ফরিদপুরের সালথায় একটি আহলে হাদিসের মাদ্রাসায় হামলা চালিয়ে ভেঙ্গে চুড়মার করে দিয়েছে কওমী মাদ্রাসার সমর্থকরা।
আজ বুধবার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের কামদিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে । তবে কওমী মাদ্রাসার সমর্থকরা এ হামলা সাথে সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করেছেন।
জানা গেছে ভাওয়াল ইউনিয়নের কামদিয়া গ্রামে আহলে হাদিসের ওই মাদ্রাসাটি স্থাপিত হয় ২০১৯ সালে্ ভিত পাকা দুটি টিনের বড় আকৃতির ঘরে মাদ্রাসাটির কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এ মাদ্রাসাটিতে পুরুষ ও নারীরা আবাসিকভাবে বসবাস করে।
এলাকাবাসী, জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ সুত্রে জানা যায়, এ মাদ্রাসাটি ভেঙে জ্বালিয়ে দেওয়া হবে বলে স্থানীয় কওমী মাদ্রাসার পক্ষে থেকে গত মঙ্গলবার এলাকায় মাইকিং করা হয়। এতে আহলে হাদিস সমর্থকরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ইউএনও ও ওসিকে মঙ্গলবারই বিষয়টি জানান। পরে ইউএনও উভয় পক্ষকে তার কার্যালয়ে ডেকে নেন। ওই সভায় তিনি বুধবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলায় দুই পক্ষকে নিয়ে সভা করে বিরোধের সমাধানের আশ্বাস দেন। ওই সময় পর্যন্ত দুই পক্ষকে শান্তিপুর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার পরামর্শ দেন। ওই রাতে আহলে হাদিস মাদ্রাসায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
আহলে হাদিস মাদ্রাসার পরিচালক ইলিয়াস হোসেন জানান, আজ বুধবার সকালে দুই-তিনশ’ লোক আহলে হাদিস মাদ্রাসায় হামলা চালায়। ওই সময় মাদ্রাসায় ৩৫ জন নিবাসী ও চারজন শিক্ষক ছিলেন। হামলাকারীদের ভয়ে তারা মাদ্রাসা ছেড়ে পালিয়ে যান। এরপর হামলাকারীরা মাদ্রাসার দুটি ঘর ভাঙচুর করে। এ সময় ১৪টি সিলিং ফ্যান ও একটি সৌর বিদ্যুতের সোলারসহ নিবাসীদের যাবতীয় মুল্যবান দ্রব্য সামগ্রী লুটপাট করে নিয়ে যায় তারা। এর ফলে প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
সালথা হেফাজতে ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ঝিনাতুল ইসলাম বলেন, ইউএনওর প্রতিশ্রæতি মতো আজ বুধবার ভোরেই তিনি উপজেলা হেফাজতের সভাপতি নিজাম উদ্দীনসহ কওমী মাদ্রাসার নেতারা উপজেলায় চলে আসি। পরে জানতে পারি কওমী মাদ্রাসার এক শিক্ষার্থী হাসিবুল ইসলামকে আহলে হাদিসের সমর্থকরা মারধর করেছে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে সাধারণ মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে আহলে হাদিস মাদ্রাসায় এ হামলা চালিয়েছে। তিনি দাবি করেন, এ হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় কওমীপন্থীদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
সালথা থানার ওসি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, কওমীপন্থী শিক্ষক ও আহলে হাদিসের শিক্ষকদের নিয়ে এলাকায় বিরোধ চলছিল। এ বিরোধ নিরসনে বুধবার সকাল ১০ টায় উভয় পক্ষকে নিয়ে উপজেলা পরিষদে আলোচনার কথা ছিল। কিন্তু কওমীপন্থী একটি অংশ উপজেলায় এলেও অপর অংশ ওই মাদ্রাসায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। তিনি বলেন, কারা এ হামলার সাথে জড়িত তাদের শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মোহাম্মাদ হাসিব সরকার বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছি। তিনি বলেন, ওই মাদ্রাসায় যে ৩৫ জন নিবাসী ছিল তাদের সকলকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি কারা এ হামলার সাথে জড়িত ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।