ঢাকা ০৩:১৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
ফরিদপুর বিভাগ বাস্তবায়নের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ ফরিদপুরে ধানের শীষ প্রতীক যে পাবে তাঁর জন্যই ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করার অঙ্গিকার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ভয়াবহ ফল বিপর্যয়ের নেপথ্যে রয়েছে ইংরেজিতে ফেল এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাসের হারে ধস এক নজরে বিশ্ব সংবাদ: ১৫ অক্টোবর ২০২৫ আজকের নামাজের সময়সূচি: ১৬ অক্টোবর জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাংলাদেশ পুলিশ প্রত্যাহারের নির্দেশ অস্ত্রবিরতি ভেঙে আবারও পাল্টাপাল্টি হামলা হয়েছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে ২১ ঘণ্টা পরও সম্পূর্ণ নেভানো যায়নি আগুন দুই দিনের সফর শেষে দেশে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

ক্রিসমাস ট্রির ইতিহাস

বছর শেষ হয়ে আসছে। সামনেই বড়দিন। আর এই বড় দিনের বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে ‘ক্রিসমাস ট্রি’। যা সাজানো হয় আপেল, পাখি, মোমবাতি, ঘুঘু, মাছ, ফুল, ফল, স্বর্গদূত আর রঙবেরঙের কাগজ ও বাতি দিয়ে। কিন্তু আমরা হয়তো অনেকেই জানি না অথবা জানার চেষ্টাও করিনা- এই বৃক্ষের রহস্য কি?

আসুন আজ জেনে নি ‘ক্রিসমাস ট্রি’ সম্পর্কে-

‘ক্রিসমাস ট্রি’র জন্য যে গাছটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় সেটি হল ফার গাছ। এটি মূলত দেবদারু জাতীয় গাছ। এছাড়া ঝাউ জাতীয় গাছও ক্রিসমাস ট্রি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ক্রিসমাস ট্রি সত্যিকারের হতে পারে আবার সেটি কৃত্রিমও হতে পারে।
‘ক্রিসমাস ট্রি’তে আলোর ব্যবহার ছাড়াও বিভিন্ন অর্নামেন্ট দিয়ে সাজানো হয়। এই গাছের ওপরে একটি তারা বা স্বর্গদূত বসানো হয়। এই স্বর্গদূতটি বেথেলহেমে জন্ম নেয়া যিশুখ্রিস্টের প্রতীক।

বড়দিনে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো এবং উপহার দেয়ার শুরু কীভাবে হয় তার লিখিত কোনো দলিল পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে প্রচলিত রয়েছে বিভিন্ন গল্প। এমন একটি গল্প হল রোমের এক গরিব কাঠুরের ঘরে একদিন এক শীতার্ত শিশু হাজির হয়। কাঠুরে দম্পতি ছিল যিশুভক্ত। তারা শিশুটিকে আদর করে খাওয়ালেন, নরম বিছানায় শুতে দিলেন। সকালে ওই শিশু দেবদূতের রূপ ধরে বলল, ‘আমিই যিশু’। তাকে আদর-আপ্যায়ন করার জন্য কাঠুরে দম্পতিকে তিনি একটি গাছের ডাল দিলেন এবং তা মাটিতে পুঁতে রাখতে বললেন। এরপর ক্রিসমাসের দিন দেখা গেল ডালটি সোনালি আপেলে ভরে গেছে। তখন তারা এ গাছের নাম দেন ‘ক্রিসমাস ট্রি’।

আরেকটি গল্প এ রকম-

একদিন এক গরিব শিশু এক গির্জার মালিকে কিছু পাইন গাছের চারার বিনিময়ে পয়সা দেয়ার অনুরোধ করল। মালি গাছগুলো নিয়ে গির্জার পাশে পুঁতে রাখল। ক্রিসমাসের দিন ঘুম থেকে উঠে দেখল, গাছগুলো গির্জার চেয়েও বড় হয়ে গেছে এবং সেগুলো থেকে অজস্র তারার আলো ঝরে পড়ছে। মালি তখন গাছগুলোর নাম দিল ‘ক্রিসমাস ট্রি’।

খ্রিস্টান লোক বিশ্বাস অনুসারে, ‘ক্রিসমাস ট্রি’র ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে জার্মানির গেইসমার শহরের এক সাধু বনিফেসের সঙ্গে। সেইন্ট বনিফেস (৬৭২-৭৫৪ সালে) একটি প্রাচীন ওক গাছের মূলে একটি দেবদারু জাতীয় ফার গাছ বেড়ে উঠতে দেখেন। তিনি এটাকে যিশুখ্রিস্টের প্রতি বিশ্বাসের চিহ্ন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।

ঐতিহ্য অনুসারে, ২৪ ডিসেম্বর ক্রিসমাস সন্ধ্যার আগে ট্রি সাজানো যায় না। আর এটি সরিয়ে ফেলা হয় ১২তম রাতে অর্থাৎ ৬ জানুয়ারি। আর অনেকেই মনে করেন এই নিয়ম না মানা হলে অমঙ্গল হতে পারে। তবে প্রথাগতভাবে না হলেও এখন ক্রিসমাস ট্রি আরও আগে সাজানো হয়। জার্মানিতে এটা ঐতিহ্য অনুসারে ২৪ ডিসেম্বরে সাজানো হয় এবং ৭ জানুয়ারি খুলে ফেলা হয়। ক্যাথলিকদের রীতিতে এটি জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত সাজিয়ে রাখা হয়। অস্ট্রেলিয়ায় এটি ডিসেম্বরের শুরুতে সাজিয়ে গ্রীষ্মের ছুটি পর্যন্ত রাখা হয়।

