করোনা শনাক্তের কিট, রি-এজেন্ট জালিয়াতির মাধ্যমে নতুন করে মেয়াদ বাড়িয়ে ও নকল কিট বিক্রির অভিযোগে তিন প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে মূলহোতাসহ ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এই সময় তাদের কাছ থেকে প্রায় চার ট্রাক অনুমোদনহীন, মেয়াদোত্তীর্ণ ও নকল টেস্ট কিট, রি-এজেন্ট জব্দ করে র্যাব। যার বাজারমূল্য কয়েক কোটি টাকা বলে জানিয়েছে র্যাব।
অভিযানে জব্দকৃত মালামাল তল্লাশী করে এবং গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে প্রাথমিক তথ্যে র্যাব জানতে পারে, জব্দকৃত এসব কিটের মধ্যে ছিলো করোনা, ক্যানসার, এইডস, জন্ডিস, ডায়াবেটিস ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগের টেস্ট কিট। যা নকল করে এবং মেয়াদোত্তীর্ণ মালামালে মেয়াদ বাড়িয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করতো তারা।
শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুর বসিলায় র্যাব-২ এর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-২ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- বায়োল্যাব ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের স্বত্ত্বাধিকারী মো. শামীম মোল্লা (৪০), ব্যবস্থাপক মো. শহীদুল আলম (৪২), প্রধান প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল বাকী ছাব্বির (২৪), অফিস সহকারী মো. জিয়াউর রহমান (৩৫), হিসাবরক্ষক মো. সুমন (৩৫), অফিস ক্লার্ক ও মার্কেটিং অফিসার জাহিদুল আমিন পুলক (২৭), সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার মো. সোহেল রানা (২৮), এক্সন টেকনোলজিস্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের এমডি মো. মাহমুদুল হাসান (৪০), হাইটেক হেলথ কেয়ার লিমিটেডের এমডি এস এম মোজফা কামাল (৪৮)।
র্যাব-২ এর সিও লে. কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার বলেন, র্যাব গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে কিছু অসাধু প্রতিষ্ঠান অননুমোদিত মেডিকেল ডিভাইস আমদানিকরণ, নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ করোনার টেস্টিং কিট ও রি-এজেন্টসহ অন্যান্য রোগ নির্ণয়ে ব্যবহৃত বিভিন্ন রোগের টেস্টিং কিট ও রি-এজেন্ট মজুদ ও বাজারজাত করে আসছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) বিকেল থেকে শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) সকাল পর্যন্ত র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের প্রতিনিধিদের সহযোগিতায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়া এলাকায় অবস্থিত বায়োল্যাব ইন্টারন্যাশনাল ও তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বনানী এলাকায় অবস্থিত এক্সন টেকনোলজি এন্ড সার্ভিস লি. এবং হাইটেক হেলথকেয়ার লি. নামের তিনটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হয়।
তিনি বলেন, অভিযানে দেখা যায় ওই তিন প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বিশেষ ধরনের প্রিন্টিং মেশিনের সাহায্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ও মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার খুব অল্প সময় রয়েছে, এমন বিভিন্ন টেস্ট কিট ও রি-এজেন্টের মেয়াদ বাড়ানোর কাজ চলছে। পরবর্তীতে তাদের ওয়্যারহাউজগুলোতে তল্লাশীর সময় বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। সেখানে মজুদকৃত বেশিরভাগ মেডিকেল ডিভাইস অনুমোদনহীন, প্রায় সকল প্রকার টেস্ট কিট এবং রি-এজেন্ট ব্যবহারের মেয়াদোত্তীর্ণ অথবা দ্রুতই মেয়াদোত্তীর্ণ হবে।
তিনি বলেন, এসব কিটের মধ্যে এইডস রোগ নির্ণয়ের জন্য নির্ধারিত প্যাথলজিক্যাল টেস্ট কিট ও রি-এজেন্টও রয়েছে। যা তাদের সংরক্ষণে মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় পাওয়া যায়।
গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে তিনি আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে এই তিন প্রতিষ্ঠানের গ্রেফতারকৃতরা জানায়, ‘২০১০ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানগুলো একাধিক নামে পারস্পরিক যোগসাজশে, অবৈধভাবে ও অসৎ পন্থায় আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে কোনও অনুমোদন ছাড়াই মানহীন ও স্বল্প মেয়াদী টেস্ট কিট ও রি-এজেন্ট বিদেশ থেকে আমদানি, সংরক্ষণ ও দেশব্যাপী বাজারজাতকরণ করতো। যা সরবরাহ করার পর্যায়েই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যেতো।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে লে. কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার বলেন, ‘তারা বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এই কিটগুলো সরবরাহ করতো। তদন্তে প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম বের হয়ে আসবে। বিদেশ থেকে আমদানি-রফতানি চ্যানেলের মাধ্যমে তারা এসব সামগ্রী আনতো। এছাড়া জার্মানি ও ইউরোপের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকেও এসব সামগ্রী আনতো। প্রতিষ্ঠানগুলো একটিও স্বনামধন্য নয়। তাদের এই কিট ও মেডিকেল সরঞ্জাম আমদানির কোনো অনুমোদন ছিলো না।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের এ ধরণের কার্যক্রমে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোনো অনুমোদন ছিলো না। এমনকি স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে এই ধরণের কার্যক্রম পরিচালনায় অনুমোদন নেই বলে জানিয়েছে গ্রেফতারকৃতরাও।