ঢাকা ০৭:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫, ২৬ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
গাজাবাসীদের ওপর যে নির্যাতন হয়, তার তুলনায় আমাদের সঙ্গে যা হয়েছে, তা কিছুই নয় ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কার উৎসর্গ করলেন মারিয়া কোরিনা মাচাদো ট্রাম্পকে নোবেল না দেয়া নোবেল কমিটির রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত: হোয়াইট হাউজ চলতি বছর শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন ভেনেজুয়েলার মারিয়া কোরিনা মাচাদো এক নজরে বিশ্ব সংবাদ: ১০ অক্টোবর ২০২৫ আজকে কোন টিভি চ্যানেলে কোন খেলা আজকের নামাজের সময়সূচি: ১১ অক্টোবর ফিলিপাইনে শক্তিশালী ভূমিকম্পের জেরে ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে ছোট আকারের সুনামি আঘাত হেনেছে যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদনের পরও গাজায় নতুন করে বিমান হামলা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় যুদ্ধবিরতি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়েছে

ভারতে ২ মার্কিন ডলারের ডোজ বাংলাদেশে ৫ মার্কিন ডলার, বিশ্বব্যাপী মহামারি চলাকালে টিকার দামের বৈষম্য কতটা নৈতিক

  • অনলাইন ডেস্ক
  • Update Time : ০৫:৪৯:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ জানুয়ারী ২০২১
  • ৩০৩ Time View

জানুয়ারির শেষ বা ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে অক্সফোর্ড এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার যৌথ উদ্যোগে তৈরি টিকাটি বাংলাদেশ পাবে বলে আশা করছে।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের টিকার একটি ডোজ স্থানীয়ভাবে ২ মার্কিন ডলারে বিক্রি করা হবে। সেই টিকাই বাংলাদেশ সরকারের কাছে বিক্রি করা হবে প্রতি ডোজ প্রায় ৫ ডলারে।

সরকারি পর্যায়ে ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে বাংলাদেশের সরকার পাঁচ ডলার বা চারশো টাকা কিছু বেশি দরে টিকাটি কিনবে। তবে বেসরকারি পর্যায়ে এই টিকাটি কিনতে হবে আট ডলার বা প্রায় সাতশো টাকা করে। গ্রাহক পর্যায়ে দাম আরও কিছুটা বাড়তে পারে।

বাংলাদেশে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

ব্রিটেনের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে তৈরি করোনাভাইরাসের টিকাটির ভারতের উৎপাদনের দায়িত্ব পেয়েছে সিরাম ইন্সটিটিউট।

তাদের কাছ থেকে বাংলাদেশের বেসরকারি ওষুধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস টিকাটি আমদানি করে সরবরাহ করবে।

অক্সফোর্ড (অ্যাস্ট্রাজেনেকা) তাদের করোনা টিকা বিকাশের জন্য কোভ্যাক্স থেকে ‘জনস্বার্থে’ ৩৮৪ দশমিক ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পেয়েছিল। এই সাহায্য দুই ভাগে মঞ্জুর করা হয়: ২০২০ সালের মার্চে প্রাথমিক অনুদান, যা প্রি ক্লিনিক্যাল এবং প্রথম ধাপের পরীক্ষায় (১.১ মিলিয়ন ডলার) সাহায্য করতে এবং ২০২০ সালের জুনে টিকা উৎপাদনের জন্য প্রযুক্তি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্থানান্তরে সাহায্য করতে (৩৮৩ মিলিয়ন ডলার)।

এই অনুদান কঠোর শর্তে দেওয়া হয়েছিল যে অক্সফোর্ড (অ্যাস্ট্রাজেনেকা) এবং এর উৎপাদনকারী অংশীদারদের অবশ্যই মহামারি চলাকালে অলাভজনক ভিত্তিতে টিকাগুলো বিক্রি করতে রাজি থাকতে হবে এবং সে অনুসারে অক্সফোর্ড (অ্যাস্ট্রাজেনেকা) প্রকাশ্যে বিবৃতি দেয় যে এই টিকাটি মহামারিকালে অলাভজনক ভিত্তিতেই বিক্রি করা হবে।

অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকা আর্জেন্টিনা, চীন, ভারত, জাপান, মেক্সিকো, দক্ষিণ কোরিয়া এবং রাশিয়ার বেশ কয়েকটি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে প্রযুক্তি স্থানান্তর করেছিল। সেরাম ইনস্টিটিউট হলো সেই চুক্তির অধীন ভারতের একটি টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, যেখানে কোভ্যাক্সের সহায়তা পাওয়া অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রযুক্তি সরবরাহ করা হয়েছিল। কিন্তু ভারত সরকার এই চুক্তি উৎপাদন ব্যবস্থায় কোনো পক্ষ নয়।