প্রকৃত ক্রিসমাস ট্রি :
নানা দেশে নানান প্রজাতির গাছকে ক্রিসমাস ট্রি হিসেবে সাজানো হয়। তবে মূল ক্রিসমাস টি হিসেবে বিবেচনা করা হয় Picea abies নামক গাছকে। এই  গাছটির আদি নিবাস ইউরোপ। তাই গাছটিকে সাধারণভাবে বলা হয় European spruce। অনেক সময় একে Norway spruceও বলা হয়। এর গণের নাম Picea, গ্রিক Pissa শব্দ থেকে গৃহীত হয়েছে। কিন্তু শব্দটি সাধারণভাবে ইউরোপে Picea বলতে পাইন গাছকে বোঝায়। আর abies হলো ফার জাতীয় গাছের সাধারণ নাম। এটি একটি দ্রুত বর্ধনশীল চিরোসবুজ বৃক্ষ। যা লম্বায় প্রায় ৩৫-৫৫ মিটার (১১৫-১৮০ ফুট) লম্বা হয়ে থাকে। এদের পাতা সুচের মত। পাতার রঙ গাঢ় সবুজ।

ক্রিসমাস ট্রি জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে পুরো কৃতিত্ব যুক্তরাজ্যের রানি ভিক্টোরিয়ার। ১৮৪৮ সালের বড়দিনের আগে রানি তার জার্মান স্বামী প্রিন্স অ্যালবার্টকে আবদার ধরে বলেন, ছেলেবেলায় বড়দিনে যেভাবে গাছ সাজানো হতো সেভাবে যেন তিনি এবার একটা গাছকে সাজান। প্রিন্স অ্যালবার্ট জার্মান স্টাইলে সবুজ একটা গাছকে বিভিন্ন ধরণের মিষ্টি, মোমবাতি ও অলংকার দিয়ে সাজালেন। সেই গাছের ছবি লন্ডনের বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হলে যুক্তরাজ্যে ও যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চবিত্তদের মধ্যে ক্রিসমাস ট্রি সাজানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। নিরাপদ আলোকসজ্জার জন্য ১৮৮২ সালে টমাস আলফা এডিসনের সহযোগী এডওয়ার্ড জনসন ক্রিসমাস টিতে বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা করেন। এরপর থেকে মোমবাতির পরিবর্তে বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবহার শুরু হয়। ১৮৮৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ২৩তম প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন হ্যারিসনের আমলে প্রথমবারের মতো হোয়াইট হাউসে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো হয়। এরপর থেকে যতই দিন গেছে ততই ক্রিসমাস ট্রি বড় দিনের মূল আকর্ষণ হয়ে উঠেছে।

কবে শুরু

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, চিরহরিৎ ফার গাছকে ক্রিসমাস ট্রি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দেবদারু গাছের মতো দেখতে, লম্বা, পিরামিড আকৃতির গাছটি এখন প্রায় সর্বত্র দেখা যায়। কিন্তু ঠিক কবে ক্রিসমাস ট্রির আগমন ঘটে, তা নিয়ে আছে বিতর্ক। মনে করা হয়, প্রায় হাজার বছর আগে উত্তর ইউরোপে ক্রিসমাস ট্রি উৎসবের অংশ হয়ে ওঠে। যদিও এত জমকালোভাবে এ গাছ সাজানো হতো না। যদি গোটা গাছটি না পাওয়া যেত, তাহলে ফার গাছের কোনো প্রতিকৃতি তৈরি করা হতো ঘরে। সেটাও না হলে, কাঠ কেটে স্তরে স্তরে সাজিয়ে পিরামিডের আকৃতি দেওয়া হতো।

ধারণা করা হয়, ক্রিসমাস ট্রি স্বয়ং যিশুরই প্রতিকৃতি। সবুজ লম্বা গাছ যেন যিশুর মতো। যেখানে গাছটি স্থাপন করা হবে সেই আড়ালের গুঁড়িকে কাঠের ক্রুশের প্রতীক হিসেবে মনে করা হয়। তারা, আলো, লাল-সবুজ কাপড়ে সাজানো হয় গাছটিকে। সবার ওপরে যে তারাটি জ¦ল জ¦ল করে, সেটির সঙ্গে মিল আছে বেথলেহেমে যিশুর জন্মের কাহিনির।

তবে হিস্ট্রি ডটকমের এক প্রতিবেদন বলছে, যিশু খ্রিস্টের জন্মের আগে থেকেই শীতপ্রধান দেশের মানুষ পাইন বা দেবদারু গাছকে সৌভাগ্যের প্রতীক বলে মনে করত। তাদের ধারণা ছিল, বাড়ির আঙিনায় চিরসবুজ এই গাছ থাকলে ভূত-পেতনিসহ কোনো অশুভ শক্তি বাড়ির ত্রিসীমানায় ঘেঁষতে পারে না! পরবর্তী সময় ক্রিসমাস উৎসবের সঙ্গে এ গাছ যুক্ত হয়ে যায়।

আরও জানা যায়, ১৮৪৬ সালে রানী ভিক্টোরিয়া ও জার্মান রাজপুত্র অ্যালবার্ট সন্তানদের নিয়ে ক্রিসমাস ট্রির পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার পর তা ছাপা হয় ইলাস্ট্রেটেড লন্ডন নিউজ পত্রিকায়। ওই ছবি প্রকাশের পর দ্রুত যুক্তরাজ্যে ক্রিসমাস ট্রির ব্যবহার ছড়িয়ে পড়ে। এরপর মূলত বিশ শতকের শুরু থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য দেশগুলোতেও খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের কাছে বড়দিন উদযাপনে ক্রিসমাস ট্রি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

