ঢাকা ১০:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
লন্ডনে মাহফুজ আলমের ওপর আ.লীগ নেতাকর্মীদের হামলার চেষ্টা এক নজরে বিশ্ব সংবাদ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ আজকে কোন টিভি চ্যানেলে কোন খেলা আজকের নামাজের সময়সূচি ১৩ সেপ্টেম্বর নিরপেক্ষতার জন্য তফসিলের আগেই উপদেষ্টা পরিষদ থেকে দুই ছাত্র প্রতিনিধিকে পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় আগামী ২৪ ঘণ্টায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে জাকসু নির্বাচন: সন্ধ্যা নয়, ফলাফল হতে পারে রাত ১০টার পর জাকসু নির্বাচন : দায়িত্ব পালনকালে শিক্ষিকার মৃত্যু কয়েক সপ্তাহ ধরেই চড়া সবজির বাজার এখনো উত্তাপ ছড়াচ্ছে, বেড়েছে মুরগির দাম কোনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র হবে না: নেতানিয়াহু

‘নুরাল পাগলার’ মরদেহ তুলে নিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে তৌহিদি জনতা

  • অনলাইন ডেস্ক
  • Update Time : ০৫:৫০:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ১৮ Time View
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নিজেকে ‘ইমাম মাহাদি’ দাবি করা নুরুল হক ওরফে ‘নুরাল পাগলার’ মরদেহ তুলে নিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে তৌহিদি জনতা। এর আগে তারা সেখানকার দরবার শরিফ ও বাড়িতেও হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এতে দরবারের ভক্তসহ ৫০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।
আজ শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জুড়ান মোল্লাপাড়ায় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদুর রহমান জানান। এ সময় ইউএনওর গাড়ি, পুলিশের দুইটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
সম্প্রতি মারা যাওয়া নুরুল হকের কবর মাটি থেকে কিছুটা উপরে দাফন করে সেখানে কাবা শরিফের আদল দেওয়া হয়। এ নিয়ে তৌহিদি জনতার মধ্যে গত কয়েকদিন ধরেই উত্তেজনা চলছিল। স্থানীয় প্রশাসন দু’পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছিলেন। তার মধ্যেই জুমার নামাজের পর পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, বিভিন্ন স্থান থেকে তৌহিদি জনতা এসে শহীদ মহিউদ্দিন আনসার ক্লাবে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। তারা নুরুল হকের বাড়ি ও দরবারের ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। পরে তারা দরবার শরিফ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। পুলিশ আগে থেকে সেখানে থাকলেও বিপুল মানুষের কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তারা সক্ষম হয়নি। পরে সেনাবাহিনী ও র‌্যাব এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তখন তৌহিদি জনতা পিছু হটে নুরুল হকের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে বিক্ষোভ করে। এ সময় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। তখন আহতদের উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ‌্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে পাঠায়।
এর কিছু পরে বাড়িতে গিয়ে দ্বিতীয় দফায় হামলা চালায় তৌহিদি জনতা। তখন তারা বাড়ির সামনে থাকা নুরুল হকের কবর থেকে মরদেহ তুলে নিয়ে চলে যায়। পরে তারা মরদেহটি ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পদ্মার মোড়ে নিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এই অবস্থায় সেখানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এলাকায় আতঙ্ক রয়েছে।
গোয়ালন্দের ইউএনও নাহিদুর রহমান বলেন, ‘এ ঘটনায় আহতের সঠিক সংখ‌্যা এখনও বলা যাচ্ছে না। ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী ও র‌্যাব রয়েছে। পরিস্থিতি থমথমে।’
স্থানীয়রা জানান, নুরুল হক আশির দশকের মাঝামাঝি নিজেকে ‘ইমাম মাহাদি’ বলে দাবি করেছিলেন। তখন চাপের মুখে তিনি এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন। পরে আবার তিনি এলাকায় ফিরে আসেন। তার বেশ কিছু ভক্ত-অনুসারীও রয়েছে। ২৩ অগাস্ট ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। পরে তার প্রতিষ্ঠিত গোয়ালন্দ দরবার শরীফের ভেতরে কাবা শরিফের আদলে রং করা মাটি থেকে প্রায় ১২ ফুট উঁচু বেদিতে দাফন করা হয়। এরপর থেকে কবর নিচু, রঙ পরিবর্তন ও ইমাম মাহাদির দরবার শরিফ লেখা সাইনবোর্ড অপসারণের দাবি তোলেন তৌহিদি জনতা বিক্ষোভ করে আসছিলেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাস‌কের স‌ম্মেলন ক‌ক্ষে‌ উভয় প‌ক্ষ‌কে নি‌য়ে এক‌টি সভাও হ‌য়ে‌ছে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি সমাধানে এক‌টি ক‌মি‌টিও গঠন করে। কবরের ব্যাপারে প্রশাসন নুরুল হকের পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেছিল। পরিবার বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় নিয়েছিল। শুক্রবার সেখানে হামলার ঘটনা ঘটল। থমথমে পরিস্থিতির কারণে পুলিশ, তৌহিদি জনতার নেতৃত্ব ও নুরুল হকের পরিবারের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হচ্ছে।
Tag :
জনপ্রিয়