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড (বেক্সিমকো ফার্মা), বাংলাদেশে নিবন্ধিত একটি বেসরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, যা বাংলাদেশে অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার একমাত্র পরিবেশক। তারা করোনাভাইরাসের টিকার ৩০ মিলিয়ন ডোজের একমাত্র উৎস সরবরাহকারী এবং পরিবেশনকারীরূপে সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) স্থান করে নেয়, যেখানে বাংলাদেশ সরকার ছিল বা সহ-স্বাক্ষরকারী।

এটি কোভ্যাক্স দ্বারা প্রকাশ্যে প্রকাশিত পূর্বের বক্তব্যের বিপরীত যে তাদের গবেষণা ও উন্নয়ন সুবিধা থেকে আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে যেকোনো টিকা তৈরি হলে তা ‘গ্লোবাল পাবলিক গুড’ হিসেবে গণ্য হবে এবং একেবারে বাণিজ্যিকীকরণ করা হবে না।

করোনায় তীব্রভাবে আক্রান্ত অন্যান্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেরও করোনার টিকার খুব প্রয়োজন। যেহেতু কোভ্যাক্স বাংলাদেশের ১৬ কোটি ৪০ লাখ জনসংখ্যার সবার জন্য প্রয়োজনীয় মাত্রার ২০ শতাংশ সরবরাহ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, সেহেতু বাংলাদেশ সরকারকে তার ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষকে স্বল্প সময়ের মধ্যে টিকা দেওয়া নিশ্চিত করতে দ্বিপক্ষীয়ভাবে অন্যান্য বিকল্পগুলোর সন্ধান করতে হবে।

প্রথমত, এটি কি আগের ঘোষণার লঙ্ঘন নয়, যেখানে বলা হয়েছিল অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাসহ কোভ্যাক্সের গবেষণা উন্নয়ন উৎপাদন বিনিয়োগ কমিটির সহায়তায় বিকশিত ও উৎপাদিত সব টিকাগুলো গ্লোবাল পাবলিক গুড এবং সব দেশ অলাভজনক ভিত্তিতে সেগুলোর অধিকার লাভ করবে?

দ্বিতীয়ত, কোভ্যাক্সের লক্ষ্য ন্যূনতম খরচে টিকার ন্যায়সংগত বিতরণ নিশ্চিত করা। তাহলে বেক্সিমকো ফার্মাকে বাংলাদেশে করোনার টিকা সংগ্রহ ও বিতরণের একমাত্র অধিকার দেওয়া সেরাম ইনস্টিটিউটের পক্ষে কতটা নৈতিক?

তৃতীয়ত এবং সর্বোপরি, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের টিকার একটি ডোজ স্থানীয়ভাবে ২ মার্কিন ডলারে বিক্রি করা হবে। সেই টিকাই বাংলাদেশ সরকারের কাছে বিক্রি করা হবে প্রতি ডোজ প্রায় ৫ ডলারে। কিন্তু কেন? এর যুক্তি কী? বিশ্বব্যাপী মহামারি চলাকালে টিকার দামের এই বৈষম্য কতটা নৈতিক?

সূত্র: বিবিসি বাংলা এবং প্রথম আলো

Tag :
জনপ্রিয়

গাজাবাসীদের ওপর যে নির্যাতন হয়, তার তুলনায় আমাদের সঙ্গে যা হয়েছে, তা কিছুই নয়

ভারতে ২ মার্কিন ডলারের ডোজ বাংলাদেশে ৫ মার্কিন ডলার, বিশ্বব্যাপী মহামারি চলাকালে টিকার দামের বৈষম্য কতটা নৈতিক

Update Time : ০৫:৪৯:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ জানুয়ারী ২০২১

জানুয়ারির শেষ বা ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে অক্সফোর্ড এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার যৌথ উদ্যোগে তৈরি টিকাটি বাংলাদেশ পাবে বলে আশা করছে।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের টিকার একটি ডোজ স্থানীয়ভাবে ২ মার্কিন ডলারে বিক্রি করা হবে। সেই টিকাই বাংলাদেশ সরকারের কাছে বিক্রি করা হবে প্রতি ডোজ প্রায় ৫ ডলারে।

সরকারি পর্যায়ে ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে বাংলাদেশের সরকার পাঁচ ডলার বা চারশো টাকা কিছু বেশি দরে টিকাটি কিনবে। তবে বেসরকারি পর্যায়ে এই টিকাটি কিনতে হবে আট ডলার বা প্রায় সাতশো টাকা করে। গ্রাহক পর্যায়ে দাম আরও কিছুটা বাড়তে পারে।

বাংলাদেশে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

ব্রিটেনের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে তৈরি করোনাভাইরাসের টিকাটির ভারতের উৎপাদনের দায়িত্ব পেয়েছে সিরাম ইন্সটিটিউট।

তাদের কাছ থেকে বাংলাদেশের বেসরকারি ওষুধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস টিকাটি আমদানি করে সরবরাহ করবে।

