ঢাকা ০৫:০৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পুরান ঢাকা যেন সাকরাইনের আনন্দে মাতোয়ারা

  • অনলাইন ডেস্ক
  • Update Time : ০৫:১৪:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২২
  • ২২৮ Time View

পুরানো ঢাকার আকাশে রঙ ছড়িয়েছে ঘুড়ি। আর বাড়ির ছাদে পথে পথে আনন্দে উদ্বেল মানুষ মেতে উঠেছিল ঘুড়ি ওড়ানোর আনন্দে। বেলা যত গড়িয়েছে পুরান ঢাকার আকাশে ততই হাওয়ায় উড়েছে রং বেরঙের ঘুড়ি। বাড়ির ছাদে ছাদে আনন্দ আয়োজন।

উৎসবমুখর পরিবেশে বাড়ির ছাদ থেকে ঘুড়ি ওড়ানো, আতশবাজি ফোটানো এবং মুখে কেরোসিন নিয়ে আগুন খেলাও খেলেছেন অনেকে। সব মিলিয়ে পুরান ঢাকা যেন সাকরাইনের আনন্দে মাতোয়ারা।

সারাদিন তরুণ-তরুণীদের ঘুড়ি ওড়ানো, ঢাকাইয়াদের বাড়ি বাড়ি পিঠা উৎসব, বাড়িতে আর ছাদে জমকালো আলোকসজ্জা, আগুন নিয় খেলা, সন্ধ্যায় বর্ণিল আতশবাজি ও ফানুসে ছেয়ে যায় পুরান ঢাকার আকাশ। ঐতিহ্যবাহী এই উৎসব ঘুড়ি উৎসব নামে পরিচিত হলেও বর্তমানে এতে যোগ হয়েছে আতশবাজি, মুখে কেরোসিন নিয়ে মুখের সামনে আগুনের মশাল ধরে আগুন খেলা, ডিজে নাচ, প্রজেক্টর আর উচ্চশব্দে গানসহ আধুনিক নানা অনুষঙ্গ।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে পুরান গেন্ডারিয়া, শাখারিবাজার, লক্ষ্মীবাজার, বাংলাবাজার, ফরাশগঞ্জ, সূত্রাপুর, নারিন্দা, স্বামীবাগসহ পুরান ঢাকার বাসা-বাড়ির ছাদে ঘুড়ি ওড়ানো হচ্ছে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল এলে আকাশে বাড়তে থাকে ঘুড়ির রাজত্ব। গোধূলী লগ্ন থেকে শুরু হয় আতশবাজি আর ফানুসের ছড়াছড়ি। সন্ধ্যা গড়ালে বাড়তে থাকে আতশবাজি, উচ্চশব্দে গান আর ডিজে নাচ।

ঘুড়ির চেয়ে আতশবাজি আর ডিজের প্রতি তরুণ-তরুণীদের আসক্তি বেশি লক্ষ্য করা গেছে। তরুণ-তরুণীরা দুই একদিন আগে থেকেই ব্যস্ত থাকেন আতশবাজি আর ব্যান্ড পার্টির আয়োজনে। সন্ধ্যার পর পুরান ঢাকার বাসাবাড়ির ছাদে দলবল নিয়ে শুরু হয় মাত্রারিক্ত ডিজে, আতশবাজি আর ফানুসের ছড়াছড়ি।

পুরান ঢাকার শিংটোলা পঞ্চায়েতের রঘুনাথ বলেন, ছেলে-মেয়েদের এখন ঘুড়ির প্রতি আগ্রহ কম। ঘুড়ির চেয়ে আতশবাজি আর রাতে ডিজে পার্টি করেই তারা উৎসব পালন করে। আমরা সকাল-সন্ধ্যা ঘুড়ি ওড়ানো আর বন্ধুদের সঙ্গে ঘুড়ি কাটাকাটির প্রতিযোগিতা করতাম।

তিনি বলেন, আমাদের মাসি পিসিরা বিভিন্ন রকমের পিঠা বানাতেন, এখন সেটি নেই। এখন আমাদের ঢাকাইয়াদের খুব কম বাড়িতেই পিঠা উৎসব চলে।

লক্ষ্মীবাজার এলাকার একদল যুবক বলেন, সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুড়ি ওড়াই, রাতে তো আর ঘুড়ি ওড়ানো যায় না। বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আতশবাজি আর নাচ-গানই চলে বেশি। দিনের আয়োজনের চেয়ে রাতের আতশবাজি, ডিজে পার্টির নাচ-গান আর রং মাখামাখিতেই তারা বেশি আনন্দ ভোগ করেন বলে জানান।

উল্লেখ্য পৌষের দিন শুক্রবার ছিল সাকরাইন উৎসব। ঘুড়ি ওড়ানোর ঐতিহ্যবাহী উৎসবকে পুরান ঢাকার বাসিন্দারা বলে সাকরাইন উৎসব। সাকরাইন উপলক্ষে দিনভর চলে ঘুড়ি ওড়ানো আর কাটাকাটির খেলা। সঙ্গে নাচ-গান আর শীতের পিঠাপুলি খাওয়া। আর সন্ধ্যায় শুরু হয় আতশবাজি, ফানুস উড়ানো আর কেরোসিন মুখে আগুনের হলকা ছোড়ার কসরত।

