ঢাকা ০৮:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
ভারতীয় আধিপত্য তাড়াইয়া আমেরিকা ওয়াশিংটনের আধিপত্যের শিকার হতে চাই না- জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব পাকিস্তানের মানচিত্রে অবস্থান ধরে রাখতে রাষ্ট্রীয় মদদের সন্ত্রাসবাদ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে: ভারতীয় সেনাপ্রধান ইসরায়েল সেনাবাহিনীকে গাজায় অভিযান সীমিত করার নির্দেশ দিয়েছে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকার ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাব নিয়ে কাজ করতে রাজি ইসরায়েল জার্মানির আকাশে গত ২৪ ঘণ্টায় একাধিক ড্রোন; বন্ধ হলো মিউনিখ বিমানবন্দর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শান্তি প্রস্তাবে জবাব দিয়েছে হামাস, ইসরায়েলকে বোমাবর্ষণ থামাতে ট্রাম্পের আহ্বান ট্রাম্পের ২০ দফা গাজা পরিকল্পনার বিষয়ে জবাব দিয়েছে হামাস এক নজরে বিশ্ব সংবাদ: ৩ অক্টোবর ২০২৫ আজকে কোন টিভি চ্যানেলে কোন খেলা আজকের নামাজের সময়সূচি: ০৪ অক্টোবর

মুনিয়া রহস্যজনক মৃত্যু: ফরেনসিক প্রতিবেদন পেলেই আনভীরকে জিজ্ঞাসাবাদ

রাজধানীর গুলশানের অভিজাত ফ্ল্যাটে কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার (২১) রহস্যজনক মৃত্যুর কারণ শতভাগ নিশ্চিত হতে ময়নাতদন্ত ও ডিএনএসহ ফরেনসিক পরীক্ষার কাজ শেষ হচ্ছে। ভিসেরা রিপোর্ট পেতে একট বিলম্ব হলেও ওই পরীক্ষাগুলোর প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হচ্ছে।

এরপর সেগুলো মামলার চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হবে। প্রতিবেদনগুলো হাতে পেলেই আলোচিত এ প্রধান আসামি ও ভিকটিম মুনিয়ার প্রেমিক বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে পুলিশ।

পাশাপাশি মুনিয়া গুলশানের ফ্ল্যাটে অবস্থান করার তথ্য আনভীরের পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয়া কথিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসাকেও জেরা করতে পারে পুলিশ। এ তথ্য জানিয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, মুনিয়ার সঙ্গে বসুন্ধরা এমডি আনভীরের পরকীয়া প্রেম, মোহ কেটে যাওয়ার পর পর শেষ দিকে প্রতারণা, অপবাদ দিতে টাকা চুরির নাটক, বিয়ে না করে মুনিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঢেলে দেয়া-এগুলো প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।

ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা নানা আলামত ঘেটে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। মুনিয়ার ডায়েরি ও মোবাইল থেকে মিলেছে তাদের গভীর সম্পর্ক ও প্রতারণা ও ভয়ভীতি দেখানোর নানা তথ্য। এখন অপেক্ষা শুধু এটি হত্যাকাণ্ড নাকি আত্মহত্যা সেটি নিশ্চিত হওয়া। আত্মহত্যার হলেও যে আনভীরের বড় ধরনের দায় রয়েছে সেটিও অনেকটা নিশ্চিত।

তবে মুনিয়ার পরিবার এখনো দাবি করছে, এটি হত্যাকাণ্ড। লাশ দেখে আমাদের তাই মনে হয়েছে। নিরপেক্ষ তদন্তে সেটিই বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছি। আনভীরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অনেক অজানা কাহিনী বেরিয়ে আসবে। আমরা আসামির কঠিন বিচার চেয়ে প্রয়োজনে একাধিক সংবাদ সম্মেলন করব। এতিম মুনিয়ার এমন মৃত্যুর সুবিচারের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।