অক্সফোর্ড (অ্যাস্ট্রাজেনেকা) তাদের করোনা টিকা বিকাশের জন্য কোভ্যাক্স থেকে ‘জনস্বার্থে’ ৩৮৪ দশমিক ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পেয়েছিল। এই সাহায্য দুই ভাগে মঞ্জুর করা হয়: ২০২০ সালের মার্চে প্রাথমিক অনুদান, যা প্রি ক্লিনিক্যাল এবং প্রথম ধাপের পরীক্ষায় (১.১ মিলিয়ন ডলার) সাহায্য করতে এবং ২০২০ সালের জুনে টিকা উৎপাদনের জন্য প্রযুক্তি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্থানান্তরে সাহায্য করতে (৩৮৩ মিলিয়ন ডলার)।

এই অনুদান কঠোর শর্তে দেওয়া হয়েছিল যে অক্সফোর্ড (অ্যাস্ট্রাজেনেকা) এবং এর উৎপাদনকারী অংশীদারদের অবশ্যই মহামারি চলাকালে অলাভজনক ভিত্তিতে টিকাগুলো বিক্রি করতে রাজি থাকতে হবে এবং সে অনুসারে অক্সফোর্ড (অ্যাস্ট্রাজেনেকা) প্রকাশ্যে বিবৃতি দেয় যে এই টিকাটি মহামারিকালে অলাভজনক ভিত্তিতেই বিক্রি করা হবে।

অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকা আর্জেন্টিনা, চীন, ভারত, জাপান, মেক্সিকো, দক্ষিণ কোরিয়া এবং রাশিয়ার বেশ কয়েকটি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে প্রযুক্তি স্থানান্তর করেছিল। সেরাম ইনস্টিটিউট হলো সেই চুক্তির অধীন ভারতের একটি টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, যেখানে কোভ্যাক্সের সহায়তা পাওয়া অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রযুক্তি সরবরাহ করা হয়েছিল। কিন্তু ভারত সরকার এই চুক্তি উৎপাদন ব্যবস্থায় কোনো পক্ষ নয়।

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড (বেক্সিমকো ফার্মা), বাংলাদেশে নিবন্ধিত একটি বেসরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, যা বাংলাদেশে অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার একমাত্র পরিবেশক। তারা করোনাভাইরাসের টিকার ৩০ মিলিয়ন ডোজের একমাত্র উৎস সরবরাহকারী এবং পরিবেশনকারীরূপে সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) স্থান করে নেয়, যেখানে বাংলাদেশ সরকার ছিল বা সহ-স্বাক্ষরকারী।

এটি কোভ্যাক্স দ্বারা প্রকাশ্যে প্রকাশিত পূর্বের বক্তব্যের বিপরীত যে তাদের গবেষণা ও উন্নয়ন সুবিধা থেকে আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে যেকোনো টিকা তৈরি হলে তা ‘গ্লোবাল পাবলিক গুড’ হিসেবে গণ্য হবে এবং একেবারে বাণিজ্যিকীকরণ করা হবে না।

করোনায় তীব্রভাবে আক্রান্ত অন্যান্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেরও করোনার টিকার খুব প্রয়োজন। যেহেতু কোভ্যাক্স বাংলাদেশের ১৬ কোটি ৪০ লাখ জনসংখ্যার সবার জন্য প্রয়োজনীয় মাত্রার ২০ শতাংশ সরবরাহ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, সেহেতু বাংলাদেশ সরকারকে তার ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষকে স্বল্প সময়ের মধ্যে টিকা দেওয়া নিশ্চিত করতে দ্বিপক্ষীয়ভাবে অন্যান্য বিকল্পগুলোর সন্ধান করতে হবে।

প্রথমত, এটি কি আগের ঘোষণার লঙ্ঘন নয়, যেখানে বলা হয়েছিল অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাসহ কোভ্যাক্সের গবেষণা উন্নয়ন উৎপাদন বিনিয়োগ কমিটির সহায়তায় বিকশিত ও উৎপাদিত সব টিকাগুলো গ্লোবাল পাবলিক গুড এবং সব দেশ অলাভজনক ভিত্তিতে সেগুলোর অধিকার লাভ করবে?

দ্বিতীয়ত, কোভ্যাক্সের লক্ষ্য ন্যূনতম খরচে টিকার ন্যায়সংগত বিতরণ নিশ্চিত করা। তাহলে বেক্সিমকো ফার্মাকে বাংলাদেশে করোনার টিকা সংগ্রহ ও বিতরণের একমাত্র অধিকার দেওয়া সেরাম ইনস্টিটিউটের পক্ষে কতটা নৈতিক?

তৃতীয়ত এবং সর্বোপরি, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের টিকার একটি ডোজ স্থানীয়ভাবে ২ মার্কিন ডলারে বিক্রি করা হবে। সেই টিকাই বাংলাদেশ সরকারের কাছে বিক্রি করা হবে প্রতি ডোজ প্রায় ৫ ডলারে। কিন্তু কেন? এর যুক্তি কী? বিশ্বব্যাপী মহামারি চলাকালে টিকার দামের এই বৈষম্য কতটা নৈতিক?

সূত্র: বিবিসি বাংলা এবং প্রথম আলো