ঢাকা ০১:২৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫, ৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাবজি-ফ্রি ফায়ার বন্ধে কার্যক্রম শুরু করেছ বিটিআরসি

  • অনলাইন ডেস্ক
  • Update Time : ০৫:১৬:০২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ অগাস্ট ২০২১
  • ২৪৭ Time View

দেশের কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ভয়ঙ্কর আসক্তি তৈরি করেছে পাবজি-ফ্রি ফায়ার গেমস। অ্যাকশনধর্মী এসব গেমস শিশু-কিশোরদের দিনকে দিন সহিংস করে তুলছে।

এমন পরিস্থিতিতে আদালত সম্প্রতি এ দুটি গেমস বন্ধ করার নির্দেশনা দেয়ার পর গতকাল বুধবার থেকে এগুলো বন্ধের কার্যক্রম শুরু করেছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিটিআরসি।
সম্প্রতি এ দুটি গেমস খেলা নিয়ে বিরোধের জের ধরে মাগুরায় এক কিশোরকে কুপিয়ে হত্যা করেছে তার বন্ধু। এরই মধ্যে অভিযুক্ত কিশোরকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এমন পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সন্তানরা যাতে এসব ক্ষতিকর ভিডিও গেমে আসক্ত না হয়ে পড়ে, সেদিকে অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে অনুরোধ করেছেন তারা।
পাবজি-ফ্রি ফায়ার বন্ধের কার্যক্রম শুরু 
পাবজি-ফ্রি ফায়ার বন্ধের বিষয়ে গতকাল বুধবার বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা পাওয়ার পরই আমরা কাজ শুরু করেছি। এরই মধ্যে গেমস দুটি বন্ধ করতে ডিপার্টমেন্ট অব টেলিকমকে (ডট) নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা এ কাজটি করবে। এছাড়া ক্ষতিকর অ্যাপস যেমন- লাইকি, বিগো, টিকটকের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। যেগুলো বন্ধ (ব্লক) করা সম্ভব হবে আমরা করে ফেলব। যেগুলো বন্ধ করা সম্ভব হবে না, সেগুলোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অ্যাপসগুলোর অফিসে চিঠি পাঠানো হবে।’
কতগুলো অ্যাপস বন্ধ করা হবে এমন প্রশ্নে ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, টিকটক, বিগো লাইভ ও লাইকির মতো অ্যাপসসহ আরও বেশকিছু অ্যাপস বাংলাদেশে বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।
এর আগে পাবজি-ফ্রি ফায়ার গেমস বন্ধের বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা হাতে পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
কতটা সহিংসতার গেম পাবজি-ফ্রি ফায়ার?
একশ জনের একসঙ্গে খেলার দক্ষিণ কোরীয় কোম্পানির ভিডিও গেম পাবজি। পরিত্যক্ত একটি দ্বীপে একশ মানুষ থাকে। সেখানে প্যারাসুট দিয়ে নামে খেলোয়াড়। এরপর শুরু হয় টিকে থাকার যুদ্ধ। চারজনের গ্রুপ করেই এটি খেলা যায়। একজন কিংবা চারজন খেলোয়াড় মেতে ওঠে ওই একশ জনকে হত্যার মহাআয়োজনে। এই খেলার মূল উপজীব্য হত্যা করে টিকে থাকতে হবে।
অন্যদিকে সন্ত্রাস-সহিংসতার দিক দিয়ে পাবজি থেকে পিছিয়ে নেই ফ্রি ফায়ার গেমসটিও। গেরিনা ফ্রি ফায়ার (ফ্রি ফায়ার ব্যাটলগ্রাউন্ডস) একটি ব্যাটল রয়্যাল গেম। ২০১৯ সালে এটি বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক ডাউনলোড করা মোবাইল গেম। গেমটি অন্য খেলোয়াড়কে হত্যা করার জন্য অস্ত্র এবং সরঞ্জামের সন্ধানে একটি দ্বীপে প্যারাসুটে করে আসা ৫০ জন ও তার অধিক খেলোয়াড়কে অন্তর্ভুক্ত করে।