আরেকটি চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া যায় অনলাইনে, বৈদ্যুতিক বাতি ব্যবহার করে বড়দিনে আলোকসজ্জার প্রথম উদ্যোগ নেন টমাস আলভা এডিসনের ল্যাবরেটরির একজন কর্মচারী। ১৮৮২ সালের বড়দিনে তিনি এ উদ্যোগ নেন। এরপর এডিসনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও তার কোম্পানির প্রেসিডেন্ট, এডওয়ার্ড এইচ জনসন সর্বপ্রথম ক্রিসমাস ট্রির আলোকসজ্জায় বৈদ্যুতিক বাতি ব্যবহার করেন। যা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে।

তবে বর্তমান দিনে ক্রিসমাস শুধু উৎসব নয়, পাশাপাশি এটি বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ব্যবসাও বটে। এ নিয়ে সম্প্রতি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সায়েন্টিফিক আমেরিকান ডটকম। তারা বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই ক্রিসমাস ট্রির ব্যবসা এতটাই বড় হয়ে উঠেছে যে, সেখানে ব্যবসায়ীদের মধ্যে একে কেন্দ্র করে দুটি পক্ষ তৈরি হয়েছে। একপক্ষ ক্রিসমাসে প্রাকৃতিক গাছ বিক্রিকে সমর্থন করে, আর অন্যরা কৃত্রিম গাছকে।

প্রাকৃতিক

ওই প্রতিবেদনে দুই অধ্যাপকের কথোপকথন তুলে ধরা হয়। তাদের কাছে শিক্ষার্থীরা ক্রিসমাস উৎসবের অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল।

তাদের প্রশ্ন ছিল, প্রাকৃতিক ক্রিসমাস ট্রি কোথায় পাওয়া যাবে। এর উত্তর হলো, প্রাকৃতিক ক্রিসমাস ট্রি পাওয়ার তিনটি উপায় রয়েছে। প্রথমত, আপনাকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় বনে যেতে হবে। সেখান থেকে নিজের জন্য ক্রিসমাস ট্রি কেটে নিতে পারেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কোনো গাছ কাটতে হলে রাস্তা, ক্যাম্প গ্রাউন্ড বা বিনোদন এলাকা থেকে অন্তত ২০০ ফুট দূরত্ব থাকতে হয়। কিন্তু অপেক্ষাকৃত কম আমেরিকানরাই এই নিয়ম মেনে থাকেন। যদিও অনুমতি নিতে ১০ ডলার বা তারচেয়ে কম খরচ হয়। গাছ টেনে নিলে গাছের ডালপালাগুলো নষ্ট হয়ে যায়। ‘২০০ ফুট নিয়ম’ বলতে বোঝায়, ভারী গাছ বহন করতে হলে তুষার আচ্ছাদিত বন থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দ্বিতীয় উপায়ে স্থানীয় ক্রিসমাস ট্রি ফার্ম থেকেও গাছ কেনা যেতে পারে। ক্রিসমাস ট্রি ফার্মগুলো বড় একটি প্রচার পেয়েছিল টেইলর সুইফট নামে সংগীতশিল্পীর মাধ্যমে। ক্রিসমাস উপলক্ষে এই শিল্পীর একটি গান বের হওয়ার পর তিনি জানিয়েছিলেন যে, ক্রিসমাস ট্রি ফার্মেই তার বেড়ে ওঠা। তবে আমেরিকায় ক্রিসমাস ট্রি ফার্মের সংখ্যা বেশ। দেশটির কৃষি বিভাগের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় তিন হাজার ক্রিসমাস ট্রি ফার্ম রয়েছে। এই ফার্মগুলো বছরে প্রায় ১২ মিলিয়ন গাছ বিক্রি করে।

তবে সায়েন্টিফিক আমেরিকা জানায়, শুনে মনে হতে পারে ক্রিসমাস ট্রি চাষিরা বুঝি অনেক লাভবান, কিন্তু বাস্তবে তেমনটা নয়। ক্রিসমাস ট্রি বিক্রির উপযুক্ত হতে দশ বছরের বেশি সময় নেয়। এই লম্বা সময়ের মধ্যে প্রাকৃতিক অনেক ঝড়-ঝাপটায় আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়; এ কারণে অনেক চাষি সর্বস্বান্ত হন। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় কৃষি পরিসংখ্যান সার্ভিসের (ইউএসডিএ) তথ্যমতে, ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে প্রায় ৫০০ মার্কিন ক্রিসমাস ট্রি ফার্ম বন্ধ হয়ে গেছে।

স্থানীয় উৎসের বাইরে আমেরিকায় ক্রিসমাস ট্রি আমদানিও করা হয়। এটি হলো প্রাকৃতিক ক্রিসমাস ট্রি কেনার তৃতীয় উপায়। যারা ক্রিসমাস ট্রি আমদানি করে বিক্রি করেন তাদের কাছ থেকেও সতেজ গাছ কেনা যায় যুক্তরাষ্ট্রে। ২০২২ সালে শুধু কানাডা থেকেই প্রায় ৩ মিলিয়ন প্রাকৃতিক ক্রিসমাস ট্রি আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র। ক্রিসমাস ট্রির আমদানি দিন দিন বাড়ছেই সেখানে। ২০১৪ সালের চেয়ে এখন দ্বিগুণ ক্রিসমাস ট্রি আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২২ সালে সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১৫ মিলিয়ন প্রাকৃতিক ক্রিসমাস ট্রি বিক্রি হয়েছিল।

