেকে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ২০০ টন লিকুইড অক্সিজেন আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর সাথে ৪৩ টি অক্সিজেন জেনারেটর অর্ডার করা হয়েছে। আমেরিকান বাঙালিদের উপহার ২৫০টি ভেন্টিলেটর ও কোভ্যাক্সের দুই লাখ ৪৫ হাজার ভ্যাক্সিন আজকেই দেশে চলে আসছে। আগামী ২৬/২৭ জুলাই দেশে চীনের আরো ৩০ লাখ ভ্যাক্সিন দেশে আসবে।’
গ্রামাঞ্চলে কোভিড রোগীদের সনাক্ত করার উদ্যোগ হিসেবে জেলা, উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে পর্যন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর এবিএম খুরশিদ আলম, জাপান ইষ্ট ওয়েষ্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, গ্রীণ লাইফ মেডিকেল কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মাঈনুল আহসান, পপুলার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।