ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন জানান, রাজধানীর বঙ্গবাজারে লাগা আগুন নির্বাপণে বর্তমানে
বুধবার দুপুর ১টায় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সামনে গণমাধ্যমকর্মীদের ব্রিফিংকালে তিনি এই তথ্য জানান।
মো. মাইন উদ্দিন বলেন, এনেক্সকো টাওয়ারের চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তলায় যেহেতু গুদাম ঘর, তাই আমরা এখনো সেখানে আগুন নেভানোর কাজ করে যাচ্ছি। গতকাল ও আজ মিলিয়ে ফায়ার সার্ভিসের প্রায় ৭০০ সদস্য আগুন নেভানোর কাজ করেছেন। বর্তমানে আমাদের ১২টি ইউনিট পর্যায়ক্রমে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, গতকাল ভোর ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজার মার্কেটে আগুন লাগে। খবর পেয়ে আমাদের প্রথম ইউনিট ৬টা ১২ মিনিটে অগ্নি নির্বাপণের কাজ শুরু করে। এরপর একে একে যোগ দেয় ৪৮টি ইউনিট। গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ থেকেও দুইটি ইউনিট এসে আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়। পরে দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটে আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই। এখনো আমাদের অগ্নি নির্বাপণের কাজ চলছে। কারণ ছোট ছোট আগুন রয়ে গেছে।
ডিজি বলেন, আমরা এই ভবনটিকে (এনেক্সকো টাওয়ার) ২০১৯ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিলাম। এরপর প্রায় ১০ বার তাদের নোটিশও দিয়েছিলাম, যাতে তারা এখানে ব্যবসা পরিচালনা না করেন।
এসময় তিনি বলেন, আগুন নেভাতে আমাদের পাশের শহীদুল্লাহ হল থেকে পাম্প দিয়ে পানি আনতে হয়েছে। বিমান বাহিনীও হেলিকপ্টারে করে হাতিরঝিল থেকে পানি এনে আগুন নেভাতে সহযোগিতা করেছিল। আমরা বুড়িগঙ্গা থেকেও পানি এনেছিলাম। এই কাজে তিন বাহিনীর পাশাপাশি ওয়াসাও আমাদের সহযোগিতা করেছিল।
তিনি বলেন, এই ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই তদন্ত কমিটি আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে।
বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, অনেক ব্যবসায়ী তাদের সর্বস্ব হারিয়েছেন। আপনারা তাদের আহাজারি দেখেছেন। আমরাও এই ঘটনায় ব্যথিত। আমরা দুর্ঘটনা-দুর্যোগে সবার আগে সবার পাশে থাকি। কোনো দুর্ঘটনা কাম্য নয়।
ফায়ার সার্ভিসের সদরদপ্তরে হামলায় দুঃখ প্রকাশ করেন ডিজি মো. মাইন উদ্দিন। তিনি বলেন, আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের সদরদপ্তরের প্রায় সবাই ঘটনাস্থলে ছিলেন। তখন সদরদপ্তর অনেকটাই অরক্ষিত ছিল। শুধু কয়েকজন আরপি সদস্য ছিলেন। আমরা কখনো আক্রান্ত হবো ভাবিনি। কিন্তু আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়। আমাদের ১৪টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এর মধ্যে একটি গাড়ির দামই প্রায় আট কোটি টাকা।
আগুন ও হামলায় ফায়ার সার্ভিসের ১০ জন সদস্য আহত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আহতদের মধ্যে একজন পরিচালকও ছিলেন। এখনো দুইজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শুধু ফায়ার সার্ভিস সদরদপ্তরে নয়, পুলিশ হেডকোয়ার্টারের কোণায় আমরা আক্রান্ত হয়েছিলাম। সেখানে আমাদের একজন ডিডি আহত হন। তার হাত ফ্র্যাকচার হয়েছে। এই ঘটনায় আমি খুবই মর্মাহত।
তিনি আরও বলেন, এনেক্সকো টাওয়ার ছাড়াও রাজধানীর অনেকগুলো মার্কেট রয়েছে, যেমন রাজধানী মার্কেট, গাউছিয়া- এগুলো আপাতদৃষ্টিতে দেখে মনে হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা আগামীকাল থেকে গণমাধ্যম নিয়ে এগুলো সার্ভে করব। সার্ভে করে স্পটেই সার্ভে রেজাল্ট গণমাধ্যমকর্মীদের দিয়ে আসা হবে। সাথে মার্কেট কমিটিকেও বিষয়টি জানানো হবে।