অনলাইনভিত্তিক সহিংস এই গেম দুটি বিশ্বজুড়ে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করছে। বিশেষ করে কিশোরদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। একাধিক সমীক্ষা অনুযায়ী পৃথিবীতে বর্তমানে প্রতিদিন ৮৭ কোটি মানুষ পাবজি-ফ্রি ফায়ার খেলছে। গুগল প্লে স্টোর ও আই স্টোর থেকে প্রতিদিন ডাউনলোড হচ্ছে প্রায় ১০ কোটি। বাংলাদেশেও প্রতিদিন এক কোটির বেশি গেম খেলার পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে একাধিক অনলাইন সমীক্ষা থেকে।
সহিংস হয়ে উঠছে কিশোররা
পাবজি-ফ্রি ফায়ার গেমে আসক্ত শিশু-কিশোররা যে ভয়ঙ্কর ও সহিংস হয়ে উঠছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায়।
গত ২৭ জুলাই রাতে মাগুরা সদর থানাধীন বেরইল পলিতা দক্ষিণপাড়া গ্রামে ফ্রি ফায়ার ও পাবজি খেলা নিয়ে বিরোধের জেরে বন্ধু গোলাম রসুলকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে তার বন্ধু মো. সজীব মিয়া।
এ বিষয়ে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, ফ্রি-ফায়ার, পাবজি খেলা ও অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং নিয়ে অভিযুক্ত কিশোর সজীব মিয়ার সঙ্গে কাজী গোলাম রসুলের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। ওই বিরোধের জেরে রসুলকে ২৭ জুলাই ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায় সজীব। ঘটনাটি সিআইডির দৃষ্টিগোচর হলে আত্মগোপনে থাকা সজীব মিয়াকে গত ১৮ আগস্ট নরসিংদী সদর থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
এর আগে গত ৮ জুন বগুড়ার শেরপুরের আওলাকান্দি গ্রামে পাবজি গেমস খেলতে না পারায় ক্ষুব্ধ হয়ে ইন্টারনেটের তার কাটতে গিয়ে পল্লী বিদ্যুতের তারে আটকে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়।
নিহত ছাত্র রকি হোসেন (১৫)সহ কয়েকজন পাবজি গেমস খেলার জন্য ইন্টারনেট সংযোগ নেয় একই গ্রামের আবু বকরের বাড়িতে। ওই বাড়ি থেকে ইন্টারনেটের রাউটার চুরি হয়ে যায়। পরে ওই বাড়ির মালিক সংযোগটি খুলে নেয়ার কথা বলে নেট ব্যবসায়ীকে। এ কথা শোনার পর রকি ক্ষুব্ধ হয়ে পল্লীবিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে লাগানো ইন্টারনেট সংযোগ কাটতে গিয়ে বিদ্যুতের তারের সঙ্গে আটকে যায়। ফলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
যেভাবে ক্ষতিকর গেমে আসক্ত হচ্ছে কিশোররা
সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক বলেন, পাবজি-ফ্রি ফায়ারের মতো ভিডিও গেমগুলো আসলে এক ধরনের ডিজিটাল ড্রাগ। করোনা মহামারির সময় অনলাইন ক্লাসের কারণে স্মার্টফোন-ল্যাপটপ শিশু-কিশোরদের হাতে হাতে পৌঁছে গেছে। তারা এসব ডিভাইসে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু অনলাইন ক্লাস ও পড়াশোনার পর তারা কী করছে সেটি কিন্তু অভিভাবকরা খেয়াল রাখছেন না। যে কারণে শিশু-কিশোররা অভিভাবকদের চোখের আড়ালে এসব ক্ষতিকর গেমে আসক্ত হয়ে পড়ছে।
অভিভাবকদের সতর্ক হতে হবে
তৌহিদুল হক আরও বলেন, এসব ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই। সন্তানদের বই পড়তে অভ্যস্ত করতে হবে, মাঠে খেলাধুলা করার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এভাবেই তাদের মধ্যে আদর্শ সব গুণাবলির বিকাশ ঘটাতে হবে, যা শুধু অভিভাবকদের দ্বারাই সম্ভব।
অন্যদিকে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, এসব বন্ধে সামাজিক সচেতনতা বেশি দরকার। অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ; সন্তানদের দিকে খেয়াল রাখুন, সন্তানরা যাতে ক্ষতিকর এসব গেমে আসক্ত হয়ে না পড়ে। ভারতে ইতোমধ্যে এর ভয়াবহতা বন্ধ করা হয়েছে। আমাদের দেশেও হাইকোর্ট একটা নির্দেশনা দিয়েছেন। আশা করছি, তিন মাসের মধ্যেই এ বিষয়ে কার্যকরী উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে।
ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ব্যবহার করে বাংলাদেশে চলছে পাবজি ও ফ্রি ফায়ারসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর গেম। এ ক্ষেত্রে সিআইডির কোনো নজরদারি রয়েছে কি না জানতে চাইলে মুক্তা ধর বলেন, আমাদের সাইবার টিম এ ব্যাপারে কাজ করছে। নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ আগস্ট দেশের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে পাবজি, ফ্রি ফায়ারসহ এ ধরনের ‘বিপজ্জনক’ সব গেম তিন মাসের জন্য বন্ধের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এসব অনলাইন গেম এবং টিকটক, লাইকির মতো ভিডিও স্ট্রিমিং অ্যাপ বন্ধের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, তা জানতে রুল জারি করা হয়।
দেশের শিশু-কিশোর, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এসব গেম ও অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং অ্যাপের ‘বিরূপ প্রভাব’ তুলে ধরে গত ১৯ জুন বিবাদীদের কাছে নোটিস পাঠিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী। তাতে সাড়া না পেয়ে তারা গত ২৪ জুন হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন তারা।
Tag :

পাবজি-ফ্রি ফায়ার বন্ধে কার্যক্রম শুরু করেছ বিটিআরসি

Update Time : ০৫:১৬:০২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ অগাস্ট ২০২১

দেশের কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ভয়ঙ্কর আসক্তি তৈরি করেছে পাবজি-ফ্রি ফায়ার গেমস। অ্যাকশনধর্মী এসব গেমস শিশু-কিশোরদের দিনকে দিন সহিংস করে তুলছে।

এমন পরিস্থিতিতে আদালত সম্প্রতি এ দুটি গেমস বন্ধ করার নির্দেশনা দেয়ার পর গতকাল বুধবার থেকে এগুলো বন্ধের কার্যক্রম শুরু করেছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিটিআরসি।
সম্প্রতি এ দুটি গেমস খেলা নিয়ে বিরোধের জের ধরে মাগুরায় এক কিশোরকে কুপিয়ে হত্যা করেছে তার বন্ধু। এরই মধ্যে অভিযুক্ত কিশোরকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এমন পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সন্তানরা যাতে এসব ক্ষতিকর ভিডিও গেমে আসক্ত না হয়ে পড়ে, সেদিকে অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে অনুরোধ করেছেন তারা।
পাবজি-ফ্রি ফায়ার বন্ধের কার্যক্রম শুরু 
পাবজি-ফ্রি ফায়ার বন্ধের বিষয়ে গতকাল বুধবার বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা পাওয়ার পরই আমরা কাজ শুরু করেছি। এরই মধ্যে গেমস দুটি বন্ধ করতে ডিপার্টমেন্ট অব টেলিকমকে (ডট) নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা এ কাজটি করবে। এছাড়া ক্ষতিকর অ্যাপস যেমন- লাইকি, বিগো, টিকটকের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। যেগুলো বন্ধ (ব্লক) করা সম্ভব হবে আমরা করে ফেলব। যেগুলো বন্ধ করা সম্ভব হবে না, সেগুলোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অ্যাপসগুলোর অফিসে চিঠি পাঠানো হবে।’
কতগুলো অ্যাপস বন্ধ করা হবে এমন প্রশ্নে ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, টিকটক, বিগো লাইভ ও লাইকির মতো অ্যাপসসহ আরও বেশকিছু অ্যাপস বাংলাদেশে বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।
এর আগে পাবজি-ফ্রি ফায়ার গেমস বন্ধের বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা হাতে পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
কতটা সহিংসতার গেম পাবজি-ফ্রি ফায়ার?
