ঢাকা ০১:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিমুলিয়ায় এক ফেরিতে ৩ হাজার যাত্রী, ৫০০ টাকায় ট্রলারে পদ্মা পাড়ি

শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ঘাট থেকে সোমবার সকাল ১০টার দিকে একটি ফেরি ছেড়ে গেছে। এক ফেরিতেই অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে পার হয়েছেন দক্ষিণবঙ্গের ঘরমুখো ৩ হাজার যাত্রী।

এছাড়াও গতকাল রবিবার দিনগত রাত থেকে আজ ভোর পর্যন্ত ১১টি ফেরিতে পণ্যবোঝাই যানবাহন পারাপার করা হয়েছে। রাতভর ওই ফেরিগুলোতে পণ্যবোঝাই যানবাহনের সঙ্গে ঘরমুখো হাজার হাজার যাত্রী পদ্মা পাড়ি দিয়েছেন।

এদিকে, ফেরি, লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ থাকার পরও শিমুলিয়া ঘাটে দক্ষিণবঙ্গের ঘরমুখো যাত্রীর ঢল অব্যাহত রয়েছে। হাজার হাজার যাত্রী এখনো শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছেন। অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ফেরি ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় তারা ঘাটের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান করছেন।

বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) সাফায়েত আহমেদ জানিয়েছেন, রবিবার দিনগত রাত থেকে গতকাল ভোর ৬টা পর্যন্ত নিয়ম মাফিক পণ্যবোঝাই যানবাহন পারাপারের জন্য ফেরি চলাচল করেছে।

তা ছাড়া আজ সকালে ৫-৬টি লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে শিমুলিয়া ঘাট ছেড়ে যায় ফেরি যমুনা। এ ফেরিতে হাজার হাজার যাত্রী অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে নৌরুট পারাপার হয়েছেন।

তিনি বলেন, শুধুমাত্র অ্যাম্বুলেন্স পারাপারের জন্যই ফেরি যমুনা ছাড়া হয়েছিল। তবে এ সময় ঘরমুখো যাত্রীদের তো আর আটকে রাখা যায়নি।

মুন্সীগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নাজমুল রায়হান জানান, শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে ৫ শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক।

তিনি বলেন, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোসহ যাত্রীবাহী কোনো যানবাহন ঘাট এলাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। যাত্রীবাহী যানবাহন শিমুলিয়া মোড়ের চেকপোস্ট ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

ঝুঁকি নিয়ে শিমুলিয়া ঘাটের একটু দূরে গিয়ে ট্রলারে উঠছেন

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেকেই গত রবিবার সকাল থেকে ঘাটে ফেরির অপেক্ষায় থেকে বিরক্ত হয়ে বেশি ঝুঁকি নিয়ে শিমুলিয়া ঘাটের একটু দূরে গিয়ে ট্রলারে উঠছেন। ভাড়া ৫শ থেকে ৬শ টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে যাত্রীদের কাছ থেকে। যাত্রী কম নিলে ৬শ আর যাত্রী বেশি নিলে ভাড়া ৫শ টাকা।

একটি ট্রলারে কমপক্ষে ২০ জন উঠতে পারলে সেখানে ৩০-৪০ জন করে গড়ে তুলে পদ্মা পার করে শিবচর ও জাজিরার মাঝে দুর্গম চরের পাশে তাদের নামিয়ে দিচ্ছে। এরপর সেখান থেকে পায়ে হেঁটে ঘাট এলাকায় আসছেন।

অন্যদিকে পদ্মা নদীতে কোস্টগার্ডের সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে। তারপরও কীভাবে এই ট্রলারগুলো শিমুলিয়া থেকে আসছে সেদিকে কারও নজর নেই।

পটুয়াখালীগামী এক গৃহিণী রওশনারা বলেন, গতকাল থেকে পরিবার নিয়ে শিমুলিয়া ঘাটে বসে ছিলাম অনেকবার চেষ্টা করেছি ফেরিতে উঠতে কিন্তু পরিবার নিয়ে উঠতে পারিনি তা ছাড়া ফেরিও মাত্র দুটি পেয়েছিলাম। রাতেও উঠতে পারিনি তাই বাধ্য হয়ে পরিবার নিয়ে ট্রলারে পদ্মা পার হলাম।

তিনি বলেন, ঝুঁকি ছিল বেশি আর আমিসহ আমার পরিবারের সবাই ভয়ে ভয়ে ছিলাম। যাই হোক এপারতো আসতে পারছি।

