ঢাকা ০৮:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
ভারতীয় আধিপত্য তাড়াইয়া আমেরিকা ওয়াশিংটনের আধিপত্যের শিকার হতে চাই না- জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব পাকিস্তানের মানচিত্রে অবস্থান ধরে রাখতে রাষ্ট্রীয় মদদের সন্ত্রাসবাদ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে: ভারতীয় সেনাপ্রধান ইসরায়েল সেনাবাহিনীকে গাজায় অভিযান সীমিত করার নির্দেশ দিয়েছে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকার ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাব নিয়ে কাজ করতে রাজি ইসরায়েল জার্মানির আকাশে গত ২৪ ঘণ্টায় একাধিক ড্রোন; বন্ধ হলো মিউনিখ বিমানবন্দর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শান্তি প্রস্তাবে জবাব দিয়েছে হামাস, ইসরায়েলকে বোমাবর্ষণ থামাতে ট্রাম্পের আহ্বান ট্রাম্পের ২০ দফা গাজা পরিকল্পনার বিষয়ে জবাব দিয়েছে হামাস এক নজরে বিশ্ব সংবাদ: ৩ অক্টোবর ২০২৫ আজকে কোন টিভি চ্যানেলে কোন খেলা আজকের নামাজের সময়সূচি: ০৪ অক্টোবর

মুনিয়া হত্যা মামলা: বসুন্ধরা গ্রুপের (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর গ্রেফতারসহ ৫ দাবি

মোসারাত জাহান মুনিয়া হত্যা মামলার প্রধান আসামি সায়েম সোবহান আনভীরসহ অভিযুক্ত সবাইকে দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড ও মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম কেন্দ্রীয় সংসদ।

বুধবার (২৬ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান। এসময় উপস্থিত ছিলেন, মুনিয়ার বড় বোন ও মামলার বাদী নুশরাত জাহান তানিয়া। সংবাদ সম্মেলনে আসামি সায়েম সোবহান আনভীরকে দ্রুত গ্রেপ্তারসহ ৫ দফা দাবি পেশ করা হয়।

এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নুশরাত জাহান তানিয়া বলেন, মুনিয়া আমার অবাধ্য হয়ে আনভীরের ভালোবাসায় জড়িয়ে পড়ে, আমার ভালোবাসাকে প্রত্যাখান করে চলে গেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মুনিয়ার জিদের কাছে আমি পরাজিত ছিলাম। গত ২৬ এপ্রিল সকালে মুনিয়া আমাকে ফোন করে জানায় আনভীর তাকে বিভিন্ন অপবাদ দিচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করি কী অপবাদ দিচ্ছে। সে জানায় আজ তোমাকে সব বলব, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি অনেক ভুল করে ফেলেছি। আনভীর আমাকে ধোঁকা দিয়েছে। আমার অনেক বিপদ। তুমি তাড়াতাড়ি আসো।

তানিয়া জানান, মুনিয়া অনেক কান্নাকাটি করেছে। আমাকে বলল যে ৩টায় না, তুমি তাড়াতাড়ি চলে আসো। আমি তাকে বললাম কী পেইন দিচ্ছে তোমাকে। আচ্ছা তুমি শান্ত থাকো। আমি আসতেছি। তখন সে বলল যে আমি না কী তার (আনভীর) শত্রু শারুনের সঙ্গে যুক্ত। তখন আমি তাকে বললাম হু ইজ শারুন? তখন সে বলল যে ফোনে তোমাকে আমি এতকিছু বলতে পারব না। তুমি আসো। এরপর সব বিস্তারিত বলব।

মুনিয়ার ঢাকা আগমন ও অবস্থান সম্পর্কে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সভাপতি মেহেদী হাসান লিখিত বক্তব্যে জানান, মুনিয়া ২০১৬ সালে ঢাকায় এসে মিরপুর ন্যাশনাল বাংলা স্কুলে ভর্তি হয়। সে সময় দুই বছর অর্থাত্ ২০১৮ সাল পর্যন্ত হোস্টেলে থাকে এবং এসএসসি পাশ করার পর মিরপুর ক্যান্ট পাবলিক কলেজে ভর্তি হয়ে প্রায় এক বছর ২০১৯ সাল পর্যন্ত হোস্টেলে থাকে এবং অল্প কিছুদিনের জন্য কলেজের কাছাকাছি দুই বান্ধবীর সাথে সাবলেটে থাকে। পরবর্তীতে আর্থিক প্রলোভন দেখিয়ে মুনিয়ার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেন আনভীর।

