ঢাকা ১০:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
বহু মানুষ ও বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের পর আমরা স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে ব্যর্থ হয়েছিলাম সকাল থেকেই সর্বস্তরের জনতার ঢল নেমেছে রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি-প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ গাজা ভূখণ্ডের বিভিন্ন এলাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে অন্তত ৪০ ফিলিস্তিনি ইসরায়েলরে এবারের হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল দামেস্কের কাছাকাছি থাকা সামরিক স্থাপনা এক নজরে বিশ্ব সংবাদ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ আজকের নামাজের সময়সূচি ১‌৩ ডিসেম্বর আজকে কোন টিভি চ্যানেলে কোন খেলা যে কোনো চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান

মুজিব শতবর্ষের উপহার: ফরিদপুরে দেড় হাজার গৃহহীন পরিবার পাচ্ছেন জমিসহ আধাপাকা ঘর

মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ফরিদপুরের নয়টি উপজেলাতে এক হাজার চারশত সত্তরটি বাস্তুহারা পরিবারকে ঘর করে দেওয়া হচ্ছে। ২১ সালের জনুয়ারি মাসের মধ্যেই এসব ঘর জমিসহ সুবিধাভোগীদের হাতে তুলে দেয়া হবে। উপকারভোগীদের এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।

মাঠ পর্যায়ে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন এসব ঘর করতে সবমিলিয়ে খরচ হচ্ছে প্রায় ২৫ কোটি ৭২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রতিটি ঘরের জন্য বরাদ্দ ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এই টাকায় তাদের জন্য ২০ ফুট বাই ২২ ফুট প্রস্থের ঘরে রয়েছে দুটি কক্ষ, একটি রান্না ঘর, টয়লেট ও সামনে খোলা বারান্দা।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার ফরিদপুরের সদর উপজেলার মাচ্চর উইনিয়নে নির্মিতব্য এই ঘর নির্মাণ কাজ পরিদর্শনকালে বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসহায় পরিবারের জন্য উপহার স্বরুপ এসকল আশ্রয়স্থল করে দিচ্ছেন। এই কাজ বাস্তবায়নের জন্য উপজেলা পর্য়ায়ের কর্মকর্তাগণ সকাল হতে গভীর রাত পর্যন্ত নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তিন বলেন, উপকারভোগীদের মাঝে এই ঘর প্রাপ্তির খবরে যে আনন্দের ঝিলিক দেখতে পেয়েছি, সেই আনন্দাশ্রু আমাদের আগামীর পথ চলার প্রেরণা হয়ে থাকবে। এসময় ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দীকি সহ কর্মকর্তাগণ উপস্তিত ছিলেন।

ফরিদপুরের সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুম রেজা বলেন, জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের নেতৃত্বে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনারদের (ভূমি) নিবীড় তত্বাবধানে গড়ে উঠেছে আশ্রয়হীন মানুষের এসব স্বপ্নের ঠিকানা “স্বপ্ন নীড়”। স্থানীয় সংসদ সদস্যগণসহ উপজেলা ও ইউপি চেয়ারম্যানগণও এগিয়ে এসেছেন। সরেজমিনে কাজের অগ্রগতি তদারকি করছেন জেলা প্রশাসক এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকগণও।

উপকারভোগীদের একজন রাসেদ খাঁ(৭০) জানান, তাঁর নিজের কোন ঘর নেই। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে গট্টি ই্‌উনিয়নের ঝুনাখালীতে পরের জমিতে পাটখড়ি ও পলিথিন দিয়ে টং ঘর তুলে থাকতেন।এখন এই ঘর পেলে নিজের একটু মাথা গোঁজার ঠাই হবে। একইভাবে এমন অনিশ্চিত উদ্বাস্তু জীবনযাপনের কথা জানালেন একই এলাকার শেখ মোসলেম (৭৫), মো আবুল কালাম (৫৫),   বোয়ালমারী উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের মোলননগরের লাল মিয়ার স্ত্রী সাকিরননেসা (৬৫), নগরকান্দার কোদালিয়া গ্রামের শেখ মোজাম (৬৫), লিপি এবগম(৫৩) সহ আরো অনেকে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সালথা উপজেলার ঠেনঠেনিয়া বাজারে সড়কের পাশে খাস জমিতে একিট মুজিববর্ষ ভিলেজ গড়া হচ্ছে। খবর সংগ্রহে সেখানে গেলে দেখা গেছে, খুব ভোরেই সেখানে কাজের তদারকি করতে চলে এসেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসিব সরকার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফা সুলতানা খান হীরামনি। অসহায় এসব পনিবারের নিরাপদ আশ্রয়স্থল নির্মাণ কাজ যাতে সঠিকভাবে সম্পন্ন হয় এজন্য তারা নিয়মিত তদারকি করছেন বলে জানান মাঠ প্রশাসনের এই দুই কর্মকর্তা।