কুড়িগ্রামগামী এক যাত্রী বলেন, ট্রলারে আসবো না কি করবো বলেন, ফেরিতে তো উঠতে পারছি না। লকডাউন শুধু আমাদের জন্য। ভাড়া ৫শ নিছে তারপরও বাড়ি যেতে পারবো তাতেই খুশি।

খুলনাগামী এক যাত্রী রহুল আমিন জানান, লকডাউন দিলে সব বন্ধ রাখবে কিন্তু সবকিছু খুলে দিয়ে আমাদের বাড়ি যাওয়া ফিরাচ্ছে লঞ্চ ফেরি বন্ধ রেখে। এটা কি ঠিক বলেন?। এখন যা হচ্ছে মানুষের দুর্ভোগ তাতে মানুষ আরও বেশি অসুস্থ হয়ে যাবে। সরকারের উচিত লঞ্চ চালু না করলেও ফেরিগুলো সব চালু করা।

এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের অবাধে যাতায়াত ঠেকাতে শিমুলিয়া ঘাটে রোববার সকাল থেকে টহল দিচ্ছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। তবে বিজিবি সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে নানা কৌশলে যাত্রীরা ঢুকে পড়ছেন ঘাট এলাকায়।

এখনো ঘাট পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে হাজারো যাত্রী। যাত্রীদের পারাপার ঠেকাতে গতকাল শনিবার ভোর থেকে সকল প্রকার ফেরি চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে ফেরি কর্তৃপক্ষ কিন্তু তারপরও ওই দিনও কয়েকটি ফেরি শিমুলিয়া থেকে বাংলাবাজার ঘাটে যাত্রী নিয়ে আসে এবং বাংলাবাজার থেকে শিমুলিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

বাংলাবাজার নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, যারা ট্রলারে পার করছে তারা কিন্তু আমাদের ঘাটের আশপাশেও ভিড়ছে না। তারা জানে যেখানে কোন পুলিশ বা গার্ড নেই সেখানে ভিড়ছে। তা ছাড়া এই ট্রলার যদি শিমুলিয়া থেকে না ছাড়তো তাহলেতো আমাদের এখানে আসতো না। এটা দেখা উচিত শিমুলিয়া ঘাট থেকে। তবে আমরা চেষ্টা করছি যাতে কেউ ট্রলারে পার না হয়।

Tag :
জনপ্রিয়

শিমুলিয়ায় এক ফেরিতে ৩ হাজার যাত্রী, ৫০০ টাকায় ট্রলারে পদ্মা পাড়ি

Update Time : ০৭:৫২:২৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ মে ২০২১

শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ঘাট থেকে সোমবার সকাল ১০টার দিকে একটি ফেরি ছেড়ে গেছে। এক ফেরিতেই অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে পার হয়েছেন দক্ষিণবঙ্গের ঘরমুখো ৩ হাজার যাত্রী।

এছাড়াও গতকাল রবিবার দিনগত রাত থেকে আজ ভোর পর্যন্ত ১১টি ফেরিতে পণ্যবোঝাই যানবাহন পারাপার করা হয়েছে। রাতভর ওই ফেরিগুলোতে পণ্যবোঝাই যানবাহনের সঙ্গে ঘরমুখো হাজার হাজার যাত্রী পদ্মা পাড়ি দিয়েছেন।

এদিকে, ফেরি, লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ থাকার পরও শিমুলিয়া ঘাটে দক্ষিণবঙ্গের ঘরমুখো যাত্রীর ঢল অব্যাহত রয়েছে। হাজার হাজার যাত্রী এখনো শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছেন। অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ফেরি ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় তারা ঘাটের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান করছেন।

বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) সাফায়েত আহমেদ জানিয়েছেন, রবিবার দিনগত রাত থেকে গতকাল ভোর ৬টা পর্যন্ত নিয়ম মাফিক পণ্যবোঝাই যানবাহন পারাপারের জন্য ফেরি চলাচল করেছে।

তা ছাড়া আজ সকালে ৫-৬টি লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে শিমুলিয়া ঘাট ছেড়ে যায় ফেরি যমুনা। এ ফেরিতে হাজার হাজার যাত্রী অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে নৌরুট পারাপার হয়েছেন।

তিনি বলেন, শুধুমাত্র অ্যাম্বুলেন্স পারাপারের জন্যই ফেরি যমুনা ছাড়া হয়েছিল। তবে এ সময় ঘরমুখো যাত্রীদের তো আর আটকে রাখা যায়নি।

মুন্সীগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নাজমুল রায়হান জানান, শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে ৫ শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক।

