ঢাকা ০৭:৩৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
এক নজরে বিশ্ব সংবাদ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ আজকে কোন টিভি চ্যানেলে কোন খেলা আজকের নামাজের সময়সূচি ১৩ সেপ্টেম্বর নিরপেক্ষতার জন্য তফসিলের আগেই উপদেষ্টা পরিষদ থেকে দুই ছাত্র প্রতিনিধিকে পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় আগামী ২৪ ঘণ্টায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে জাকসু নির্বাচন: সন্ধ্যা নয়, ফলাফল হতে পারে রাত ১০টার পর জাকসু নির্বাচন : দায়িত্ব পালনকালে শিক্ষিকার মৃত্যু কয়েক সপ্তাহ ধরেই চড়া সবজির বাজার এখনো উত্তাপ ছড়াচ্ছে, বেড়েছে মুরগির দাম কোনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র হবে না: নেতানিয়াহু ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের বিকল্প আমাদের হাতে নেই: প্রধান উপদেষ্টা

ফরিদপুরে হাসপাতালে চিকিৎসার অবহেলায় বীরমুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু ঘটনায় গভীর রাতে মারামারি ।। আহত ১৮

মাহবুব পিয়াল,ফরিদপুর : ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ  হাসপাতালে চিকিৎসার অবহেলায় একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর ঘটনায় ইন্টার্নি চিকিৎসকদের সাথে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মধ্যে গভীর রাতে ব্যাপক মারামারি  ঘটনায় কমপক্ষে ১৮ জন আহত হয়েছেন। মৃত ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের ৪ সদস্যকে পুলিশ হেফাজতে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

রোগীর আহত স্বজনেরা অভিযোগ করেন, ইন্টার্নি চিকিৎসকদের সাথে বহিরাগত ও মেডিকেল কলেজের ছাত্রনেতারাও অংশ নেন। খবর পেয়ে পুলিশ পৌছে আহতদের উদ্ধার করে সেখান থেকে সড়িয়ে জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে  ভর্তি করেন।

জানা গেছে, শহরের কমলাপুরনিবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা নয়ন খাঁনকে (৯৫) অসুস্থাবস্থায় সোমবার দিবাগত রাত  ১১ টা ২০ মিনিটে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দোতালায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।

নয়ন খানের নাতি আলমগীর বিশ্বাস বলেন, রাত ১২টার দিকে তার নানার শ্বাস কষ্ট হলে নার্সদের জানাই। তারা ইমার্জেন্সিতে চিকিৎসককে জানাতে বলেন। এরপর ইমার্জেন্সিতে কর্তব্যরত চিকিৎসককে রোগীকে ওয়ার্ডে যেয়ে একটু দেখার জন্য এবং পরে ন্যুনতম একটু অক্সিজেন দেয়ার ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু তিনি কোন ব্যবস্থাই নেননি। কিছুক্ষণ পর এসে দেখি আমার নানা মরে গেছেন।

আলমগীর বলেন, এসময় ডাক্তারদের সাথে আমাদের কথাকাটাকাটি হয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে আমার মা আমাকে সেখান থেকে সরিয়ে একটি বাথরুমে আটকে রাখেন। এরপর প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জনের মতো লোক এসে বাথরুম থেকে বের করে আমার উপর হামলা চালায়।

হামলায় আহতরা হলেন, মৃতের নাতি আলমগীর বিশ্বাস (২৮), তৌহিদ বিশ্বাস (২৫), আলিফ খান (১৪) ও হামজা খান (১২), মেয়ে জেসমিন (৪২), সাবিনা ইয়াসমিন (৫০) ও রেবেকা সুলতানা মনি (৩৫) ও আহত হন। এছাড়া ঘটনার সময় মৃতের পাশে বসে আহাজারি করতে থাকা তার বয়োবৃদ্ধ স্ত্রী হালিমা বেগমকেও (৮৫) ধাক্কা মেরে সিট থেকে ফেলে দেয়া হয় বলে অভিযোগ করা হয়। আহতদের মধ্যে উপরোক্ত চারজনকে পুলিশ হেফাজতে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

অপরদিকে, এব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইন্টার্নি চিকিৎসক বলেন, রোগীর স্বজনেরা আমাদের কাছে অক্সিজেন চেয়েছিল। কিন্তু আমাদের কাছে সরবরাহ করার মতো অক্সিজেন না থাকায় আমরা তাদের বাইরে থেকে অক্সিজেন এনে রোগীকে দেয়ার জন্য একটি স্লিপও লিখে দেই। কিন্তু এতে তারা রাজি না হলে কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তারা আমাদের উপর হামলা করে। এতে হাসপাতালের স্টাফ ও অর্ণব (২৬), ইন্টার্ণ ডাক্তার মাহমুদুল (২৬), শামিম (২৪), রোকন (২৪), শিহাব (২৪), এজাজ(২৭), মহিন (২৬), শাকিব (২৬), পাভেল (২৬), ইসতেফার (২৪), জাহিদ (২৬), সাব্বির (২৬) ও ফরহাদ (২৬) আহত হন। তারা সকলে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রাবাসে থাকেন।

এব্যাপারে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম এ জলিল বলেন, খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়। আহতরা আশঙ্কামুক্ত। মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনদেরকে থানায় নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালের চিকিৎসকগণ মিটিংয়ে বসেছেন। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধিন রয়েছে।

