দেশে ফাইভ জি নেটওয়ার্কের যাত্রা শুরু হচ্ছে। তবে এটি সম্পূর্ণ পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হচ্ছে। শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সচিবালয়সহ ছয়টি এলাকায় সীমিত পরিসরে ফাইভ জি নেটওয়ার্ক পাওয়া যাবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে আরও একধাপ অগ্রগতি হলো। রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে রোববার (১২ ডিসেম্বর) রাতে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে ফাইভ-জি উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসে’ ফাইভ-জি যুগে প্রবেশ করল দেশ।
ফাইভ-জি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শিগগিরই বাণিজ্যিকভাবে দেশে ফাইভ-জি সেবা চালু করা হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ফাইভ-জি যদি আমরা মিস করি তাহলে ভবিষ্যৎ ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য সমস্যা হবে। আমাদের লক্ষ্য হলো বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। ফাইভ-জি কেবল উন্নত দেশগুলো চালু করছে। আমরাও সে সময়ে চালু করতে যাচ্ছি। আমরা পিছিয়ে থাকতে চাই না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাংলাদেশ প্রযুক্তি গ্রহণে আর কখনও পিছিয়ে থাকবে না। যখন যে প্রযুক্তি আসবে, সবার আগে বাংলাদেশ সেই প্রযুক্তি গ্রহণ করবে। ফাইভ-জিতে বাংলাদেশ খুব বেশি দেরি করেনি। ২০১৮ সালে দেশে ফাইভ-জির টেস্ট অপারেশন চালানো হয়। সেই সফল পরীক্ষার ফলই আজকের দিনটি। আগামী মার্চ মাসে মাসে মালয়েশিয়া ফাইভ-জি চালু করবে।
এ সময় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, সচিব মো. খলিলুর রহমান, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যামসুন্দর সিকদার প্রমুখ। রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকের হাত ধরে বাংলাদেশে ফাইভ-জি’র যাত্রা শুরু হলো।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন। ফাইভ-জি প্রযুক্তি চালু করতে টেলিটককে সহায়তা করছে হুয়াওয়ে ও নকিয়া। হুয়াওয়ে বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী ঝ্যাং ঝিং জুন অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন।
উল্লেখ্য, টেলিটকের মাধ্যমে ঢাকা শহরের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, ধানমন্ডি ৩২, বাংলাদেশ সচিবালয়, সংসদ ভবন এলাকা এবং রাজধানীর বাইরে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকা ও গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ফাইভ-জি সেবা চালু হবে।
মোস্তফা জব্বার বলেন, ২০১৮ সালে ঘোষিত আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশে ২০২১-২৩ সালের মধ্যে ফাইভ জি নেটওয়ার্ক চালু করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ১২ ডিসেম্বর থেকে সীমিত পরিসরে ফাইভ জি চালু করতে যাচ্ছে সরকার। দেশের ছয়টি নির্ধারিত এলাকায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একমাত্র মোবাইল অপারেটর টেলিটকে ফাইভ জি নেট পাওয়া যাবে।
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়ের সরাসরি উপস্থিতিতে আমরা ২০১৮ সালের জুলাই মাসে ঢাকায় এই প্রযুক্তির প্রথম পরীক্ষা সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করেছি। আগামীকাল ১২ ডিসেম্বর পঞ্চম ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসে বাংলাদেশ ফাইভ জি যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি উপদেষ্টা ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে এ ঐতিহাসিক যাত্রার শুভ উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনের এই মাহেন্দ্রক্ষণটি ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
মোস্তফা জব্বার জানান, ফাইভ জি প্রযুক্তি সেবা কেবল গ্রাহকদের জন্য মোবাইল ব্রডব্যান্ড ও ভয়েস কলের প্রযুক্তি নয়। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, আইওটি, রোবোটিকস, বিগডাটা, ব্লকচেইন, আইওটি প্রযুক্তির আইওটি, হিউম্যান টু মেশিন, মেশিন টু মেশিন ইত্যাদি প্রযুক্তি ও ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে ক্রিটিক্যাল মিশন সার্ভিস, স্মার্ট গ্রিড, স্মার্ট সিটি, স্মার্ট হোম, স্মার্ট ফ্যাক্টরি সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে। মোবাইল গ্রাহকরা অধিকতর উন্নত গুণগত মানের ভয়েস কল ও ফোর জি হতে বহুগুণ দ্রুত মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারে সক্ষম হবে। ঢাকায় বসে প্রত্যন্ত অঞ্চলে রোগীর রোবট সার্জারি করা যাবে।
তিনি আরও বলেন, চালকবিহীন গাড়ি চালানো যাবে এবং স্মার্ট ফ্যাক্টরি স্থাপনের মাধ্যমে অটোনোমাস উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা যাবে। প্রাথমিকভাবে টেলিটক ঢাকা শহরের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়, ধানমন্ডি ৩২ নম্বর, বাংলাদেশ সচিবালয়, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, সাভার এবং ঢাকার বাইরে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া ফাইভ জি কাভারেজের আওতায় আনা হচ্ছে। পরে ঢাকা শহরের ২০০টি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এ প্রযুক্তি সেবা চালু করা হবে। আগামী মার্চে বেতার তরঙ্গ বরাদ্দ নিলামে দেওয়ার পর বেসরকারি তিনটি মোবাইল অপারেটর এ প্রযুক্তি চালু করবে।
২০২২ সালের পর টেলিটক ও বিটিসিএলের মাধ্যমে দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল বিশেষ করে স্পেশাল ইকোনোমিক জোনসমূহে এ সেবা চালু করার প্রস্তুতির কাজ চলছে বলেও জানান মন্ত্রী।