অনেকে আছেন স্কাউটের মতো অলাভজনক বা সেবাধর্মী মানুষ বা প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রিসমাস ট্রি কিনে থাকেন। এরাও স্থানীয় ট্রি ফার্ম অথবা বাইরে থেকে আমদানি করে বিক্রি করে থাকে।

চীন থেকে…

সায়েন্টিফিক আমেরিকা জানায়, নানা কারণে প্রাকৃতিকটার চেয়ে অনেকে কৃত্রিম ক্রিসমাস ট্রি পছন্দ করেন। কৃত্রিম গাছ প্রাথমিকভাবে চীন থেকে আসে। এর বেশিরভাগই চীনের ইউউ শহরে তৈরি হয়। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্র ২০ মিলিয়নের বেশি কৃত্রিম গাছ আমদানি করে। কৃত্রিম গাছের আমদানিও দিন দিন বেড়েছে সেখানে। ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ১১ মিলিয়ন কৃত্রিম গাছ আমদানি করে, একই সঙ্গে সে বছর সেখানে প্রায় ২২ মিলিয়ন প্রাকৃতিক গাছ বিক্রি হয়। এর মানে ২০১৪ সালে কৃত্রিম গাছের তুলনায় দ্বিগুণ প্রাকৃতিক গাছ বিক্রি হয়েছে। তবে এক দশক পরে এসে প্রাকৃতিক গাছের বিক্রি কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫ মিলিয়নে, অন্যদিকে ২০ মিলিয়নেরও বেশি কৃত্রিম গাছ আমদানি করা হচ্ছে।

মানুষকে কৃত্রিম গাছের দিকে আগ্রহী করে তোলার পেছনে প্রাকৃতিক গাছে আগুন লাগার ঝুঁকি অন্যতম কারণ বলে বিবেচিত হয়। প্রাকৃতিক গাছে পানি দেওয়া হয়, না হলে সেটি শুকিয়ে যায় এবং মাঝে মাঝে আগুন লেগে যায়। ১৯৮০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৮৫০টি ক্রিসমাস ট্রিতে আগুনের ঘটনা ঘটেছিল। এসব ঘটনায় ৮০ জন আহত হয়েছিল। চার দশক পরে এখন আগুনের ঘটনা ১৮০-তে নেমে এসেছে, আহতের সংখ্যাও মাত্র আট।

দাম বেশি হওয়ার কারণ

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিসমাস ট্রির দাম শুনে অনেকের চক্ষু চড়কগাছ হয়। পাইকারি পর্যায়ে এর দাম যদিও এত বেশি না। মার্কিন সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর একটি কৃত্রিম গাছের জন্য আমদানিকারকদের শিপিং-কনটেইনার খরচসহ সব মিলিয়ে ২২ ডলার খরচ করতে হয়েছে। প্রাকৃতিক গাছের আমদানিকারকরাও প্রায় একই মূল্যে ক্রিসমাস ট্রি এনেছেন। কৃত্রিম এবং প্রাকৃতিক আমদানিকারকরা ২০২২ সালে গাছ বিক্রির জন্য অর্ধ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ প্রদান করেছে।

দুর্ভাগ্যবশত, খুচরা পর্যায়ে ক্রিসমাস ট্রি কিনতে আমেরিকানদের কত টাকা খরচ করতে হয় তার কোনো সরকারি পরিসংখ্যান নেই। কৃত্রিম গাছের দাম প্রাকৃতিক গাছের চেয়ে বেশি। তবে অতিরিক্ত দামে কিনতে হলেও কৃত্রিম গাছ একবারের বেশি ব্যবহার করা যায়।

ক্রেতাদের মধ্যে দুটি ব্যবসা গ্রুপের চালানো সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে একটি ক্রিসমাস ট্রির জন্য ৮০ থেকে ১০০ ডলার খরচ হয়েছে। এর মানে হলো ক্রিসমাস ট্রির উৎপাদন খরচের চেয়ে প্রায় ৪০০% থেকে ৫০০% দামে বিক্রি হয়; জিনস কিংবা বার থেকে পানীয় গ্রহণের ক্ষেত্রেও এ ধরনের হিসাব রয়েছে।

 ২০২২ সালে প্রতিটি ৮০ ডলারে বিক্রি হওয়া ১৫ মিলিয়ন প্রাকৃতিক ক্রিসমাস ট্রি এবং ১০০ ডলারে বিক্রি হওয়া ২০ মিলিয়ন কৃত্রিম ট্রির বাজার বছরে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার। সাজসজ্জা বাদে এটি শুধু ক্রিসমাস ট্রি কেনাবেচার খরচ।

পরামর্শ

কয়েকটি উপায়ে ক্রিসমাস ট্রি কেনার সুযোগ রয়েছে জানিয়ে সায়েন্টিফিক আমেরিকান ওই প্রতিবেদনে পরামর্শ দেয়। তারা বলছে, ক্রিসমাস ট্রিরও আলাদা ধরন রয়েছে। কিন্তু ক্রিসমাস ট্রি কেনার ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়গুলো বিবেচনায় নেবেন? কেনার ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই মূল্য, পরিবেশগত কারণ এবং শরীরে অ্যালার্জির মতো বিষয়গুলো বিবেচনায় থাকবে। তবে এখানে কোনো নিশ্চিত এবং সহজ উত্তর নেই। সবাই পরামর্শ মতো চলতে পারে না। এক ব্যক্তির উদাহরণ দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, তার কাছে একাধিক ক্রিসমাস ট্রি রয়েছে। এর মধ্যে ১২ ফুটের একটি কৃত্রিম ক্রিসমাস ট্রি রয়েছে, যেটি তার দাদির কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া। আরেকটি প্রাকৃতিক, যেটি স্থানীয় ক্রিসমাস ট্রি ফার্ম থেকে কেনা; এটি উচ্চতায় ৭ ফুট।

