ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুরে নির্বাচনী সফরে এসে শহরের রাজেন্দ্র কলেজের মাঠে জেলা আওয়ামী লীগের জনসভায় ভাষণ দানকালে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা বলেন। সভা সঞ্চালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এশাহ মো: ইশতিয়াক আরিফ। বেলা পৌনে ১২টার দিকে ঢাকা থেকে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুপুর পৌনে ২টার দিকে ফরিদপুর সার্কিট হাউসে পৌছেন। সেখানে মধ্যাহ্ন ভোজের পর বিকেল ৩টা ১৮ মিনিটের দিকে তিনি জনসভা মঞ্চে উপস্থিত হন। এসময় মুহুর্মুহু করতালি ও স্লোগানের মধ্য দিয়ে উপস্থিত নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ তাকে স্বাগত জানান। বিকেল ৩ টা ৪৩ মিনিটে মঞ্চে বক্তব্য শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় পঞ্চাশ মিনিটেরও বেশি সময় তিনি বক্তৃতা দেন।
প্রধানমন্ত্রী এ পর্যায়ে তার বক্তব্যে ফরিদপুর-১ আসনে সাবেক ছাত্রনেতা আব্দুর রহমান, ফরিদপুর-২ আসনে সাজেদা চৌধুরীর সন্তান শাহাদাব আকবর লাবু চৌধুরী, ফরিদপুর-৩ আসনে শামীম হক, রাজবাড়ী-১ কাজী কেরামত আলী, রাজবাড়ী-মো. জিল্লুল হাকিম ছাড়াও ক্রিকেটরত্ম আখ্যায়িত করে সাকিব আল হাসানকে পরিচয় করে দেন।
প্রধানমন্ত্রী শামীম হককে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন, বিদেশে নেদারল্যান্ডে থেকেও দিন-রাত পরিশ্রম করে শামীম হক সংগঠনকে গড়ে তুলেছিলেন উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, টাকা দিয়ে মানুষ কেনা যায়না। টাকা দিয়ে ফরিদপুরের জনগণকে কেউ কিনতে পারবেনা। ফরিদপুরের মাটি বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান। এ মাটি একেবারে খাঁটি। এ মাটির কাউকে টাকা দিয়ে কেনা যায়না।
আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা শেখ মুজিব জাতিকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করার জন্য জীবনকে উৎসর্গ করেন। এই ফরিদপুরের জেলেও ছিলেন তিনি। এই জেলে তিনি হাঙ্গার স্ট্রাইক করেছিলেন। ভাষা থেকে শুরু করে স্বাধীনতা আন্দোলন সবই করেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।
তিনি বলেন, ৭১ এর ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ পেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। সবকিছু ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিলো। সেখান থেকে শুরু করে মাত্র ৩ বছর ৭ মাসের মধ্যে তিনি দেশকে গড়ে তুলেছিলেন। এই অল্পসময়ে তিনি দেশকে স্বল্পোন্নত দেশে উন্নত করেছিলেন। জাতিসংঘ তার স্বীকৃতি দিয়েছিলো। যুদ্ধ বিধস্ত একটি দেশের ধ্বংসস্তূপে দাড়িয়ে এতো অল্পসময়ের মধ্যে এমন উন্নয়ন কখনোই হয়নি। এমনি একটি সময়ে যারা আমাদের স্বাধীনতা চায়নি তারা নির্মমভাবে হত্যা করে বঙ্গবন্ধুকে। শুধু তাকেই নয়, আমার মা, আমার ১০, দুই ভাই জামাল-কামাল, বছরের ছোট ভাই রাসেল সহ পরিবারের অন্যান্যদের হত্যার কথাও উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান সেই খুনিদের ইমডেমনিটি দেন। এরপর ৬ বছর রিফিউজি হিসেবে আমরা দুই বোন বিদেশে কাটিয়েছি। কোভিড-১৯ এর সময়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তার তৎপরতার তথ্যও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ৩৩টি জেলার মানুষ সম্পূর্ণভাবে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত হয়েছে। হিজড়া, দলিত শ্রেণি, হরিজন সহ তাদেরও ঢাকা শহরে ফ্ল্যাট করে দিয়েছি। আওয়ামী লীগই প্রথম বয়স্কভাতা চালু করেছে। বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, স্বামী নিগৃহিতা তাদের সরাসর মোবাইলে ভাতার টাকা পৌঁছে দিচ্ছি। ২৯ লাখ ১০ হাজার প্রতিবন্ধীদের প্রতিমাসে ভাতা দেই। এদের যারা পড়াশোনা করে তাদেরও ভাতা দিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষ্যে পাঁচ স্তরের কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পাশাপাশি পর্যাপ্ত সংখ্যক ফোর্স মোতায়েন করা হয়। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, এসএসএফ, ডিজিএফআই ও আনসার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। সমাবেশস্থলে নৌকার আদলে তৈরি করা হয়ে শেখ কামাল মুক্তমঞ্চ। মাঠের চারদিকে নিরাপত্তা প্রাচীর থাকায় দুটি ফটক দিয়ে নেতাকর্মীদের প্রবেশের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানেও বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা দেখা গেছে।