তিনি আরো জানান, আনভীরের পরিবার জানলে এক পর্যায়ে পিয়াসা নামক একজন নারীর মাধ্যমে আনভীরের মা ডেকে নিয়ে মুনিয়াকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। ইতিমধ্যে মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়া ঘটনাটি জানলে মুনিয়াকে সে কুমিল্লায় নিয়ে আসে এবং সেখানে বোনের সাথে গত ২০২০ সালের এপ্রিল হতে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত কুমিল্লায় থাকে। কুমিল্লায় বসবাসরত অবস্থায় পুণরায় যোগাযোগ হয় আনভীর ও মুনিয়ার। সে কলেজের ফর্ম ফিলাপ করতে হবে বলে বোনকে বলে ঢাকায় আসে। কুমিল্লার একটা মেয়ে সে গ্রামে বসে গুলশানে বাসা ভাড়া নেবে বা কোন বাড়িওয়ালা তার জন্য বাসা রেডি করে রাখবে এটা অসম্ভব। মূলত আনভীরই বাসা ভাড়া নেয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। ওই বাসাটি ছিল পিয়াসার বান্ধবী শারমীন শাহেদদের বাড়ী। পিয়াসা আনভীরের পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠ বলে আমরা জানতে পারি। রমজান মাসে বাড়ীওয়ালার বাসায় ইফতারের একটা ছবি ফেইসবুকে দেয়ায় মুনিয়ার ঢাকা অবস্থান পিয়াসা জেনে যাওয়ার পর শুরু হয় অন্য আয়োজন, যার পরিনতি মুনিয়ার মৃত্যু। কিন্তু এতো দিনেও মূল আসামি আনভীরকে গ্রেফতার না করায় উদ্বেগ প্রকাশ করছি। তাহলে আমরা কি বুঝে নিব, প্রশাসন তাদের হাতে জিম্মি ?

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মুনিয়া হত্যাকান্ড পরই দ্রুত দেশ ছাড়ে আনভীরের মাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যগণ। যেহেতু ইতিপূর্বে আনভীরের মা হত্যার হুমকি দেয়ার পরমুনিয়া ঢাকা ছেড়ে চলে যায় এবং আবার ফিরে আসার পর তার ছেলে আনভীরের সাথে সম্পর্ক চলমান রাখে। এ ক্ষেত্রে আমরা মনে করি আনভীরের পরিবারের সদস্যরা এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকতে পারে। এটা হত্যা না আত্মহত্যা তা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। মৃত্যুর আগে শারমিন সাহেদ ও মুনিয়ার বড়বোন তানিয়ার ফোন আলাপে মুনিয়ার মৃত্যু আশঙ্কায় উদ্বেগ, লাশ উদ্ধারের সময় রুমের দরজার অবস্থান, লাশের অবস্থান, রুমের পারিপার্শিক অবস্থা, ও মুনিয়ার লিখিত ডায়েরীসহ বিভিন্ন আলামত পর্যালোচনায় অবস্থাদৃষ্টে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে এটা পরিকল্পিত হত্যাকান্ড।

চাঞ্চল্যকর মুনিয়ার হত্যার বিচারের দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলনে আরো উল্লেখ করা হয়, বসুন্ধরা গ্রুপের নানা অপকর্মের কথা বিভিন্ন গণমাধ্যমও ভুক্তভোগীর মাধ্যমে সকলেই অবগত। ইতিপূর্বে ও হত্যা, জমি দখলসহ নানা অনৈতিক কর্মকান্ড সংগঠিত করেছে। সমপ্রতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীকে হুমকির একটি ভিডিও ক্লিপে প্রকাশ পায় যে, বসুন্ধরা গ্রুপ সরকারি জমি ও অন্য মানুষের জমি বিক্রি করে দেয় বেআইনীভাবে, যা করার কোন অধিকার তাদের আছে কি ? বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য জনৈক ইব্রাহিম মিয়ার বসতভিটাসহ ১৮ বিঘা সম্পত্তি এক রাতের মধ্যে বালু ভরাট করে তাকে সর্বশান্ত করেছে। যার ফলশ্রতিতে উক্ত ব্যক্তির মৃত্যু হয়। এরকম অসংখ্য ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার রয়েছে যারা বসুন্ধরা গ্রুপ কর্তৃক নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। তাদের স্বার্থ পরিপন্থি কিছু হলে নিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও হত্যা করতে দ্বিধাবোধ করে না।

