রাজধানীর বারিধারা ও মোহাম্মদপুরের বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, ইয়াবা ও সিসাসহ গ্রেপ্তার মডেল মরিয়ম আক্তার মৌ ও ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসার তিনদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
সোমবার এই দুই মডেলকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মোহাম্মদপুর থানায় মাদক আইনে করা মামলায় মৌকে ১০ দিন ও গুলশান থানায় দায়ের করা মাদক মামলায় পিয়াসার ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করা হয়।
শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মো. আশেক ইমাম দুজনের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গতকাল রোববার (১ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে প্রথমে রাজধানীর বারিধারায় মডেল পিয়াসার বাসায় অভিযান শুরু করে পুলিশ। পরে রাত পৌনে ১২টার দিকে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়।
পরে পিয়াসার দেয়া তথ্যে আরেক মডেল মরিয়ম আক্তার মৌয়ের রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের বাসায় অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশ। তার বাসা থেকেও বিপুল পরিমাণ মদ উদ্ধার করা হয়। পরে রাত ১টার দিকে মৌকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকেও ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয় বলে জানায় পুলিশ।
তাদের যত কীর্তিকলাপ
পিয়াসা ও মৌ মডেল হিসেবে পরিচিত হলেও মিডিয়ায় তাদের তেমন কোনও কাজই আলোচনায় আসেনি। মডেল বা অভিনেত্রী হিসেবে এ অঙ্গনে সফলতা পাননি। তবে বিলাসী জীবনযাপন করতেন তারা। নিজেদের পরিচয় দিতেন মডেল হিসেবে। আর এই মডেল পরিচয়ের অন্তরালে মদ, ইয়াবাসহ নানান নেশাদ্রব্যের পসরা সাজিয়ে পার্টি করতেন তারা। আর এসব পার্টিতে আমন্ত্রণ জানাতেন সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি ও ধনী পরিবারের সন্তানদের। ফ্ল্যাটে ডেকে নিয়ে তাদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ হতেন। সেসব দৃশ্য কৌশলে ধারণ করা হতো গোপন ক্যামেরায়। আর ওইসব ছবি, ভিডিওকে পুঁজি করে দিনের পর দিন ব্ল্যাকমেইল করতেন তাদের। পিয়াসা ও মৌ এভাবে বছরের পর বছর ধরে বহু মানুষকে পথে বসিয়েছেন বলে পুলিশের একাধিক সূত্র থেকে বলা হয়েছে।
পিয়াসার মতো মৌ এত আলোচিত ঘটনায় ছিলেন না ঠিকই, তবে তারা একই চক্রের সদস্য বলে জানিয়েছেন পুলিশ। তারা রাতের রানী বলেই সুপরিচিত। একজনের ঠিকানা বারিধারা, অন্যজনের বসতি মিরপুর রোড সংলগ্ন ২২/৯ বাবর রোডের একটি বাসার নিচতলায়। নিজের বাসার ভেতরে ড্রয়িং রুমের পাশেই একটি মিনি বার সাজিয়ে রেখেছিলেন মৌ।
গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি আলোচিত ঘটনায় উঠে এসেছে পিয়াসার নাম। ২০১৭ সালে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর ধর্ষণকাণ্ডের মূল হোতা হিসেবে স্বামী সাফাতের সঙ্গে আলোচনায় উঠে আসেন পিয়াসা। যদিও উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের জন্য পরবর্তীতে তাকে ডিভোর্স দেন সাফাত।
২০১৯ সালে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিম চাঁদা দাবির অভিযোগে সাবেক পুত্রবধূ পিয়াসার বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পান পিয়াসা। এখানেই শেষ নয়, তিনি তার সাবেক শ্বশুরের বিরুদ্ধে মামলাও করেন। সেখানে নির্যাতন, হত্যার হুমকি ও গর্ভপাতের চেষ্টার অভিযোগ করেন পিয়াসা। যদিও পরবর্তীতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের পরিদর্শক মো. মজিবুর রহমান আদালতে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে পিয়াসার অভিযোগ মিথ্যা বলে উল্লেখ করেন।
কয়েক মাস আগে রাজধানীর গুলশানের অভিজাত ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান মুনিয়া নামের এক তরুণীর লাশ উদ্ধারের পর যে মামলা হয়েছিল তাতেও পিয়াসার নাম ছিল।