Tag :
জনপ্রিয়

ফরিদপুর বিভাগ বাস্তবায়নের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

ক্রিসমাস ট্রির ইতিহাস

Update Time : ০৬:০২:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩

বছর শেষ হয়ে আসছে। সামনেই বড়দিন। আর এই বড় দিনের বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে ‘ক্রিসমাস ট্রি’। যা সাজানো হয় আপেল, পাখি, মোমবাতি, ঘুঘু, মাছ, ফুল, ফল, স্বর্গদূত আর রঙবেরঙের কাগজ ও বাতি দিয়ে। কিন্তু আমরা হয়তো অনেকেই জানি না অথবা জানার চেষ্টাও করিনা- এই বৃক্ষের রহস্য কি?

আসুন আজ জেনে নি ‘ক্রিসমাস ট্রি’ সম্পর্কে-

‘ক্রিসমাস ট্রি’র জন্য যে গাছটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় সেটি হল ফার গাছ। এটি মূলত দেবদারু জাতীয় গাছ। এছাড়া ঝাউ জাতীয় গাছও ক্রিসমাস ট্রি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ক্রিসমাস ট্রি সত্যিকারের হতে পারে আবার সেটি কৃত্রিমও হতে পারে।
‘ক্রিসমাস ট্রি’তে আলোর ব্যবহার ছাড়াও বিভিন্ন অর্নামেন্ট দিয়ে সাজানো হয়। এই গাছের ওপরে একটি তারা বা স্বর্গদূত বসানো হয়। এই স্বর্গদূতটি বেথেলহেমে জন্ম নেয়া যিশুখ্রিস্টের প্রতীক।

বড়দিনে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো এবং উপহার দেয়ার শুরু কীভাবে হয় তার লিখিত কোনো দলিল পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে প্রচলিত রয়েছে বিভিন্ন গল্প। এমন একটি গল্প হল রোমের এক গরিব কাঠুরের ঘরে একদিন এক শীতার্ত শিশু হাজির হয়। কাঠুরে দম্পতি ছিল যিশুভক্ত। তারা শিশুটিকে আদর করে খাওয়ালেন, নরম বিছানায় শুতে দিলেন। সকালে ওই শিশু দেবদূতের রূপ ধরে বলল, ‘আমিই যিশু’। তাকে আদর-আপ্যায়ন করার জন্য কাঠুরে দম্পতিকে তিনি একটি গাছের ডাল দিলেন এবং তা মাটিতে পুঁতে রাখতে বললেন। এরপর ক্রিসমাসের দিন দেখা গেল ডালটি সোনালি আপেলে ভরে গেছে। তখন তারা এ গাছের নাম দেন ‘ক্রিসমাস ট্রি’।

আরেকটি গল্প এ রকম-

একদিন এক গরিব শিশু এক গির্জার মালিকে কিছু পাইন গাছের চারার বিনিময়ে পয়সা দেয়ার অনুরোধ করল। মালি গাছগুলো নিয়ে গির্জার পাশে পুঁতে রাখল। ক্রিসমাসের দিন ঘুম থেকে উঠে দেখল, গাছগুলো গির্জার চেয়েও বড় হয়ে গেছে এবং সেগুলো থেকে অজস্র তারার আলো ঝরে পড়ছে। মালি তখন গাছগুলোর নাম দিল ‘ক্রিসমাস ট্রি’।

খ্রিস্টান লোক বিশ্বাস অনুসারে, ‘ক্রিসমাস ট্রি’র ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে জার্মানির গেইসমার শহরের এক সাধু বনিফেসের সঙ্গে। সেইন্ট বনিফেস (৬৭২-৭৫৪ সালে) একটি প্রাচীন ওক গাছের মূলে একটি দেবদারু জাতীয় ফার গাছ বেড়ে উঠতে দেখেন। তিনি এটাকে যিশুখ্রিস্টের প্রতি বিশ্বাসের চিহ্ন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।

ঐতিহ্য অনুসারে, ২৪ ডিসেম্বর ক্রিসমাস সন্ধ্যার আগে ট্রি সাজানো যায় না। আর এটি সরিয়ে ফেলা হয় ১২তম রাতে অর্থাৎ ৬ জানুয়ারি। আর অনেকেই মনে করেন এই নিয়ম না মানা হলে অমঙ্গল হতে পারে। তবে প্রথাগতভাবে না হলেও এখন ক্রিসমাস ট্রি আরও আগে সাজানো হয়। জার্মানিতে এটা ঐতিহ্য অনুসারে ২৪ ডিসেম্বরে সাজানো হয় এবং ৭ জানুয়ারি খুলে ফেলা হয়। ক্যাথলিকদের রীতিতে এটি জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত সাজিয়ে রাখা হয়। অস্ট্রেলিয়ায় এটি ডিসেম্বরের শুরুতে সাজিয়ে গ্রীষ্মের ছুটি পর্যন্ত রাখা হয়।