এ বিষয়ে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এনামুল হক বলেন, হাসপাতালে প্রতিদিনই কমবেশি ঝামেলা হয়। আমি বর্তমানে ছুটিতে হাসপাতালে বাইরে রয়েছি। তবে গতরাতে একটি মারামারির কথা জানতে পেরেছি। বিস্তারিত জেনে পরবর্তীতে জানানো সম্ভব হবে।

এদিকে ঘটনার সুষ্ট তদন্তের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট(এডিএম)অমিত দেবনাথকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।এই তদন্ত কমিটি আগামি তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন।

Tag :
জনপ্রিয়

এক নজরে বিশ্ব সংবাদ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ফরিদপুরে হাসপাতালে চিকিৎসার অবহেলায় বীরমুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু ঘটনায় গভীর রাতে মারামারি ।। আহত ১৮

Update Time : ০৫:৩১:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মাহবুব পিয়াল,ফরিদপুর : ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ  হাসপাতালে চিকিৎসার অবহেলায় একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর ঘটনায় ইন্টার্নি চিকিৎসকদের সাথে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মধ্যে গভীর রাতে ব্যাপক মারামারি  ঘটনায় কমপক্ষে ১৮ জন আহত হয়েছেন। মৃত ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের ৪ সদস্যকে পুলিশ হেফাজতে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

রোগীর আহত স্বজনেরা অভিযোগ করেন, ইন্টার্নি চিকিৎসকদের সাথে বহিরাগত ও মেডিকেল কলেজের ছাত্রনেতারাও অংশ নেন। খবর পেয়ে পুলিশ পৌছে আহতদের উদ্ধার করে সেখান থেকে সড়িয়ে জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে  ভর্তি করেন।

জানা গেছে, শহরের কমলাপুরনিবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা নয়ন খাঁনকে (৯৫) অসুস্থাবস্থায় সোমবার দিবাগত রাত  ১১ টা ২০ মিনিটে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দোতালায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।

নয়ন খানের নাতি আলমগীর বিশ্বাস বলেন, রাত ১২টার দিকে তার নানার শ্বাস কষ্ট হলে নার্সদের জানাই। তারা ইমার্জেন্সিতে চিকিৎসককে জানাতে বলেন। এরপর ইমার্জেন্সিতে কর্তব্যরত চিকিৎসককে রোগীকে ওয়ার্ডে যেয়ে একটু দেখার জন্য এবং পরে ন্যুনতম একটু অক্সিজেন দেয়ার ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু তিনি কোন ব্যবস্থাই নেননি। কিছুক্ষণ পর এসে দেখি আমার নানা মরে গেছেন।

আলমগীর বলেন, এসময় ডাক্তারদের সাথে আমাদের কথাকাটাকাটি হয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে আমার মা আমাকে সেখান থেকে সরিয়ে একটি বাথরুমে আটকে রাখেন। এরপর প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জনের মতো লোক এসে বাথরুম থেকে বের করে আমার উপর হামলা চালায়।

হামলায় আহতরা হলেন, মৃতের নাতি আলমগীর বিশ্বাস (২৮), তৌহিদ বিশ্বাস (২৫), আলিফ খান (১৪) ও হামজা খান (১২), মেয়ে জেসমিন (৪২), সাবিনা ইয়াসমিন (৫০) ও রেবেকা সুলতানা মনি (৩৫) ও আহত হন। এছাড়া ঘটনার সময় মৃতের পাশে বসে আহাজারি করতে থাকা তার বয়োবৃদ্ধ স্ত্রী হালিমা বেগমকেও (৮৫) ধাক্কা মেরে সিট থেকে ফেলে দেয়া হয় বলে অভিযোগ করা হয়। আহতদের মধ্যে উপরোক্ত চারজনকে পুলিশ হেফাজতে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

অপরদিকে, এব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইন্টার্নি চিকিৎসক বলেন, রোগীর স্বজনেরা আমাদের কাছে অক্সিজেন চেয়েছিল। কিন্তু আমাদের কাছে সরবরাহ করার মতো অক্সিজেন না থাকায় আমরা তাদের বাইরে থেকে অক্সিজেন এনে রোগীকে দেয়ার জন্য একটি স্লিপও লিখে দেই। কিন্তু এতে তারা রাজি না হলে কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তারা আমাদের উপর হামলা করে। এতে হাসপাতালের স্টাফ ও অর্ণব (২৬), ইন্টার্ণ ডাক্তার মাহমুদুল (২৬), শামিম (২৪), রোকন (২৪), শিহাব (২৪), এজাজ(২৭), মহিন (২৬), শাকিব (২৬), পাভেল (২৬), ইসতেফার (২৪), জাহিদ (২৬), সাব্বির (২৬) ও ফরহাদ (২৬) আহত হন। তারা সকলে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রাবাসে থাকেন।

এব্যাপারে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম এ জলিল বলেন, খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়। আহতরা আশঙ্কামুক্ত। মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনদেরকে থানায় নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালের চিকিৎসকগণ মিটিংয়ে বসেছেন। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধিন রয়েছে।

এ বিষয়ে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এনামুল হক বলেন, হাসপাতালে প্রতিদিনই কমবেশি ঝামেলা হয়। আমি বর্তমানে ছুটিতে হাসপাতালে বাইরে রয়েছি। তবে গতরাতে একটি মারামারির কথা জানতে পেরেছি। বিস্তারিত জেনে পরবর্তীতে জানানো সম্ভব হবে।

এদিকে ঘটনার সুষ্ট তদন্তের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট(এডিএম)অমিত দেবনাথকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।এই তদন্ত কমিটি আগামি তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন।