করোনা একটি ভাইরাস। এটি সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকে বের হওয়া ড্রপলেটের মাধ্যমে একজনের কাছ থেকে আরেকজনে ছড়ায়। অন্যান্য ভাইরাসের থেকে এটি বেশি বিপদজনক। কারণ এটি খুব দ্রুততার সঙ্গে এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং ফুসফুসকে আক্রান্ত করে খুব দ্রুত এর কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
কেন বাচ্চাদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের উপসর্গ কম হয়?
বাচ্চাদের শ্বাসনালিতে করোনাভাইরাস লাগার যে রিসেপটর থাকে সেটির ঘনত্ব কম থাকে। সেই সঙ্গে বাচ্চারা যেহেতু সবসময় ভিন্ন ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত হয়ে থাকে সেহেতু তাদের শরীরে অ্যান্টিভাইরাল অ্যান্টিবডির পরিমাণ বেশি থাকে যা তাদের করোনাভাইরাস থেকে অনেকাংশে রক্ষা করে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ হলে বাচ্চাদের কী কী সমস্যা হতে পারে?
করোনাভাইরাস বাচ্চার ফুসফুসকে আক্রান্ত করে যার জন্য নিউমোনিয়া হয়। এছাড়া করোনাভাইরাস সংক্রমণে বাচ্চাদের শরীরের অন্যান্য অঙ্গও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেমন করোনাভাইরাস বাচ্চার মস্তিষ্ক আক্রান্ত করতে পারে যার ফলে খিঁচুনি হয়, বাচ্চার কিডনি আক্রান্ত করে একিউট কিডনি ইনজুরি করে, পাশাপাশি লিভারকে আক্রান্ত করে জন্ডিস ঘটাতে পারে। এছাড়া বাচ্চার হার্টকে আক্রান্ত করলে হার্টের কার্যক্ষমতা কমে গিয়ে হার্ট ফেইলিউর হয়। করোনাভাইরাস বাচ্চার রক্তনালিকে আক্রান্ত করে সেই সঙ্গে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়, ফলে স্ট্রোক হয়ে বাচ্চা মারা যেতে পারে।
করণীয়
বাচ্চাকে প্রচুর পরিমাণে তরল, ডিম, দুধ, মাছ, মাংস খাওয়াতে হবে।
লেবুর জুস, ফলের জুস ইত্যাদি খাওয়াতে হবে।
আক্রান্ত বাচ্চাকে অন্য সদস্যদের থেকে আলাদা রাখতে হবে।
অল্পমাত্রার জ্বর, সর্দি, কাশিতে বাচ্চাকে ডাক্তারের চেম্বারে না নিয়ে চেষ্টা করতে হবে ঘরে রেখেই চিকিৎসা দিতে। প্রয়োজনে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
বাচ্চাকে একটু পরপর গরম পানি, আদা চা, লেবু চা ও মধু খাওয়ানো যেতে পারে।
বাচ্চার ঘরে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
বাচ্চাকে করোনা আক্রান্তের সময়ে মাল্টিভিটামিন, ভিটামিন সি এবং ডি খাওয়াতে হবে।
বাচ্চার উচ্চমাত্রায় জ্বর এলে, ঘন ঘন শ্বাস নিলে, খিঁচুনি হলে, অতিরিক্ত বমি বা পাতলা পায়খানা হলে, শরীরের কোথাও থেকে রক্তপাত হলে, প্রস্রাব কমে গেলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
শিশুর যত্ন কীভাবে নেবেন?
করোনাকালীন প্রতিটি শিশুকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যেমন দুধ, ডিম, মাছ, মাংস খাওয়াতে হবে। সেই সঙ্গে প্রচুর ফলমূল ও সবজি খাওয়াতে হবে।
বাচ্চাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। প্রতিদিন গোসল করাতে হবে।
বাচ্চাকে দৌড়াদৌড়ি এবং খেলাধুলার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আসে, এতে করে ভিটামিন ডি উৎপাদন হবে যা বাচ্চার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেবে।
বাচ্চাকে বারবার হাত ধোয়ানোর অভ্যাস করাতে হবে এবং বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার করাতে হবে।সূত্র: দেশরুপান্তর