শরীর সুস্থ রাখতে ফলের গুরুত্ব অপরিসীম। ওজন কমানো থেকে এনার্জি বাড়ানো পর্যন্ত ডায়েট চার্টে সবার উপরে থাকে ফল। তবে তার থেকেও যে বেশি উপকারী ফলের খোসা সে কথা অনেকের অজানা।
কলাই একমাত্র ফল যেটা পৃথিবীর সব দেশে পাওয়া যায়। স্বাদের কারণেই বিশ্বজুড়ে এটি জনপ্রিয় খাবার। কিন্তু এই কলা খাওয়ার সময় বেশির ভাগ মানুষ খোসা ফেলে দেন। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, কলার থেকে বেশি উপকারী কলার খোসা।
চিকিৎসকরা সবসময়ই বলে থাকেন, কলার মধ্যে থাকা ভিটামিন বি-৬, বি-১২, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম হজমে সাহায্য করে। কলায় থাকা ফাইবার পেট পরিষ্কার রাখে। কলা যেভাবেই খাওয়া হোক না কেন খোসাটি যায় ডাস্টবিনে।
তবে গবেষকরা বলছেন, কলার খোসাতেই থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ। যা শুধু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেনা, বরং যেকোনো ধরনের সংক্রমণ রুখতেও প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে। খোসার মধ্যে থাকা লুটিন নামক পদার্থ দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। এছাড়া কলার খোসায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। পাশাপাশি শরীরে রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে কলার খোসা।
সবুজ না হলুদ, কোন খোসা বেশি উপকারী
জাপানের এক গবেষণায় দেখা গেছে সবুজ খোসার থেকে বেশি উপকারী হলুদ খোসা। এই খোসা রক্তে শ্বেতকণিকার পরিমাণ ঠিক রেখে ক্যানসার মোকাবিলায় ভূমিকা রাখে। সবুজ খোসার ক্ষেত্রে ১০ মিনিট খোসা সেদ্ধ করে খেলে উপকার পাওয়া যায়। সবুজ খোসার মধ্যে উপস্থিত অ্যামাইনো অ্যাসিড ট্রিপ্টোফ্যানের কারণে রাতে ভাল ঘুম হয়। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে সবুজ খোসার মধ্যে থাকা সিরোটোনিন অবসাদ দূর করতেও সক্ষম। সেই সাথে ডোপামিনের সাহায্যে কিডনিতে রক্ত চলাচল ভাল হয়।
যেভাবে খাবেন কলার খোসা
অনেক রকমভাবে কলার খোসা খাওয়া যায়। এশিয়া ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপগুলিতে কলার শাঁস ও খোসা প্রায় একসাথেই খাওয়া হয়। এছাড়া, বানানা পিল টি বা বানানা পিল স্মুদি উইথ আইসক্রিমও স্বাস্থ্য সচেতনদের কাছে বেশি জনপ্রিয়। কেউ কাঁচা খোসা খেতে পছন্দ করেন। আবার অনেকে সেদ্ধ করে খেতে পছন্দ করেন।
কলার খোসার উপকারিতা
» দাঁত সাদা করতে কলার খোসা যে কার্যকর তা অনেকেই জানেন। খোসার ভেতর দিকটা দাঁতে ঘষতে থাকুন। দিন কয়েক এই পদ্ধতি অনুসরণ করলেই আপনার দাঁতের হলদেটে ভাব চলে যাবে। প্রতিদিন পাঁচ-দশ মিনিট করে ঘষুন। তারপর পানি দিয়ে কুলকুচি করে পানিটা বাইরে ফেলে দিন। বা ব্রাশও করে নিতেন পারেন। কয়েকদিনেই এই প্রক্রিয়ায় দাঁত মাজলে তা দাঁতকে প্রাকৃতিক উপায়ে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে৷