প্রকৃত ক্রিসমাস ট্রি :
নানা দেশে নানান প্রজাতির গাছকে ক্রিসমাস ট্রি হিসেবে সাজানো হয়। তবে মূল ক্রিসমাস টি হিসেবে বিবেচনা করা হয় Picea abies নামক গাছকে। এই  গাছটির আদি নিবাস ইউরোপ। তাই গাছটিকে সাধারণভাবে বলা হয় European spruce। অনেক সময় একে Norway spruceও বলা হয়। এর গণের নাম Picea, গ্রিক Pissa শব্দ থেকে গৃহীত হয়েছে। কিন্তু শব্দটি সাধারণভাবে ইউরোপে Picea বলতে পাইন গাছকে বোঝায়। আর abies হলো ফার জাতীয় গাছের সাধারণ নাম। এটি একটি দ্রুত বর্ধনশীল চিরোসবুজ বৃক্ষ। যা লম্বায় প্রায় ৩৫-৫৫ মিটার (১১৫-১৮০ ফুট) লম্বা হয়ে থাকে। এদের পাতা সুচের মত। পাতার রঙ গাঢ় সবুজ।

ক্রিসমাস ট্রি জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে পুরো কৃতিত্ব যুক্তরাজ্যের রানি ভিক্টোরিয়ার। ১৮৪৮ সালের বড়দিনের আগে রানি তার জার্মান স্বামী প্রিন্স অ্যালবার্টকে আবদার ধরে বলেন, ছেলেবেলায় বড়দিনে যেভাবে গাছ সাজানো হতো সেভাবে যেন তিনি এবার একটা গাছকে সাজান। প্রিন্স অ্যালবার্ট জার্মান স্টাইলে সবুজ একটা গাছকে বিভিন্ন ধরণের মিষ্টি, মোমবাতি ও অলংকার দিয়ে সাজালেন। সেই গাছের ছবি লন্ডনের বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হলে যুক্তরাজ্যে ও যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চবিত্তদের মধ্যে ক্রিসমাস ট্রি সাজানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। নিরাপদ আলোকসজ্জার জন্য ১৮৮২ সালে টমাস আলফা এডিসনের সহযোগী এডওয়ার্ড জনসন ক্রিসমাস টিতে বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা করেন। এরপর থেকে মোমবাতির পরিবর্তে বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবহার শুরু হয়। ১৮৮৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ২৩তম প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন হ্যারিসনের আমলে প্রথমবারের মতো হোয়াইট হাউসে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো হয়। এরপর থেকে যতই দিন গেছে ততই ক্রিসমাস ট্রি বড় দিনের মূল আকর্ষণ হয়ে উঠেছে।

কবে শুরু

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, চিরহরিৎ ফার গাছকে ক্রিসমাস ট্রি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দেবদারু গাছের মতো দেখতে, লম্বা, পিরামিড আকৃতির গাছটি এখন প্রায় সর্বত্র দেখা যায়। কিন্তু ঠিক কবে ক্রিসমাস ট্রির আগমন ঘটে, তা নিয়ে আছে বিতর্ক। মনে করা হয়, প্রায় হাজার বছর আগে উত্তর ইউরোপে ক্রিসমাস ট্রি উৎসবের অংশ হয়ে ওঠে। যদিও এত জমকালোভাবে এ গাছ সাজানো হতো না। যদি গোটা গাছটি না পাওয়া যেত, তাহলে ফার গাছের কোনো প্রতিকৃতি তৈরি করা হতো ঘরে। সেটাও না হলে, কাঠ কেটে স্তরে স্তরে সাজিয়ে পিরামিডের আকৃতি দেওয়া হতো।

ধারণা করা হয়, ক্রিসমাস ট্রি স্বয়ং যিশুরই প্রতিকৃতি। সবুজ লম্বা গাছ যেন যিশুর মতো। যেখানে গাছটি স্থাপন করা হবে সেই আড়ালের গুঁড়িকে কাঠের ক্রুশের প্রতীক হিসেবে মনে করা হয়। তারা, আলো, লাল-সবুজ কাপড়ে সাজানো হয় গাছটিকে। সবার ওপরে যে তারাটি জ¦ল জ¦ল করে, সেটির সঙ্গে মিল আছে বেথলেহেমে যিশুর জন্মের কাহিনির।

তবে হিস্ট্রি ডটকমের এক প্রতিবেদন বলছে, যিশু খ্রিস্টের জন্মের আগে থেকেই শীতপ্রধান দেশের মানুষ পাইন বা দেবদারু গাছকে সৌভাগ্যের প্রতীক বলে মনে করত। তাদের ধারণা ছিল, বাড়ির আঙিনায় চিরসবুজ এই গাছ থাকলে ভূত-পেতনিসহ কোনো অশুভ শক্তি বাড়ির ত্রিসীমানায় ঘেঁষতে পারে না! পরবর্তী সময় ক্রিসমাস উৎসবের সঙ্গে এ গাছ যুক্ত হয়ে যায়।

আরও জানা যায়, ১৮৪৬ সালে রানী ভিক্টোরিয়া ও জার্মান রাজপুত্র অ্যালবার্ট সন্তানদের নিয়ে ক্রিসমাস ট্রির পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার পর তা ছাপা হয় ইলাস্ট্রেটেড লন্ডন নিউজ পত্রিকায়। ওই ছবি প্রকাশের পর দ্রুত যুক্তরাজ্যে ক্রিসমাস ট্রির ব্যবহার ছড়িয়ে পড়ে। এরপর মূলত বিশ শতকের শুরু থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য দেশগুলোতেও খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের কাছে বড়দিন উদযাপনে ক্রিসমাস ট্রি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