পাশ্ববর্তী বোয়ালমারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ঝোটন চন্দ্র বলেন, ই্‌উপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ছিন্নমূল ও ভূমিহীন পরিবারের প্রাপ্ত তথ্য তারা স্থানীয় ভূমি অফিস হতে তথ্য যাচাই করে নিশ্চিত হওয়ার পরেই সুবিধাভোগীদের তিলিকা তৈরি করেছেন। আর নির্মাণ কাজ যাতে সঠিকভাবে সম্পন্ন হয় সে জন্য নিয়মিত তদারকি করছেন তারা।

নগরকান্দা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আহসান মাহমুদ রাসেল বলেন, এমন ঘরে পড়ে যাওয়া গৃহকর্তা, স্বামী পরিত্যক্ত নারী, হতদরিদ্র বিধবা কিংবা পরের বাড়ি চেয়ে চিন্তে জীবন চালানো পরিবারগুলোকে এখানে বাছাই করা হয়েছে উপকারভোগী হিসেবে। যাদের নিজের কোর সম্পদ বা জমিজমা নেই।

ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাকিবুর রহমান বলেন, সুবিধাভোগীদের এসব ঘরসহ জমি কবুলিয়াত করে দেওয়া হবে। প্রতিটি পরিবার এতে গড়ে প্রায় ৩ শতাংশ জমি পাবে ঘরসহ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গৃহহীনদের জন্য ফরিদপুরের সদর উপজেলায় ২৯২টি, ভাঙ্গা উপজেলায় ২৫০টি, আলফাডাঙ্গায় ২২০টি, সদরপুরে ১৮৭টি, চরভদ্রাসনে ১৫০টি, মধুখালীতে ১৪৮টি, নগরকান্দায় ১০৫টি, বোয়ালমরীতে ৯২টি ও সালথা উপজেলায় ৩৫টি ঘর নির্শাণ করা হচ্ছে।

Tag :
জনপ্রিয়

বহু মানুষ ও বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের পর আমরা স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে ব্যর্থ হয়েছিলাম

মুজিব শতবর্ষের উপহার: ফরিদপুরে দেড় হাজার গৃহহীন পরিবার পাচ্ছেন জমিসহ আধাপাকা ঘর

Update Time : ০৫:৫৭:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২০

মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ফরিদপুরের নয়টি উপজেলাতে এক হাজার চারশত সত্তরটি বাস্তুহারা পরিবারকে ঘর করে দেওয়া হচ্ছে। ২১ সালের জনুয়ারি মাসের মধ্যেই এসব ঘর জমিসহ সুবিধাভোগীদের হাতে তুলে দেয়া হবে। উপকারভোগীদের এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।

মাঠ পর্যায়ে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন এসব ঘর করতে সবমিলিয়ে খরচ হচ্ছে প্রায় ২৫ কোটি ৭২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রতিটি ঘরের জন্য বরাদ্দ ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এই টাকায় তাদের জন্য ২০ ফুট বাই ২২ ফুট প্রস্থের ঘরে রয়েছে দুটি কক্ষ, একটি রান্না ঘর, টয়লেট ও সামনে খোলা বারান্দা।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার ফরিদপুরের সদর উপজেলার মাচ্চর উইনিয়নে নির্মিতব্য এই ঘর নির্মাণ কাজ পরিদর্শনকালে বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসহায় পরিবারের জন্য উপহার স্বরুপ এসকল আশ্রয়স্থল করে দিচ্ছেন। এই কাজ বাস্তবায়নের জন্য উপজেলা পর্য়ায়ের কর্মকর্তাগণ সকাল হতে গভীর রাত পর্যন্ত নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তিন বলেন, উপকারভোগীদের মাঝে এই ঘর প্রাপ্তির খবরে যে আনন্দের ঝিলিক দেখতে পেয়েছি, সেই আনন্দাশ্রু আমাদের আগামীর পথ চলার প্রেরণা হয়ে থাকবে। এসময় ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দীকি সহ কর্মকর্তাগণ উপস্তিত ছিলেন।