সংবাদ সম্মেলন থেকে মুনিয়া হত্যা মামলার অগ্রগতি ও বর্তমান প্রেক্ষাপটে পাঁচটি দাবি তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো-১। অনতিবিলম্বে মুনিয়া হত্যা মামলার প্রধান আসামী বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হোক। ২। মুনিয়া হত্যা মামলায় সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে আনভীরের মা, পিয়াসা এবং তার সহযোগী মিশু হাসান, বাড়ীর মালিক, নিরাপত্ত প্রহরী, গাড়ী চালকসহ সন্দেহভাজন সকল ব্যক্তিকে আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। ৩। গণমাধ্যমকে অপব্যবহার করে বাদী ও মৃত মুনিয়ার চরিত্র হনন করার চেষ্টায় লিপ্ত বসুন্ধরা গ্রুপের সকল মিডিয়ার লাইসেন্স বাতিল করা হোক। ৪। ভূমিদস্যু বসুন্ধরা গ্রুপ কর্তৃক জবরদখলকৃত ব্যক্তি ও সরকারি খাস জমি ভূমি মালিকদের ফেরত দেয়া হোক। ৫। আলোচিত মুনিয়া হত্যা মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মিডিয়া সেলের মাধ্যমে জনসম্মুখে প্রকাশ করা হোক।

হুইপপুত্র শারুনের সঙ্গে মুনিয়ার কথিত সম্পর্ক বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নুসরাত জাহান তানিয়া বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। তার সঙ্গে আমাদের পরিবারের ঘনিষ্ঠতাও নেই। ঘটনার রাতে যে গাড়ীতে করে গুলশানে এসেছিলেন তার উত্স সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে ভিকটিমের বড় বোন জানান, সেটি তার এক পরিচিত-স্বজনের। বিপদের সময় গাড়ীটি ওই দিন আমাকে দিয়েছিল। মুনিয়ার মৃত্যুর পর আনভীরের বিচার দাবি করলেও পাঁচ দিনের মাথায় অভিযুক্ত বসুন্ধরা এমডি আনভীরকে বাদ দিয়ে হুইপপুত্র শারুনকে আসামি করে মামলার আবেদন ও পরবর্তীতে রহস্যজনক ‘নিখোজ’ রয়েছেন বড় ভাই আশিকুর রহমান সবুজ। এ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তানিয়া বলেন, পারিবারিক বিরোধের কারণে অনেকদিন ধরে আমার ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের দুই বোনের সম্পর্ক নেই। তিনি কোন মহল থেকে প্রভাবিত হয়ে এ কাজ করতে পারেন।

Tag :
জনপ্রিয়

ভারতীয় আধিপত্য তাড়াইয়া আমেরিকা ওয়াশিংটনের আধিপত্যের শিকার হতে চাই না- জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব

মুনিয়া হত্যা মামলা: বসুন্ধরা গ্রুপের (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর গ্রেফতারসহ ৫ দাবি

Update Time : ০৭:১৫:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ মে ২০২১

মোসারাত জাহান মুনিয়া হত্যা মামলার প্রধান আসামি সায়েম সোবহান আনভীরসহ অভিযুক্ত সবাইকে দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড ও মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম কেন্দ্রীয় সংসদ।

বুধবার (২৬ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান। এসময় উপস্থিত ছিলেন, মুনিয়ার বড় বোন ও মামলার বাদী নুশরাত জাহান তানিয়া। সংবাদ সম্মেলনে আসামি সায়েম সোবহান আনভীরকে দ্রুত গ্রেপ্তারসহ ৫ দফা দাবি পেশ করা হয়।

এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নুশরাত জাহান তানিয়া বলেন, মুনিয়া আমার অবাধ্য হয়ে আনভীরের ভালোবাসায় জড়িয়ে পড়ে, আমার ভালোবাসাকে প্রত্যাখান করে চলে গেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মুনিয়ার জিদের কাছে আমি পরাজিত ছিলাম। গত ২৬ এপ্রিল সকালে মুনিয়া আমাকে ফোন করে জানায় আনভীর তাকে বিভিন্ন অপবাদ দিচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করি কী অপবাদ দিচ্ছে। সে জানায় আজ তোমাকে সব বলব, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি অনেক ভুল করে ফেলেছি। আনভীর আমাকে ধোঁকা দিয়েছে। আমার অনেক বিপদ। তুমি তাড়াতাড়ি আসো।