আরেকটি চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া যায় অনলাইনে, বৈদ্যুতিক বাতি ব্যবহার করে বড়দিনে আলোকসজ্জার প্রথম উদ্যোগ নেন টমাস আলভা এডিসনের ল্যাবরেটরির একজন কর্মচারী। ১৮৮২ সালের বড়দিনে তিনি এ উদ্যোগ নেন। এরপর এডিসনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও তার কোম্পানির প্রেসিডেন্ট, এডওয়ার্ড এইচ জনসন সর্বপ্রথম ক্রিসমাস ট্রির আলোকসজ্জায় বৈদ্যুতিক বাতি ব্যবহার করেন। যা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে।

তবে বর্তমান দিনে ক্রিসমাস শুধু উৎসব নয়, পাশাপাশি এটি বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ব্যবসাও বটে। এ নিয়ে সম্প্রতি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সায়েন্টিফিক আমেরিকান ডটকম। তারা বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই ক্রিসমাস ট্রির ব্যবসা এতটাই বড় হয়ে উঠেছে যে, সেখানে ব্যবসায়ীদের মধ্যে একে কেন্দ্র করে দুটি পক্ষ তৈরি হয়েছে। একপক্ষ ক্রিসমাসে প্রাকৃতিক গাছ বিক্রিকে সমর্থন করে, আর অন্যরা কৃত্রিম গাছকে।

প্রাকৃতিক

ওই প্রতিবেদনে দুই অধ্যাপকের কথোপকথন তুলে ধরা হয়। তাদের কাছে শিক্ষার্থীরা ক্রিসমাস উৎসবের অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল।

তাদের প্রশ্ন ছিল, প্রাকৃতিক ক্রিসমাস ট্রি কোথায় পাওয়া যাবে। এর উত্তর হলো, প্রাকৃতিক ক্রিসমাস ট্রি পাওয়ার তিনটি উপায় রয়েছে। প্রথমত, আপনাকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় বনে যেতে হবে। সেখান থেকে নিজের জন্য ক্রিসমাস ট্রি কেটে নিতে পারেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কোনো গাছ কাটতে হলে রাস্তা, ক্যাম্প গ্রাউন্ড বা বিনোদন এলাকা থেকে অন্তত ২০০ ফুট দূরত্ব থাকতে হয়। কিন্তু অপেক্ষাকৃত কম আমেরিকানরাই এই নিয়ম মেনে থাকেন। যদিও অনুমতি নিতে ১০ ডলার বা তারচেয়ে কম খরচ হয়। গাছ টেনে নিলে গাছের ডালপালাগুলো নষ্ট হয়ে যায়। ‘২০০ ফুট নিয়ম’ বলতে বোঝায়, ভারী গাছ বহন করতে হলে তুষার আচ্ছাদিত বন থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দ্বিতীয় উপায়ে স্থানীয় ক্রিসমাস ট্রি ফার্ম থেকেও গাছ কেনা যেতে পারে। ক্রিসমাস ট্রি ফার্মগুলো বড় একটি প্রচার পেয়েছিল টেইলর সুইফট নামে সংগীতশিল্পীর মাধ্যমে। ক্রিসমাস উপলক্ষে এই শিল্পীর একটি গান বের হওয়ার পর তিনি জানিয়েছিলেন যে, ক্রিসমাস ট্রি ফার্মেই তার বেড়ে ওঠা। তবে আমেরিকায় ক্রিসমাস ট্রি ফার্মের সংখ্যা বেশ। দেশটির কৃষি বিভাগের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় তিন হাজার ক্রিসমাস ট্রি ফার্ম রয়েছে। এই ফার্মগুলো বছরে প্রায় ১২ মিলিয়ন গাছ বিক্রি করে।

তবে সায়েন্টিফিক আমেরিকা জানায়, শুনে মনে হতে পারে ক্রিসমাস ট্রি চাষিরা বুঝি অনেক লাভবান, কিন্তু বাস্তবে তেমনটা নয়। ক্রিসমাস ট্রি বিক্রির উপযুক্ত হতে দশ বছরের বেশি সময় নেয়। এই লম্বা সময়ের মধ্যে প্রাকৃতিক অনেক ঝড়-ঝাপটায় আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়; এ কারণে অনেক চাষি সর্বস্বান্ত হন। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় কৃষি পরিসংখ্যান সার্ভিসের (ইউএসডিএ) তথ্যমতে, ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে প্রায় ৫০০ মার্কিন ক্রিসমাস ট্রি ফার্ম বন্ধ হয়ে গেছে।

স্থানীয় উৎসের বাইরে আমেরিকায় ক্রিসমাস ট্রি আমদানিও করা হয়। এটি হলো প্রাকৃতিক ক্রিসমাস ট্রি কেনার তৃতীয় উপায়। যারা ক্রিসমাস ট্রি আমদানি করে বিক্রি করেন তাদের কাছ থেকেও সতেজ গাছ কেনা যায় যুক্তরাষ্ট্রে। ২০২২ সালে শুধু কানাডা থেকেই প্রায় ৩ মিলিয়ন প্রাকৃতিক ক্রিসমাস ট্রি আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র। ক্রিসমাস ট্রির আমদানি দিন দিন বাড়ছেই সেখানে। ২০১৪ সালের চেয়ে এখন দ্বিগুণ ক্রিসমাস ট্রি আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২২ সালে সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১৫ মিলিয়ন প্রাকৃতিক ক্রিসমাস ট্রি বিক্রি হয়েছিল।

অনেকে আছেন স্কাউটের মতো অলাভজনক বা সেবাধর্মী মানুষ বা প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রিসমাস ট্রি কিনে থাকেন। এরাও স্থানীয় ট্রি ফার্ম অথবা বাইরে থেকে আমদানি করে বিক্রি করে থাকে।