একশ জনের একসঙ্গে খেলার দক্ষিণ কোরীয় কোম্পানির ভিডিও গেম পাবজি। পরিত্যক্ত একটি দ্বীপে একশ মানুষ থাকে। সেখানে প্যারাসুট দিয়ে নামে খেলোয়াড়। এরপর শুরু হয় টিকে থাকার যুদ্ধ। চারজনের গ্রুপ করেই এটি খেলা যায়। একজন কিংবা চারজন খেলোয়াড় মেতে ওঠে ওই একশ জনকে হত্যার মহাআয়োজনে। এই খেলার মূল উপজীব্য হত্যা করে টিকে থাকতে হবে।
অন্যদিকে সন্ত্রাস-সহিংসতার দিক দিয়ে পাবজি থেকে পিছিয়ে নেই ফ্রি ফায়ার গেমসটিও। গেরিনা ফ্রি ফায়ার (ফ্রি ফায়ার ব্যাটলগ্রাউন্ডস) একটি ব্যাটল রয়্যাল গেম। ২০১৯ সালে এটি বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক ডাউনলোড করা মোবাইল গেম। গেমটি অন্য খেলোয়াড়কে হত্যা করার জন্য অস্ত্র এবং সরঞ্জামের সন্ধানে একটি দ্বীপে প্যারাসুটে করে আসা ৫০ জন ও তার অধিক খেলোয়াড়কে অন্তর্ভুক্ত করে।
অনলাইনভিত্তিক সহিংস এই গেম দুটি বিশ্বজুড়ে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করছে। বিশেষ করে কিশোরদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। একাধিক সমীক্ষা অনুযায়ী পৃথিবীতে বর্তমানে প্রতিদিন ৮৭ কোটি মানুষ পাবজি-ফ্রি ফায়ার খেলছে। গুগল প্লে স্টোর ও আই স্টোর থেকে প্রতিদিন ডাউনলোড হচ্ছে প্রায় ১০ কোটি। বাংলাদেশেও প্রতিদিন এক কোটির বেশি গেম খেলার পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে একাধিক অনলাইন সমীক্ষা থেকে।
সহিংস হয়ে উঠছে কিশোররা
পাবজি-ফ্রি ফায়ার গেমে আসক্ত শিশু-কিশোররা যে ভয়ঙ্কর ও সহিংস হয়ে উঠছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায়।
গত ২৭ জুলাই রাতে মাগুরা সদর থানাধীন বেরইল পলিতা দক্ষিণপাড়া গ্রামে ফ্রি ফায়ার ও পাবজি খেলা নিয়ে বিরোধের জেরে বন্ধু গোলাম রসুলকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে তার বন্ধু মো. সজীব মিয়া।
এ বিষয়ে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, ফ্রি-ফায়ার, পাবজি খেলা ও অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং নিয়ে অভিযুক্ত কিশোর সজীব মিয়ার সঙ্গে কাজী গোলাম রসুলের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। ওই বিরোধের জেরে রসুলকে ২৭ জুলাই ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায় সজীব। ঘটনাটি সিআইডির দৃষ্টিগোচর হলে আত্মগোপনে থাকা সজীব মিয়াকে গত ১৮ আগস্ট নরসিংদী সদর থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
এর আগে গত ৮ জুন বগুড়ার শেরপুরের আওলাকান্দি গ্রামে পাবজি গেমস খেলতে না পারায় ক্ষুব্ধ হয়ে ইন্টারনেটের তার কাটতে গিয়ে পল্লী বিদ্যুতের তারে আটকে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়।
নিহত ছাত্র রকি হোসেন (১৫)সহ কয়েকজন পাবজি গেমস খেলার জন্য ইন্টারনেট সংযোগ নেয় একই গ্রামের আবু বকরের বাড়িতে। ওই বাড়ি থেকে ইন্টারনেটের রাউটার চুরি হয়ে যায়। পরে ওই বাড়ির মালিক সংযোগটি খুলে নেয়ার কথা বলে নেট ব্যবসায়ীকে। এ কথা শোনার পর রকি ক্ষুব্ধ হয়ে পল্লীবিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে লাগানো ইন্টারনেট সংযোগ কাটতে গিয়ে বিদ্যুতের তারের সঙ্গে আটকে যায়। ফলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