» অধিকাংশ মানুষের সমস্যা হল আঁচিল। ছোট হোক বা বড়, আঁচিল দূর করার চেষ্টা সকলেই করেন। তার ওপর মুখে আঁচিল হলে তো আরও বিরক্তিকর। খোসার ভেতরটা আঁচিলের ওপর কিছুক্ষণ চেপে রাখুন। সপ্তাহখানেক ব্যবহার করলেই আপনার আঁচিল আপনা থেকেই শুকিয়ে পড়ে যাবে। তবে খেয়াল রাখবেন সাতদিনের মাথায় আঁচিল শুকিয়ে না পড়লে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
» মশা, ছারপোকা বা পোকামাকড়ের কামড়ের ফলে ত্বকে এক ধরনে জ্বালা বা চুলকানি হয়। এই জ্বালা বা চুলকানি থেকে তাৎক্ষণিক রক্ষা পেতে চাইলে কলার খোসার ভিতরের দিক ওই স্থানে ঘষুন। দেখবেন জ্বলুনি বা চুলকানি একদমই কমে গিয়েছে।
» সিডি, ডিভিডির ওপর স্ক্র্যাচ পড়ে গেলে তা দূর করুন কলার খোসা দিয়ে। স্ক্র্যাচের কারণে সিডি বা ডিভিডি খারাপ হয়ে যায়, ভিডিও কিংবা অডিও আটকে যায়। সেই সমস্যার সমাধান করবে কলার খোসা। কলার খোসাটির ভেতরটা সিডি, ডিভিডির ওপর ভালো করে ঘষে নিনি। এর ফলে স্ক্র্যাচ তো চলে যাবেই সঙ্গে ভিডিও অডিও পরিষ্কার চলবে।
» শুধু তাই নয়, টাইট পোশাক পরার ফলে শরীরে কোথাও দাগ পড়লে বা ব়্যাশ পড়লে কলার ঘোসা ঘষলে এই সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব৷
» এছাড়া শুধু শরীর বা আমাদের ত্বক নয়, জুতোও পালিশ করা হয়ে থাকে অনেক সময় এই খোসার সাহায্যে৷ ময়লা জুতা চকচকে করে তুলতে সাহায্য করে কলার খোসা। জুতা পালিশ দিয়েও অনেক সময় জুতা পরিষ্কার হয় না। সেই জুতাই নিমেষে চকচকে করে তুলবে কলার খোসা। পাকা কলার খোসার ভেতরটা জুতার ওপর কয়েক মিনিট ঘষুন। তারপর একটা কাপড়ের টুকরো দিয়ে মুছে নিন। দেখবেন জুতা চকচকে হয়ে গেছে।
» কলার খোসা প্রচুর পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ যা হজমের পক্ষেও সহায়তা করতে পারে৷ তাই এই খোসা ফেলে না দিয়ে তা ব্যবহার করে প্রচুর উপকার পেতে পারেন৷ কাঁচা কলা খাওয়া হয় সবজি হিসেবে। এর ফেলে দেয়া খোসাও খাওয়া যায় খাবার হিসেবে। কাঁচা কলার খোসার উপরের আঁশ ফেলে দিয়ে কুচি করে নিন। এরপর এটা ভাঁপিয়ে নিন। এর সাথে শুকনো মরিচ ভাজা, পেঁয়াজ, রসুন ও সরিষার তেল দিয়ে বেটে নিন। হয়ে গেল চমৎকার ভর্তা। চাইলে এর সাথে ছোট চিংড়ি মাছও ভেজে যোগ করতে পারেন।
» কলার খোসায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম , ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম আছে। এই তিনটি খাদ্য উপাদানই গাছের জন্য খুব দরকারি। কলার খোসাই আমাদের ছাদ বাগানের গাছ গুলোর জন্য বিভিন্ন খাদ্য উপাদান সরবরাহ করতে পারে। যা হবে আপনার গাছের জন্য সম্পূর্ণ অর্গানিক সার বা খাবার। প্রথমে কলার খোসাগুলোকে টুকরো টুকরো করে কেটে নিন। তারপর খোসার টুকরোগুলোকে একটি ঢাকনা যুক্ত কন্টেইনার বা বালতির মধ্যে পানি দিয়ে তিন (৩) দিন ভিজিয়ে রাখুন। তাতে খোসার খাদ্য উপাদান গুলো পানিতে দ্রবীভূত হবে। তিন দিন পর ভিজিয়ে রাখা কলার খোসার পানিটি ঘোলাটে খয়রি কালার দেখা যাবে। তিন দিন পর ই এই দ্রবণ টি ব্যাবহার উপযোগী হয়ে যায়।