চীন থেকে…

সায়েন্টিফিক আমেরিকা জানায়, নানা কারণে প্রাকৃতিকটার চেয়ে অনেকে কৃত্রিম ক্রিসমাস ট্রি পছন্দ করেন। কৃত্রিম গাছ প্রাথমিকভাবে চীন থেকে আসে। এর বেশিরভাগই চীনের ইউউ শহরে তৈরি হয়। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্র ২০ মিলিয়নের বেশি কৃত্রিম গাছ আমদানি করে। কৃত্রিম গাছের আমদানিও দিন দিন বেড়েছে সেখানে। ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ১১ মিলিয়ন কৃত্রিম গাছ আমদানি করে, একই সঙ্গে সে বছর সেখানে প্রায় ২২ মিলিয়ন প্রাকৃতিক গাছ বিক্রি হয়। এর মানে ২০১৪ সালে কৃত্রিম গাছের তুলনায় দ্বিগুণ প্রাকৃতিক গাছ বিক্রি হয়েছে। তবে এক দশক পরে এসে প্রাকৃতিক গাছের বিক্রি কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫ মিলিয়নে, অন্যদিকে ২০ মিলিয়নেরও বেশি কৃত্রিম গাছ আমদানি করা হচ্ছে।

মানুষকে কৃত্রিম গাছের দিকে আগ্রহী করে তোলার পেছনে প্রাকৃতিক গাছে আগুন লাগার ঝুঁকি অন্যতম কারণ বলে বিবেচিত হয়। প্রাকৃতিক গাছে পানি দেওয়া হয়, না হলে সেটি শুকিয়ে যায় এবং মাঝে মাঝে আগুন লেগে যায়। ১৯৮০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৮৫০টি ক্রিসমাস ট্রিতে আগুনের ঘটনা ঘটেছিল। এসব ঘটনায় ৮০ জন আহত হয়েছিল। চার দশক পরে এখন আগুনের ঘটনা ১৮০-তে নেমে এসেছে, আহতের সংখ্যাও মাত্র আট।

দাম বেশি হওয়ার কারণ

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিসমাস ট্রির দাম শুনে অনেকের চক্ষু চড়কগাছ হয়। পাইকারি পর্যায়ে এর দাম যদিও এত বেশি না। মার্কিন সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর একটি কৃত্রিম গাছের জন্য আমদানিকারকদের শিপিং-কনটেইনার খরচসহ সব মিলিয়ে ২২ ডলার খরচ করতে হয়েছে। প্রাকৃতিক গাছের আমদানিকারকরাও প্রায় একই মূল্যে ক্রিসমাস ট্রি এনেছেন। কৃত্রিম এবং প্রাকৃতিক আমদানিকারকরা ২০২২ সালে গাছ বিক্রির জন্য অর্ধ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ প্রদান করেছে।

দুর্ভাগ্যবশত, খুচরা পর্যায়ে ক্রিসমাস ট্রি কিনতে আমেরিকানদের কত টাকা খরচ করতে হয় তার কোনো সরকারি পরিসংখ্যান নেই। কৃত্রিম গাছের দাম প্রাকৃতিক গাছের চেয়ে বেশি। তবে অতিরিক্ত দামে কিনতে হলেও কৃত্রিম গাছ একবারের বেশি ব্যবহার করা যায়।

ক্রেতাদের মধ্যে দুটি ব্যবসা গ্রুপের চালানো সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে একটি ক্রিসমাস ট্রির জন্য ৮০ থেকে ১০০ ডলার খরচ হয়েছে। এর মানে হলো ক্রিসমাস ট্রির উৎপাদন খরচের চেয়ে প্রায় ৪০০% থেকে ৫০০% দামে বিক্রি হয়; জিনস কিংবা বার থেকে পানীয় গ্রহণের ক্ষেত্রেও এ ধরনের হিসাব রয়েছে।

 ২০২২ সালে প্রতিটি ৮০ ডলারে বিক্রি হওয়া ১৫ মিলিয়ন প্রাকৃতিক ক্রিসমাস ট্রি এবং ১০০ ডলারে বিক্রি হওয়া ২০ মিলিয়ন কৃত্রিম ট্রির বাজার বছরে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার। সাজসজ্জা বাদে এটি শুধু ক্রিসমাস ট্রি কেনাবেচার খরচ।

পরামর্শ

কয়েকটি উপায়ে ক্রিসমাস ট্রি কেনার সুযোগ রয়েছে জানিয়ে সায়েন্টিফিক আমেরিকান ওই প্রতিবেদনে পরামর্শ দেয়। তারা বলছে, ক্রিসমাস ট্রিরও আলাদা ধরন রয়েছে। কিন্তু ক্রিসমাস ট্রি কেনার ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়গুলো বিবেচনায় নেবেন? কেনার ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই মূল্য, পরিবেশগত কারণ এবং শরীরে অ্যালার্জির মতো বিষয়গুলো বিবেচনায় থাকবে। তবে এখানে কোনো নিশ্চিত এবং সহজ উত্তর নেই। সবাই পরামর্শ মতো চলতে পারে না। এক ব্যক্তির উদাহরণ দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, তার কাছে একাধিক ক্রিসমাস ট্রি রয়েছে। এর মধ্যে ১২ ফুটের একটি কৃত্রিম ক্রিসমাস ট্রি রয়েছে, যেটি তার দাদির কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া। আরেকটি প্রাকৃতিক, যেটি স্থানীয় ক্রিসমাস ট্রি ফার্ম থেকে কেনা; এটি উচ্চতায় ৭ ফুট।