২৫ বছর আগের এই দিনে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন বাংলা সিনেমার কালজয়ী নায়ক সালমান শাহ। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সকালে সমকালীন ঢাকাই চলচ্চিত্র অঙ্গনে সব থেকে বড় শূন্যতা তৈরি করে বিদায় নিয়েছিলেন তিনি।
আজ এই মহানায়কের ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। তার পারিবারিক নাম শহীদ চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন। ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মা নীলা চৌধুরী। সালমান ছিলেন পরিবারের বড় ছেলে।
বাংলা সিনেমার সেই সময়কার তুমুল জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছিলেন নাকি তাকে খুন করা হয়েছিল ২৫ বছরেও পুরোপুরি মীমাংসা হয়নি এ প্রশ্নের। যদিও চলতি বছরের শুরুর দিকে তৃতীয় দফা তদন্তেও শেষে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) জানিয়েছে, চিত্রনায়ক সালমান শাহকে হত্যার অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি।
দুই যুগ আগের এই চলচ্চিত্র তারকা ‘আত্মহত্যাই করেছিলেন’ জানিয়ে প্রতিবেদন জমা দেয় পিবিআই। সিআইডি, বিচার বিভাগীয়, র্যাবের পর এবার পিবিআই-এর তদন্ত প্রতিবেদনও প্রত্যাখ্যান করেছে সালমান শাহের পরিবার। হত্যা হলেও, বার বার এ মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে দাবি করে, ন্যায়বিচারের জন্য তারা আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন বলেও জানান।
মাত্র সাড়ে পাঁচ বছরের চলচ্চিত্র-জীবনে ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করা সালমান শাহ ঢাকাই সিনেমার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন। নব্বইয়ের দশকে যারা বয়সে ছিলেন কিশোর-তরুণ, তাদের অনেকের হৃদয়েই সালমান শাহ বাংলাদেশের ‘সেরা রোমান্টিক অভিনেতা’ হয়ে থাকবেন। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির মধ্য দিয়ে শোবিজে আসেন সালমান শাহ। ১৯৯৩ সালে ছবিটি মুক্তি পায়। প্রথম ছবিই তাকে ঢালিউডের প্রথম শ্রেণির নায়ক করে তোলে।
এরপর ক্রমেই অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন তিনি! শুটিংয়ে যাওয়ার সময় সালমান শাহের সঙ্গে ব্যক্তিগত একটি ব্রিফকেস থাকত সবসময়। যার ওপরে লেখা থাকত ‘সালমান, দ্য শ্যাডো অব ইমন’। তাতে থাকত সিডিউলের সব কাগজপত্র ও ডায়েরি। মানুষ ও নায়ক, সালমান শাহের দ্বৈত সত্তা। তার জন্ম, সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে বেড়ে ওঠা, সামিরার সঙ্গে প্রেম-বিয়ে, শাবনূরের সঙ্গে সম্পর্ক রহস্য, তারকা খ্যাতি, অতঃপর অমীমাংসিত মৃত্যু।
শোবিজ তারকারাও তাদের পূর্বসুরী নায়ককে শ্রদ্ধা জানিয়ে লিখছেন। চিত্রনায়ক নিরবও সালমান শাহকে শ্রদ্ধা জানিয়ে নিজের মন্তব্য তুলে ধরেছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত নিরবের লেখাটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
‘‘৯০ দশকে আপনি চলচ্চিত্রে এসেছিলেন হ্যালীর ধূমকেতুর মতো! সিনেমাতে এলেন, দেখলেন, জয় করলেন…
পর্দায় পোশাক-পরিচ্ছেদ, সংলাপ বলার ধরন, অভিনয় দক্ষতা সবকিছু মিলিয়ে একজন দর্শক হিসেবে আমার মনে স্থান করে নিতে সময় লাগেনি। মৃত্যুর ২৫ বছর পরেও বাংলা সিনেমার সর্বসেরা ‘রোমান্টিক হিরো’দের তালিকায় আপনার স্থান উপরে।
স্পষ্ট মনে পড়ে রাজবাড়ীর পাংশার নূপুর সিনেমা হলে জীবনে প্রথম আপনার ‘জীবন সংসার’ সিনেমা দেখেছিলাম। পর্দায় আপনাকে দেখে নায়ক হওয়ার ইচ্ছে সেদিনই প্রথম জেগেছিল। আহ কী সেই নায়ক, কী তার অভিনয়, কী তার স্টাইল। ২৫ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। ভালো থাকুক আমাদের অমর নায়ক সালমান শাহ..’’
‘আমার খুব ইচ্ছা, ওপারে যেন সালমানের সঙ্গে দেখা হয়। আবার যদি কোনো দিন সালমানের সঙ্গে দেখা হয়, ওকে জিজ্ঞেস করব তুমি কেন আত্মহত্যা করতে গেলা!’ প্রয়াত সহকর্মীর দিকে এভাবেই প্রশ্ন ছুড়লেন শাবনূর।
সালমান শাহকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শাবনূর বলেন, ‘সালমান শাহ আমার খুবই প্রিয় ছিল। আমি তো তখন অনেক ছোট ছিলাম। সে আমাকে পিচ্চি বলে ডাকত, বলতো ‘এই পিচ্চি এদিক আয়’। এগুলো এখন খুব মিস করি।’
১৯৯৪ সালে ‘তুমি আমার’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে সালমান শাহ-এর সঙ্গে জুটি বাঁধেন শাবনূর। প্রথম ছবিতেই ব্যাপক সফলতা পায় এই জুটি। সালমান-শাবনূর জুটির সফলতার দিকে তাকিয়ে পরিচালক প্রযোজকেরা একের পর এক ছবিতে নিতে থাকেন তাদের। সালমান অভিনীত ২৭টি ছবির ভেতরে ১৪টি ছবিতেই সালমানের বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি। এভাবেই বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে সবচেয়ে সফল জুটি হিসেবে পরিচিতি পায় সালমান- শাবনূর। এ কথা মনে করিয়ে দিতেই সালমান বন্দনায় মেতে উঠলেন শাবনূর। বললেন, ‘সালমান শাহ অনেক ভালো মানুষ ছিল। অনেক বড় মনের মানুষ ছিল। ভালো একজন কো আর্টিস্ট ছিল। সালমান শাহ আজ বেঁচে থাকলে আমাদের জুটিটা আরও অনেক জনপ্রিয়তা পেত। হয় তো উত্তম- সুচিত্রা জুটির মতোই হতো।’
সালমান শাহ অভিনীত জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’র একটি বিখ্যাত গান ‘সাথী তুমি আমার জীবনে সাথী তুমি আমার মরণে’। এ গানটির গীতিকার ও সুরকার ছিলেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। আর এ গানের মূল কণ্ঠশিল্পী ছিলেন খালিদ হাসান মিলু ও কনকচাঁপা। সেই গানটিই এবার নতুনভাবে গেয়েছেন এ প্রজন্মের গায়িকা পড়শী। আর এর সংগীতায়োজনে করছেন প্রত্যয় খান।