Tag :
জনপ্রিয়

পুরান ঢাকা যেন সাকরাইনের আনন্দে মাতোয়ারা

Update Time : ০৫:১৪:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২২

পুরানো ঢাকার আকাশে রঙ ছড়িয়েছে ঘুড়ি। আর বাড়ির ছাদে পথে পথে আনন্দে উদ্বেল মানুষ মেতে উঠেছিল ঘুড়ি ওড়ানোর আনন্দে। বেলা যত গড়িয়েছে পুরান ঢাকার আকাশে ততই হাওয়ায় উড়েছে রং বেরঙের ঘুড়ি। বাড়ির ছাদে ছাদে আনন্দ আয়োজন।

উৎসবমুখর পরিবেশে বাড়ির ছাদ থেকে ঘুড়ি ওড়ানো, আতশবাজি ফোটানো এবং মুখে কেরোসিন নিয়ে আগুন খেলাও খেলেছেন অনেকে। সব মিলিয়ে পুরান ঢাকা যেন সাকরাইনের আনন্দে মাতোয়ারা।

সারাদিন তরুণ-তরুণীদের ঘুড়ি ওড়ানো, ঢাকাইয়াদের বাড়ি বাড়ি পিঠা উৎসব, বাড়িতে আর ছাদে জমকালো আলোকসজ্জা, আগুন নিয় খেলা, সন্ধ্যায় বর্ণিল আতশবাজি ও ফানুসে ছেয়ে যায় পুরান ঢাকার আকাশ। ঐতিহ্যবাহী এই উৎসব ঘুড়ি উৎসব নামে পরিচিত হলেও বর্তমানে এতে যোগ হয়েছে আতশবাজি, মুখে কেরোসিন নিয়ে মুখের সামনে আগুনের মশাল ধরে আগুন খেলা, ডিজে নাচ, প্রজেক্টর আর উচ্চশব্দে গানসহ আধুনিক নানা অনুষঙ্গ।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে পুরান গেন্ডারিয়া, শাখারিবাজার, লক্ষ্মীবাজার, বাংলাবাজার, ফরাশগঞ্জ, সূত্রাপুর, নারিন্দা, স্বামীবাগসহ পুরান ঢাকার বাসা-বাড়ির ছাদে ঘুড়ি ওড়ানো হচ্ছে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল এলে আকাশে বাড়তে থাকে ঘুড়ির রাজত্ব। গোধূলী লগ্ন থেকে শুরু হয় আতশবাজি আর ফানুসের ছড়াছড়ি। সন্ধ্যা গড়ালে বাড়তে থাকে আতশবাজি, উচ্চশব্দে গান আর ডিজে নাচ।

ঘুড়ির চেয়ে আতশবাজি আর ডিজের প্রতি তরুণ-তরুণীদের আসক্তি বেশি লক্ষ্য করা গেছে। তরুণ-তরুণীরা দুই একদিন আগে থেকেই ব্যস্ত থাকেন আতশবাজি আর ব্যান্ড পার্টির আয়োজনে। সন্ধ্যার পর পুরান ঢাকার বাসাবাড়ির ছাদে দলবল নিয়ে শুরু হয় মাত্রারিক্ত ডিজে, আতশবাজি আর ফানুসের ছড়াছড়ি।

পুরান ঢাকার শিংটোলা পঞ্চায়েতের রঘুনাথ বলেন, ছেলে-মেয়েদের এখন ঘুড়ির প্রতি আগ্রহ কম। ঘুড়ির চেয়ে আতশবাজি আর রাতে ডিজে পার্টি করেই তারা উৎসব পালন করে। আমরা সকাল-সন্ধ্যা ঘুড়ি ওড়ানো আর বন্ধুদের সঙ্গে ঘুড়ি কাটাকাটির প্রতিযোগিতা করতাম।

তিনি বলেন, আমাদের মাসি পিসিরা বিভিন্ন রকমের পিঠা বানাতেন, এখন সেটি নেই। এখন আমাদের ঢাকাইয়াদের খুব কম বাড়িতেই পিঠা উৎসব চলে।

লক্ষ্মীবাজার এলাকার একদল যুবক বলেন, সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুড়ি ওড়াই, রাতে তো আর ঘুড়ি ওড়ানো যায় না। বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আতশবাজি আর নাচ-গানই চলে বেশি। দিনের আয়োজনের চেয়ে রাতের আতশবাজি, ডিজে পার্টির নাচ-গান আর রং মাখামাখিতেই তারা বেশি আনন্দ ভোগ করেন বলে জানান।

উল্লেখ্য পৌষের দিন শুক্রবার ছিল সাকরাইন উৎসব। ঘুড়ি ওড়ানোর ঐতিহ্যবাহী উৎসবকে পুরান ঢাকার বাসিন্দারা বলে সাকরাইন উৎসব। সাকরাইন উপলক্ষে দিনভর চলে ঘুড়ি ওড়ানো আর কাটাকাটির খেলা। সঙ্গে নাচ-গান আর শীতের পিঠাপুলি খাওয়া। আর সন্ধ্যায় শুরু হয় আতশবাজি, ফানুস উড়ানো আর কেরোসিন মুখে আগুনের হলকা ছোড়ার কসরত।