ফরিদপুরের সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুম রেজা বলেন, জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের নেতৃত্বে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনারদের (ভূমি) নিবীড় তত্বাবধানে গড়ে উঠেছে আশ্রয়হীন মানুষের এসব স্বপ্নের ঠিকানা “স্বপ্ন নীড়”। স্থানীয় সংসদ সদস্যগণসহ উপজেলা ও ইউপি চেয়ারম্যানগণও এগিয়ে এসেছেন। সরেজমিনে কাজের অগ্রগতি তদারকি করছেন জেলা প্রশাসক এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকগণও।

উপকারভোগীদের একজন রাসেদ খাঁ(৭০) জানান, তাঁর নিজের কোন ঘর নেই। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে গট্টি ই্‌উনিয়নের ঝুনাখালীতে পরের জমিতে পাটখড়ি ও পলিথিন দিয়ে টং ঘর তুলে থাকতেন।এখন এই ঘর পেলে নিজের একটু মাথা গোঁজার ঠাই হবে। একইভাবে এমন অনিশ্চিত উদ্বাস্তু জীবনযাপনের কথা জানালেন একই এলাকার শেখ মোসলেম (৭৫), মো আবুল কালাম (৫৫),   বোয়ালমারী উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের মোলননগরের লাল মিয়ার স্ত্রী সাকিরননেসা (৬৫), নগরকান্দার কোদালিয়া গ্রামের শেখ মোজাম (৬৫), লিপি এবগম(৫৩) সহ আরো অনেকে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সালথা উপজেলার ঠেনঠেনিয়া বাজারে সড়কের পাশে খাস জমিতে একিট মুজিববর্ষ ভিলেজ গড়া হচ্ছে। খবর সংগ্রহে সেখানে গেলে দেখা গেছে, খুব ভোরেই সেখানে কাজের তদারকি করতে চলে এসেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসিব সরকার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফা সুলতানা খান হীরামনি। অসহায় এসব পনিবারের নিরাপদ আশ্রয়স্থল নির্মাণ কাজ যাতে সঠিকভাবে সম্পন্ন হয় এজন্য তারা নিয়মিত তদারকি করছেন বলে জানান মাঠ প্রশাসনের এই দুই কর্মকর্তা।

পাশ্ববর্তী বোয়ালমারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ঝোটন চন্দ্র বলেন, ই্‌উপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ছিন্নমূল ও ভূমিহীন পরিবারের প্রাপ্ত তথ্য তারা স্থানীয় ভূমি অফিস হতে তথ্য যাচাই করে নিশ্চিত হওয়ার পরেই সুবিধাভোগীদের তিলিকা তৈরি করেছেন। আর নির্মাণ কাজ যাতে সঠিকভাবে সম্পন্ন হয় সে জন্য নিয়মিত তদারকি করছেন তারা।

নগরকান্দা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আহসান মাহমুদ রাসেল বলেন, এমন ঘরে পড়ে যাওয়া গৃহকর্তা, স্বামী পরিত্যক্ত নারী, হতদরিদ্র বিধবা কিংবা পরের বাড়ি চেয়ে চিন্তে জীবন চালানো পরিবারগুলোকে এখানে বাছাই করা হয়েছে উপকারভোগী হিসেবে। যাদের নিজের কোর সম্পদ বা জমিজমা নেই।

ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাকিবুর রহমান বলেন, সুবিধাভোগীদের এসব ঘরসহ জমি কবুলিয়াত করে দেওয়া হবে। প্রতিটি পরিবার এতে গড়ে প্রায় ৩ শতাংশ জমি পাবে ঘরসহ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গৃহহীনদের জন্য ফরিদপুরের সদর উপজেলায় ২৯২টি, ভাঙ্গা উপজেলায় ২৫০টি, আলফাডাঙ্গায় ২২০টি, সদরপুরে ১৮৭টি, চরভদ্রাসনে ১৫০টি, মধুখালীতে ১৪৮টি, নগরকান্দায় ১০৫টি, বোয়ালমরীতে ৯২টি ও সালথা উপজেলায় ৩৫টি ঘর নির্শাণ করা হচ্ছে।