লন্ডনে মাহফুজ আলমের ওপর আ.লীগ নেতাকর্মীদের হামলার চেষ্টা

‘নুরাল পাগলার’ মরদেহ তুলে নিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে তৌহিদি জনতা

Update Time : ০৫:৫০:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নিজেকে ‘ইমাম মাহাদি’ দাবি করা নুরুল হক ওরফে ‘নুরাল পাগলার’ মরদেহ তুলে নিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে তৌহিদি জনতা। এর আগে তারা সেখানকার দরবার শরিফ ও বাড়িতেও হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এতে দরবারের ভক্তসহ ৫০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।
আজ শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জুড়ান মোল্লাপাড়ায় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদুর রহমান জানান। এ সময় ইউএনওর গাড়ি, পুলিশের দুইটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
সম্প্রতি মারা যাওয়া নুরুল হকের কবর মাটি থেকে কিছুটা উপরে দাফন করে সেখানে কাবা শরিফের আদল দেওয়া হয়। এ নিয়ে তৌহিদি জনতার মধ্যে গত কয়েকদিন ধরেই উত্তেজনা চলছিল। স্থানীয় প্রশাসন দু’পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছিলেন। তার মধ্যেই জুমার নামাজের পর পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, বিভিন্ন স্থান থেকে তৌহিদি জনতা এসে শহীদ মহিউদ্দিন আনসার ক্লাবে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। তারা নুরুল হকের বাড়ি ও দরবারের ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। পরে তারা দরবার শরিফ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। পুলিশ আগে থেকে সেখানে থাকলেও বিপুল মানুষের কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তারা সক্ষম হয়নি। পরে সেনাবাহিনী ও র‌্যাব এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তখন তৌহিদি জনতা পিছু হটে নুরুল হকের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে বিক্ষোভ করে। এ সময় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। তখন আহতদের উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ‌্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে পাঠায়।
এর কিছু পরে বাড়িতে গিয়ে দ্বিতীয় দফায় হামলা চালায় তৌহিদি জনতা। তখন তারা বাড়ির সামনে থাকা নুরুল হকের কবর থেকে মরদেহ তুলে নিয়ে চলে যায়। পরে তারা মরদেহটি ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পদ্মার মোড়ে নিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এই অবস্থায় সেখানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এলাকায় আতঙ্ক রয়েছে।
গোয়ালন্দের ইউএনও নাহিদুর রহমান বলেন, ‘এ ঘটনায় আহতের সঠিক সংখ‌্যা এখনও বলা যাচ্ছে না। ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী ও র‌্যাব রয়েছে। পরিস্থিতি থমথমে।’
স্থানীয়রা জানান, নুরুল হক আশির দশকের মাঝামাঝি নিজেকে ‘ইমাম মাহাদি’ বলে দাবি করেছিলেন। তখন চাপের মুখে তিনি এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন। পরে আবার তিনি এলাকায় ফিরে আসেন। তার বেশ কিছু ভক্ত-অনুসারীও রয়েছে। ২৩ অগাস্ট ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। পরে তার প্রতিষ্ঠিত গোয়ালন্দ দরবার শরীফের ভেতরে কাবা শরিফের আদলে রং করা মাটি থেকে প্রায় ১২ ফুট উঁচু বেদিতে দাফন করা হয়। এরপর থেকে কবর নিচু, রঙ পরিবর্তন ও ইমাম মাহাদির দরবার শরিফ লেখা সাইনবোর্ড অপসারণের দাবি তোলেন তৌহিদি জনতা বিক্ষোভ করে আসছিলেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাস‌কের স‌ম্মেলন ক‌ক্ষে‌ উভয় প‌ক্ষ‌কে নি‌য়ে এক‌টি সভাও হ‌য়ে‌ছে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি সমাধানে এক‌টি ক‌মি‌টিও গঠন করে। কবরের ব্যাপারে প্রশাসন নুরুল হকের পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেছিল। পরিবার বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় নিয়েছিল। শুক্রবার সেখানে হামলার ঘটনা ঘটল। থমথমে পরিস্থিতির কারণে পুলিশ, তৌহিদি জনতার নেতৃত্ব ও নুরুল হকের পরিবারের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হচ্ছে।