করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ শক্তিশালী না হওয়ায় আগামী ফেব্রুয়ারির ৪ তারিখ থেকে সীমিত পরিসরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষার দায়িত্বে থাকা সরকারের দুই মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার দুই মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকরা ভার্চুয়ালি বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত নেন। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এতে সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্মত হয়। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কীভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে, কোন প্রক্রিয়ায় খোলা হবে সেটি তারা ঠিক করবেন। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন খুব শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে।
আরেকটি সূত্র থেকে জানা যায়, ফেব্রুয়ারি থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলেও ক্লাসের ক্ষেত্রে যাদের পরীক্ষা আছে, তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে ২০২১ সালের এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা প্রাধান্য পাবে। এরপর ধাপে ধাপে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠানো হবে। যাতে ফেব্রুয়ারির ৪ তারিখের মধ্যে এসএসসি ও এইচএসসির ক্লাস শুরু করা যায়।
বৈঠক শেষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কীভাবে খোলা হবে, কোন শ্রেণিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, এসব বিষয়ের একটি বিশদ পরিকল্পনা তৈরি করতে দুই মন্ত্রণালয়ের সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে।
বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, দুই মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও অংশ নেন।
করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে সারাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় গত বছরের প্রাথমিকের সমাপনী, জেএসসি, এইচএসসিও পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। বাতিল করা হয় শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষাও।
জুনে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এসএসসি পরীক্ষা
চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা আগামী জুন মাসে শুরু হতে যাচ্ছে। করোনার মহামারির কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে প্রতিটি বিষয় থেকে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কমিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এখন মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সরকার সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে চলতি বছরের এসএসসি সমমান পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ লক্ষ্যে নবম-দশম শ্রেণির সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করতে প্রতিটি বিষয়ের জন্য দুজন সিনিয়র শিক্ষক, এনসিটিবির একজন বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ মিলে একটি দল গঠন করা হয়। এভাবে প্রতিটি বিষয়ের জন্য তিন সদস্যের একটি করে দল গঠন করে সিলেবাস সংক্ষিপ্তকরণের কাজ করা হয়েছে। এনসিটিবির আরেকটি বিশেষজ্ঞ দল ওই দলগুলোকে পরামর্শ প্রদান, দিকনির্দেশনা ও মনিটরিং করেছে।
এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে চলতি বছরের এসএসসি সমমান পরীক্ষার্থীদের জন্য আমরা একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করেছি। সেটি গত রোববার (১৭ জানুয়ারি) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেটি অনুমোদন দেয়া হলে শিক্ষাবোর্ডগুলো থেকে তা প্রকাশ করা হবে। তার আলোকে এ বছরের এসএসসি পরীক্ষার আয়োজন করা হবে।’
তিনি বলেন, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে প্রতিটি বই থেকে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বিষয়বস্তু কমানো হয়েছে। শিক্ষার্থীরা পরবর্তী ক্লাসে গিয়ে যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটি মাথায় রেখে সিলেবাস কমানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আগের ক্লাসে যা পড়ানো হয়েছে বা পরবর্তী ক্লাসে পাবে সেসব বিষয় বাদ দিয়ে যেগুলো না পড়লে একাদশে গিয়ে বুঝতে সমস্যা হবে সেসব বিষয় রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, তত্ত্বীয় বিষয়গুলো থেকে বিভিন্ন বিষয় বাদ দেয়া হলেও ব্যবহারিক বিষয় থেকে তেমন কিছু বাদ দেয়া হয়নি। তবে তত্ত্বীয় যে বিষয়গুলো বাদ দেয়া হয়েছে তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবহারিকও বাদ পড়বে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, এনসিটিবির তৈরি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস পড়ানো শুরু করতে আগামী ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। শিগগিরই এ সংক্রান্ত ঘোষণা আসতে পারে। ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত সিলেবাস পড়িয়ে একটি নির্বাচনী বা টেস্ট পরীক্ষা নেয়া হবে। জুন থেকে এসএসসি-সমমান পরীক্ষা শুরু করার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহাবুব হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, এসএসসি সমমান পরীক্ষার জন্য এনসিটিবি থেকে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস পেয়েছি। সেটি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেটি প্রকাশ করা হবে। সেটি ক্লাসে পড়িয়ে আগামী জুন থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু করা হতে পারে। এ জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।