আজ সকাল থেকেই উত্তাল ছিল বোম্বে হাইকোর্ট চত্বর। মাদক-কাণ্ডে অভিযুক্ত শাহরুখ খানের ছেলে আজ জামিন পেয়ে মান্নাতে ফিরবেন কি না, এটাই টক অব দ্য টাউন। কিন্তু না, আজও আরিয়ান খানের ঘরে ফেরা হলো না। দুপুরের পর মাদক-কাণ্ডের এই মামলা আদালতে ওঠে। কিন্তু সন্ধ্যা গড়িয়ে যাওয়াতে আদালত এই মামলার শুনানি আজ স্থগিত রেখেছেন। আগামীকাল বেলা আড়াইটার পর বোম্বে হাইকোর্ট আরিয়ান খানের জামিনের ওপর রায় শোনাবেন।
আরিয়ান খানের পক্ষ থেকে আজ আইনি ময়দানে লড়তে নেমেছিলেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সতীশ মানশিন্ডে, অমিত দেশাই, আনন্দিনীর মতো নামকরা আইনজীবীরা। মুকেশ রোহতগি আদালতকে জানান যে আরিয়ানের ওপর কোনো মামলা করা যায় না।
কারণ, তাঁর কাছ থেকে কোনো মাদক পাওয়া যায়নি। আরিয়ানের ডাক্তারি পরীক্ষাও হয়নি। তাই আরিয়ানের আইনজীবীর দাবী যে তাঁর (আরিয়ান) গ্রেপ্তারি ভুল। তাঁকে এই মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। মুকুল আরও জানিয়েছেন যে আরিয়ানকে সেদিন প্রমোদতরিতে আয়োজিত পার্টিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন আয়োজকেরা। তাই সেদিন এই তারকাপুত্র গ্রাহক হিসেবে পার্টিতে যাননি। রোহতগির দাবি, আরিয়ানকে নিশানা করা হয়েছে। প্রমোদতরিতে যাওয়ার আগেই আরিয়ানকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ব্যুরো (এনসিবি) আটক করেছিল। মাদক-কাণ্ড মামলার অন্যতম অভিযুক্ত আরবাজ মার্চেন্টের হয়েও সাফাই দিয়েছেন এই আইনজীবী।
বলেছেন যে আরিয়ানের বন্ধু আরবাজ মার্চেন্টের থেকে মাদক পাওয়া গিয়েছে, আর এ জন্য তাঁর মক্কেলকে (আরিয়ানকে) কোনোভাবেই গ্রেপ্তার করা যায় না। মুকুল রোহতগি জানিয়েছেন যে আরবাজ মার্চেন্টের কাছ থেকে ছয় গ্রাম মাদক উদ্ধার করেছে এনসিবি। আর এটা মাত্রায় অত্যন্ত কম। আর আরবাজের জুতার মধ্যে যে মাদক পাওয়া গেছে, তা ‘প্ল্যান্ট’ করা হয়েছিল। এই আইনজীবী বলেছেন যে আইনের চোখে আরিয়ান কখনোই অপরাধী নয়।
আদালত আরিয়ানের আইনজীবীদের কাছে এই মামলার ১৭ নম্বর অভিযুক্ত অচিত কুমারের সঙ্গে আরিয়ানের সম্পর্কের কথা জানতে চান। আইনজীবী অমিত দেশাই আরিয়ানের পক্ষ থেকে বলেন যে অচিত কুমারের সঙ্গে আরিয়ানের মাদকসংক্রান্ত কোনো হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট নেই। তাঁদের মধ্যে একটা গেম নিয়ে চ্যাট হয়েছিল। রোহতগি বলেছেন, ‘অতীতে এ ধরনের একাধিক মামলা এসেছে। কিন্তু আমাদের পক্ষ অত্যন্ত মজবুত।’
শুরু থেকেই আরিয়ানের জামিনের বিরোধিতা করে আসছে এনসিবি। জামিনের বিরোধিতা করে এনসিবি এর আগে জানায় যে আরিয়ান জেলের বাইরে বের হলে এই মামলার সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারেন। ইতিমধ্যে শাহরুখ খানের ব্যবস্থাপক পূজা দদলানির বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে যে তিনি এই মামলার সাক্ষীদের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। এই তদন্তকারী সংস্থার দাবি, ইতিমধ্যে প্রভাকর সেইল নামের এক সাক্ষীকে তাঁরা প্রভাবিত করেছেন। এনসিবি আদালতকে জানিয়েছে যে তাদের তদন্তে উঠে এসেছে, আরিয়ানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মাদক সরবরাহকারীদের সংযোগ আছে। তাই তদন্তের স্বার্থে আরিয়ানের জেলে থাকার প্রয়োজন বলে দাবি তুলেছিল এনসিবি। আদালতে তারা রিয়া চক্রবর্তীর মাদকসম্পর্কিত মামলার কথাও উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছিল। আগামীকাল এনসিবির আইনজীবীরা আরও তথ্য-প্রমাণাদি আদালতের কাছে পেশ করবেন বলে জানা গেছে।
এনসিবির হাতে এই মামলার প্রমাণ স্বরূপ আরিয়ানের কিছু হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট আছে। বলিউড অভিনেত্রী অনন্যা পান্ডের সঙ্গে তিনি এই চ্যাট করেছিলেন। আরিয়ান চ্যাটে অনন্যার থেকে ‘গাঁজা’ চেয়েছেন বলে জানা গেছে। এই হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের ভিত্তিতে অনন্যাকে দুবার জেরা করেছে এনসিবি। অনন্যার বক্তব্য যে এটা নিছকই মজার ছলে লেখা। আইনজীবী মুকুল রোহতগি আজ আদালতকে জানান, আরিয়ানের মুঠোফোন থেকে পাওয়া হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের সঙ্গে প্রমোদতরির পার্টির কোনো সম্পর্ক নেই। তাই এই চ্যাটের ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা অন্যায়।