তানিয়া জানান, মুনিয়া অনেক কান্নাকাটি করেছে। আমাকে বলল যে ৩টায় না, তুমি তাড়াতাড়ি চলে আসো। আমি তাকে বললাম কী পেইন দিচ্ছে তোমাকে। আচ্ছা তুমি শান্ত থাকো। আমি আসতেছি। তখন সে বলল যে আমি না কী তার (আনভীর) শত্রু শারুনের সঙ্গে যুক্ত। তখন আমি তাকে বললাম হু ইজ শারুন? তখন সে বলল যে ফোনে তোমাকে আমি এতকিছু বলতে পারব না। তুমি আসো। এরপর সব বিস্তারিত বলব।

মুনিয়ার ঢাকা আগমন ও অবস্থান সম্পর্কে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সভাপতি মেহেদী হাসান লিখিত বক্তব্যে জানান, মুনিয়া ২০১৬ সালে ঢাকায় এসে মিরপুর ন্যাশনাল বাংলা স্কুলে ভর্তি হয়। সে সময় দুই বছর অর্থাত্ ২০১৮ সাল পর্যন্ত হোস্টেলে থাকে এবং এসএসসি পাশ করার পর মিরপুর ক্যান্ট পাবলিক কলেজে ভর্তি হয়ে প্রায় এক বছর ২০১৯ সাল পর্যন্ত হোস্টেলে থাকে এবং অল্প কিছুদিনের জন্য কলেজের কাছাকাছি দুই বান্ধবীর সাথে সাবলেটে থাকে। পরবর্তীতে আর্থিক প্রলোভন দেখিয়ে মুনিয়ার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেন আনভীর।

তিনি আরো জানান, আনভীরের পরিবার জানলে এক পর্যায়ে পিয়াসা নামক একজন নারীর মাধ্যমে আনভীরের মা ডেকে নিয়ে মুনিয়াকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। ইতিমধ্যে মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়া ঘটনাটি জানলে মুনিয়াকে সে কুমিল্লায় নিয়ে আসে এবং সেখানে বোনের সাথে গত ২০২০ সালের এপ্রিল হতে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত কুমিল্লায় থাকে। কুমিল্লায় বসবাসরত অবস্থায় পুণরায় যোগাযোগ হয় আনভীর ও মুনিয়ার। সে কলেজের ফর্ম ফিলাপ করতে হবে বলে বোনকে বলে ঢাকায় আসে। কুমিল্লার একটা মেয়ে সে গ্রামে বসে গুলশানে বাসা ভাড়া নেবে বা কোন বাড়িওয়ালা তার জন্য বাসা রেডি করে রাখবে এটা অসম্ভব। মূলত আনভীরই বাসা ভাড়া নেয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। ওই বাসাটি ছিল পিয়াসার বান্ধবী শারমীন শাহেদদের বাড়ী। পিয়াসা আনভীরের পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠ বলে আমরা জানতে পারি। রমজান মাসে বাড়ীওয়ালার বাসায় ইফতারের একটা ছবি ফেইসবুকে দেয়ায় মুনিয়ার ঢাকা অবস্থান পিয়াসা জেনে যাওয়ার পর শুরু হয় অন্য আয়োজন, যার পরিনতি মুনিয়ার মৃত্যু। কিন্তু এতো দিনেও মূল আসামি আনভীরকে গ্রেফতার না করায় উদ্বেগ প্রকাশ করছি। তাহলে আমরা কি বুঝে নিব, প্রশাসন তাদের হাতে জিম্মি ?

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মুনিয়া হত্যাকান্ড পরই দ্রুত দেশ ছাড়ে আনভীরের মাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যগণ। যেহেতু ইতিপূর্বে আনভীরের মা হত্যার হুমকি দেয়ার পরমুনিয়া ঢাকা ছেড়ে চলে যায় এবং আবার ফিরে আসার পর তার ছেলে আনভীরের সাথে সম্পর্ক চলমান রাখে। এ ক্ষেত্রে আমরা মনে করি আনভীরের পরিবারের সদস্যরা এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকতে পারে। এটা হত্যা না আত্মহত্যা তা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। মৃত্যুর আগে শারমিন সাহেদ ও মুনিয়ার বড়বোন তানিয়ার ফোন আলাপে মুনিয়ার মৃত্যু আশঙ্কায় উদ্বেগ, লাশ উদ্ধারের সময় রুমের দরজার অবস্থান, লাশের অবস্থান, রুমের পারিপার্শিক অবস্থা, ও মুনিয়ার লিখিত ডায়েরীসহ বিভিন্ন আলামত পর্যালোচনায় অবস্থাদৃষ্টে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে এটা পরিকল্পিত হত্যাকান্ড।

চাঞ্চল্যকর মুনিয়ার হত্যার বিচারের দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলনে আরো উল্লেখ করা হয়, বসুন্ধরা গ্রুপের নানা অপকর্মের কথা বিভিন্ন গণমাধ্যমও ভুক্তভোগীর মাধ্যমে সকলেই অবগত। ইতিপূর্বে ও হত্যা, জমি দখলসহ নানা অনৈতিক কর্মকান্ড সংগঠিত করেছে। সমপ্রতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীকে হুমকির একটি ভিডিও ক্লিপে প্রকাশ পায় যে, বসুন্ধরা গ্রুপ সরকারি জমি ও অন্য মানুষের জমি বিক্রি করে দেয় বেআইনীভাবে, যা করার কোন অধিকার তাদের আছে কি ? বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য জনৈক ইব্রাহিম মিয়ার বসতভিটাসহ ১৮ বিঘা সম্পত্তি এক রাতের মধ্যে বালু ভরাট করে তাকে সর্বশান্ত করেছে। যার ফলশ্রতিতে উক্ত ব্যক্তির মৃত্যু হয়। এরকম অসংখ্য ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার রয়েছে যারা বসুন্ধরা গ্রুপ কর্তৃক নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। তাদের স্বার্থ পরিপন্থি কিছু হলে নিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও হত্যা করতে দ্বিধাবোধ করে না।

সংবাদ সম্মেলন থেকে মুনিয়া হত্যা মামলার অগ্রগতি ও বর্তমান প্রেক্ষাপটে পাঁচটি দাবি তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো-১। অনতিবিলম্বে মুনিয়া হত্যা মামলার প্রধান আসামী বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হোক। ২। মুনিয়া হত্যা মামলায় সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে আনভীরের মা, পিয়াসা এবং তার সহযোগী মিশু হাসান, বাড়ীর মালিক, নিরাপত্ত প্রহরী, গাড়ী চালকসহ সন্দেহভাজন সকল ব্যক্তিকে আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। ৩। গণমাধ্যমকে অপব্যবহার করে বাদী ও মৃত মুনিয়ার চরিত্র হনন করার চেষ্টায় লিপ্ত বসুন্ধরা গ্রুপের সকল মিডিয়ার লাইসেন্স বাতিল করা হোক। ৪। ভূমিদস্যু বসুন্ধরা গ্রুপ কর্তৃক জবরদখলকৃত ব্যক্তি ও সরকারি খাস জমি ভূমি মালিকদের ফেরত দেয়া হোক। ৫। আলোচিত মুনিয়া হত্যা মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মিডিয়া সেলের মাধ্যমে জনসম্মুখে প্রকাশ করা হোক।

হুইপপুত্র শারুনের সঙ্গে মুনিয়ার কথিত সম্পর্ক বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নুসরাত জাহান তানিয়া বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। তার সঙ্গে আমাদের পরিবারের ঘনিষ্ঠতাও নেই। ঘটনার রাতে যে গাড়ীতে করে গুলশানে এসেছিলেন তার উত্স সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে ভিকটিমের বড় বোন জানান, সেটি তার এক পরিচিত-স্বজনের। বিপদের সময় গাড়ীটি ওই দিন আমাকে দিয়েছিল। মুনিয়ার মৃত্যুর পর আনভীরের বিচার দাবি করলেও পাঁচ দিনের মাথায় অভিযুক্ত বসুন্ধরা এমডি আনভীরকে বাদ দিয়ে হুইপপুত্র শারুনকে আসামি করে মামলার আবেদন ও পরবর্তীতে রহস্যজনক ‘নিখোজ’ রয়েছেন বড় ভাই আশিকুর রহমান সবুজ। এ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তানিয়া বলেন, পারিবারিক বিরোধের কারণে অনেকদিন ধরে আমার ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের দুই বোনের সম্পর্ক নেই। তিনি কোন মহল থেকে প্রভাবিত হয়ে এ কাজ করতে পারেন।