পুলিশ সূত্র জানায়, গুলশানের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ হওয়া দুটি স্মার্টফোনে বসুন্ধরা এমডি আনভীরের সঙ্গে মুনিয়ার অসংখ্য ছবি রয়েছে। বেশ কয়েকটি ছবিতে মুনিয়া এবং আনভীরকে হাতে হাত রেখে এবং কিছু ছবিতে কাঁধে হাত দিয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখা গেছে। মুনিয়ার ফোনে পাওয়া গেছে বাংলালিংক অপারেটরের একটি নম্বরের অসংখ্য কল রেকর্ড। ওই নম্বরটি এমডি আনভীরের বলে নিশ্চিত করেছেন বসুন্ধরা গ্রুপের একাধিক কর্মকর্তা। শেষ দিকে কথোপকথনের সবগুলোতেই তাদের মধ্যে ঝগড়াবিবাদ ও হুমকি-ধমকি চলছিল।

আত্মহত্যার’ ঘটনায় প্ররোচনার অভিযোগে বসুন্ধরা এমডি আনভীরের বিরুদ্ধে গুলশান মামলা করেন মুনিয়ার বোন নুসরাত। এতে তিনি অভিযোগ করেন, এক বন্ধুর মাধ্যমে পরিচয়ের পর ২০১৯ সালে আনভীর মুনিয়াকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বনানীতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আনভীরের পরিবার মুনিয়ার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্কের কথা জানতে পারে। তখন আমার বোনকে (মুনিয়াকে) আনভীরের জীবন থেকে সরে যাওয়ার জন্য হুমকি দেন তার মা। নুসরাত পুলিশকে জানিয়েছে, এ ঘটনার পর আনভীর মুনিয়াকে কৌশলে কুমিল্লায় পাঠিয়ে দেন ও পরে বিয়ে করবেন বলে আশ্বাস দেন।

গত ১ মার্চ গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাসার বি/৩ ফ্যাটটি ভাড়া নেন আনভীর। ১ মার্চ থেকে মুনিয়া সেই ফ্ল্যাটেই ছিলেন ও আনভীর মাঝে মাঝে ওই ফ্ল্যাটে আসা যাওয়া করতেন। তারা স্বামী-স্ত্রীর মতো বসবাস করতেন। ১ লাখ ১১ হাজার টাকার ওই অভিজাত ফ্লাটের ভাড়া দিতেন আনভীর। এর আগে গত ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাসার তৃতীয় তলার একটি অভিজাত ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

Tag :
জনপ্রিয়

ভারতীয় আধিপত্য তাড়াইয়া আমেরিকা ওয়াশিংটনের আধিপত্যের শিকার হতে চাই না- জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব

মুনিয়া রহস্যজনক মৃত্যু: ফরেনসিক প্রতিবেদন পেলেই আনভীরকে জিজ্ঞাসাবাদ

Update Time : ১০:১০:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ মে ২০২১

রাজধানীর গুলশানের অভিজাত ফ্ল্যাটে কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার (২১) রহস্যজনক মৃত্যুর কারণ শতভাগ নিশ্চিত হতে ময়নাতদন্ত ও ডিএনএসহ ফরেনসিক পরীক্ষার কাজ শেষ হচ্ছে। ভিসেরা রিপোর্ট পেতে একট বিলম্ব হলেও ওই পরীক্ষাগুলোর প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হচ্ছে।

এরপর সেগুলো মামলার চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হবে। প্রতিবেদনগুলো হাতে পেলেই আলোচিত এ প্রধান আসামি ও ভিকটিম মুনিয়ার প্রেমিক বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে পুলিশ।

পাশাপাশি মুনিয়া গুলশানের ফ্ল্যাটে অবস্থান করার তথ্য আনভীরের পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয়া কথিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসাকেও জেরা করতে পারে পুলিশ। এ তথ্য জানিয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, মুনিয়ার সঙ্গে বসুন্ধরা এমডি আনভীরের পরকীয়া প্রেম, মোহ কেটে যাওয়ার পর পর শেষ দিকে প্রতারণা, অপবাদ দিতে টাকা চুরির নাটক, বিয়ে না করে মুনিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঢেলে দেয়া-এগুলো প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।

ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা নানা আলামত ঘেটে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। মুনিয়ার ডায়েরি ও মোবাইল থেকে মিলেছে তাদের গভীর সম্পর্ক ও প্রতারণা ও ভয়ভীতি দেখানোর নানা তথ্য। এখন অপেক্ষা শুধু এটি হত্যাকাণ্ড নাকি আত্মহত্যা সেটি নিশ্চিত হওয়া। আত্মহত্যার হলেও যে আনভীরের বড় ধরনের দায় রয়েছে সেটিও অনেকটা নিশ্চিত।

তবে মুনিয়ার পরিবার এখনো দাবি করছে, এটি হত্যাকাণ্ড। লাশ দেখে আমাদের তাই মনে হয়েছে। নিরপেক্ষ তদন্তে সেটিই বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছি। আনভীরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অনেক অজানা কাহিনী বেরিয়ে আসবে। আমরা আসামির কঠিন বিচার চেয়ে প্রয়োজনে একাধিক সংবাদ সম্মেলন করব। এতিম মুনিয়ার এমন মৃত্যুর সুবিচারের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।

পুলিশ সূত্র জানায়, গুলশানের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ হওয়া দুটি স্মার্টফোনে বসুন্ধরা এমডি আনভীরের সঙ্গে মুনিয়ার অসংখ্য ছবি রয়েছে। বেশ কয়েকটি ছবিতে মুনিয়া এবং আনভীরকে হাতে হাত রেখে এবং কিছু ছবিতে কাঁধে হাত দিয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখা গেছে। মুনিয়ার ফোনে পাওয়া গেছে বাংলালিংক অপারেটরের একটি নম্বরের অসংখ্য কল রেকর্ড। ওই নম্বরটি এমডি আনভীরের বলে নিশ্চিত করেছেন বসুন্ধরা গ্রুপের একাধিক কর্মকর্তা। শেষ দিকে কথোপকথনের সবগুলোতেই তাদের মধ্যে ঝগড়াবিবাদ ও হুমকি-ধমকি চলছিল।

আত্মহত্যার’ ঘটনায় প্ররোচনার অভিযোগে বসুন্ধরা এমডি আনভীরের বিরুদ্ধে গুলশান মামলা করেন মুনিয়ার বোন নুসরাত। এতে তিনি অভিযোগ করেন, এক বন্ধুর মাধ্যমে পরিচয়ের পর ২০১৯ সালে আনভীর মুনিয়াকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বনানীতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আনভীরের পরিবার মুনিয়ার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্কের কথা জানতে পারে। তখন আমার বোনকে (মুনিয়াকে) আনভীরের জীবন থেকে সরে যাওয়ার জন্য হুমকি দেন তার মা। নুসরাত পুলিশকে জানিয়েছে, এ ঘটনার পর আনভীর মুনিয়াকে কৌশলে কুমিল্লায় পাঠিয়ে দেন ও পরে বিয়ে করবেন বলে আশ্বাস দেন।

গত ১ মার্চ গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাসার বি/৩ ফ্যাটটি ভাড়া নেন আনভীর। ১ মার্চ থেকে মুনিয়া সেই ফ্ল্যাটেই ছিলেন ও আনভীর মাঝে মাঝে ওই ফ্ল্যাটে আসা যাওয়া করতেন। তারা স্বামী-স্ত্রীর মতো বসবাস করতেন। ১ লাখ ১১ হাজার টাকার ওই অভিজাত ফ্লাটের ভাড়া দিতেন আনভীর। এর আগে গত ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাসার তৃতীয় তলার একটি অভিজাত ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।