যেভাবে ক্ষতিকর গেমে আসক্ত হচ্ছে কিশোররা
সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক বলেন, পাবজি-ফ্রি ফায়ারের মতো ভিডিও গেমগুলো আসলে এক ধরনের ডিজিটাল ড্রাগ। করোনা মহামারির সময় অনলাইন ক্লাসের কারণে স্মার্টফোন-ল্যাপটপ শিশু-কিশোরদের হাতে হাতে পৌঁছে গেছে। তারা এসব ডিভাইসে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু অনলাইন ক্লাস ও পড়াশোনার পর তারা কী করছে সেটি কিন্তু অভিভাবকরা খেয়াল রাখছেন না। যে কারণে শিশু-কিশোররা অভিভাবকদের চোখের আড়ালে এসব ক্ষতিকর গেমে আসক্ত হয়ে পড়ছে।
অভিভাবকদের সতর্ক হতে হবে
তৌহিদুল হক আরও বলেন, এসব ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই। সন্তানদের বই পড়তে অভ্যস্ত করতে হবে, মাঠে খেলাধুলা করার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এভাবেই তাদের মধ্যে আদর্শ সব গুণাবলির বিকাশ ঘটাতে হবে, যা শুধু অভিভাবকদের দ্বারাই সম্ভব।
অন্যদিকে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, এসব বন্ধে সামাজিক সচেতনতা বেশি দরকার। অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ; সন্তানদের দিকে খেয়াল রাখুন, সন্তানরা যাতে ক্ষতিকর এসব গেমে আসক্ত হয়ে না পড়ে। ভারতে ইতোমধ্যে এর ভয়াবহতা বন্ধ করা হয়েছে। আমাদের দেশেও হাইকোর্ট একটা নির্দেশনা দিয়েছেন। আশা করছি, তিন মাসের মধ্যেই এ বিষয়ে কার্যকরী উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে।
ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ব্যবহার করে বাংলাদেশে চলছে পাবজি ও ফ্রি ফায়ারসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর গেম। এ ক্ষেত্রে সিআইডির কোনো নজরদারি রয়েছে কি না জানতে চাইলে মুক্তা ধর বলেন, আমাদের সাইবার টিম এ ব্যাপারে কাজ করছে। নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ আগস্ট দেশের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে পাবজি, ফ্রি ফায়ারসহ এ ধরনের ‘বিপজ্জনক’ সব গেম তিন মাসের জন্য বন্ধের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এসব অনলাইন গেম এবং টিকটক, লাইকির মতো ভিডিও স্ট্রিমিং অ্যাপ বন্ধের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, তা জানতে রুল জারি করা হয়।
দেশের শিশু-কিশোর, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এসব গেম ও অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং অ্যাপের ‘বিরূপ প্রভাব’ তুলে ধরে গত ১৯ জুন বিবাদীদের কাছে নোটিস পাঠিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী। তাতে সাড়া না পেয়ে তারা গত ২৪ জুন হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন তারা।