তিনি বলেন, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোসহ যাত্রীবাহী কোনো যানবাহন ঘাট এলাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। যাত্রীবাহী যানবাহন শিমুলিয়া মোড়ের চেকপোস্ট ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

ঝুঁকি নিয়ে শিমুলিয়া ঘাটের একটু দূরে গিয়ে ট্রলারে উঠছেন

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেকেই গত রবিবার সকাল থেকে ঘাটে ফেরির অপেক্ষায় থেকে বিরক্ত হয়ে বেশি ঝুঁকি নিয়ে শিমুলিয়া ঘাটের একটু দূরে গিয়ে ট্রলারে উঠছেন। ভাড়া ৫শ থেকে ৬শ টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে যাত্রীদের কাছ থেকে। যাত্রী কম নিলে ৬শ আর যাত্রী বেশি নিলে ভাড়া ৫শ টাকা।

একটি ট্রলারে কমপক্ষে ২০ জন উঠতে পারলে সেখানে ৩০-৪০ জন করে গড়ে তুলে পদ্মা পার করে শিবচর ও জাজিরার মাঝে দুর্গম চরের পাশে তাদের নামিয়ে দিচ্ছে। এরপর সেখান থেকে পায়ে হেঁটে ঘাট এলাকায় আসছেন।

অন্যদিকে পদ্মা নদীতে কোস্টগার্ডের সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে। তারপরও কীভাবে এই ট্রলারগুলো শিমুলিয়া থেকে আসছে সেদিকে কারও নজর নেই।

পটুয়াখালীগামী এক গৃহিণী রওশনারা বলেন, গতকাল থেকে পরিবার নিয়ে শিমুলিয়া ঘাটে বসে ছিলাম অনেকবার চেষ্টা করেছি ফেরিতে উঠতে কিন্তু পরিবার নিয়ে উঠতে পারিনি তা ছাড়া ফেরিও মাত্র দুটি পেয়েছিলাম। রাতেও উঠতে পারিনি তাই বাধ্য হয়ে পরিবার নিয়ে ট্রলারে পদ্মা পার হলাম।

তিনি বলেন, ঝুঁকি ছিল বেশি আর আমিসহ আমার পরিবারের সবাই ভয়ে ভয়ে ছিলাম। যাই হোক এপারতো আসতে পারছি।

কুড়িগ্রামগামী এক যাত্রী বলেন, ট্রলারে আসবো না কি করবো বলেন, ফেরিতে তো উঠতে পারছি না। লকডাউন শুধু আমাদের জন্য। ভাড়া ৫শ নিছে তারপরও বাড়ি যেতে পারবো তাতেই খুশি।

খুলনাগামী এক যাত্রী রহুল আমিন জানান, লকডাউন দিলে সব বন্ধ রাখবে কিন্তু সবকিছু খুলে দিয়ে আমাদের বাড়ি যাওয়া ফিরাচ্ছে লঞ্চ ফেরি বন্ধ রেখে। এটা কি ঠিক বলেন?। এখন যা হচ্ছে মানুষের দুর্ভোগ তাতে মানুষ আরও বেশি অসুস্থ হয়ে যাবে। সরকারের উচিত লঞ্চ চালু না করলেও ফেরিগুলো সব চালু করা।

এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের অবাধে যাতায়াত ঠেকাতে শিমুলিয়া ঘাটে রোববার সকাল থেকে টহল দিচ্ছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। তবে বিজিবি সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে নানা কৌশলে যাত্রীরা ঢুকে পড়ছেন ঘাট এলাকায়।

এখনো ঘাট পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে হাজারো যাত্রী। যাত্রীদের পারাপার ঠেকাতে গতকাল শনিবার ভোর থেকে সকল প্রকার ফেরি চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে ফেরি কর্তৃপক্ষ কিন্তু তারপরও ওই দিনও কয়েকটি ফেরি শিমুলিয়া থেকে বাংলাবাজার ঘাটে যাত্রী নিয়ে আসে এবং বাংলাবাজার থেকে শিমুলিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

বাংলাবাজার নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, যারা ট্রলারে পার করছে তারা কিন্তু আমাদের ঘাটের আশপাশেও ভিড়ছে না। তারা জানে যেখানে কোন পুলিশ বা গার্ড নেই সেখানে ভিড়ছে। তা ছাড়া এই ট্রলার যদি শিমুলিয়া থেকে না ছাড়তো তাহলেতো আমাদের এখানে আসতো না। এটা দেখা উচিত শিমুলিয়া ঘাট থেকে। তবে আমরা চেষ্টা করছি যাতে কেউ ট্রলারে পার না হয়।