ঢাকা ০৪:৪৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৭ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এবারও নববর্ষ পালিত হচ্ছে ভিন্ন পরিবেশে, ঘরের ভেতরে

গত বছরের মতো এবারও বাংলা নববর্ষ এসেছে করোনা মহামারিকালে। এ পরিস্থিতিতে আজ থেকে শুরু হয়েছে আট দিনের ‘সর্বাত্মক লকডাউন’। ফলে এবারও নববর্ষ পালিত হচ্ছে ভিন্ন পরিবেশে, ঘরের ভেতরে। সাধারণত বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটি উপলক্ষে দেশজুড়ে চলে নানা উৎসব-আয়োজন। পহেলা বৈশাখ ভোরবেলায় রাজধানীর রমনা বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠান আমাদের বর্ষবরণ উৎসবের অবিচ্ছেদ্য অংশ। নববর্ষ উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে বসে বৈশাখী মেলা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে বের করা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। চলে আরও নানা আয়োজন। এসবের মাঝে বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরার প্রয়াস থাকে। কিন্তু এবার এসবের কিছুই হচ্ছে না। তবে মানুষ ঘরে থাকলেও তাদের অন্তরে থাকবে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার তাগিদ। অনেকে ঘরে বসেই বাঙালি সংস্কৃতি চর্চায় আত্মনিয়োগ করবেন। অন্তত আমরা তেমনটিই আশা করি। সবার ঘরে ঘরে উদযাপিত হোক নববর্ষ।

ঘরে পান্তা ইলিশের আয়োজন নেই

বৈশাখের যে আয়োজন চলে এবার তা নেই। ঘরে ঘরে পান্তা ইলিশের আয়োজনও বলতে গেলে এবার ম্লান করে দিয়েছে করোনা। আনন্দের পরিবর্তে বেদনায় ভারাক্রান্ত বৈশাখে মলিন বাঙালির মুখ। গত বছরের মতো এবারো করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির কারণে পহেলা বৈশাখের দিন থেকেই আসছে কঠোর লকডাউন। আবার নববর্ষের প্রথম দিন থেকেই শুরু হচ্ছে রোজা। সব মিলিয়ে অন্য রকম এক বাংলা নতুন বছর আসছে এবার ।

নিত্যপণ্যের বাজারে বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখের কেনাকাটার ধুম না থাকলেও বেড়েছে ভোজ্যতেল মসুর ডাল পেঁয়াজ ও চালের দাম। বাজারভর্তি ইলিশ কিন্তু কেনার আগ্রহ নেই ভোক্তাদের। গত কয়েক দশকের মধ্যে পরপর দুইবার জৌলুসহীন বৈশাখ দেখছে বাঙালি। কারণ প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস মানুষকে ঘরবন্দী করার পাশাপাশি আনন্দহীন করে তুলেছে। আজ বুধবার থেকে লাগাতার বন্ধ থাকবে মার্কেট, শপিংমল ও ফ্যাশন হাউসসহ সবকিছুই। শুধু নিত্যপণ্যের দোকানগুলো খোলা থাকবে তাও আবার নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। তবে বৈশাখী কেনাকাটা না থাকলেও রমজানের প্রস্তুতি রয়েছে ভোক্তাদের। মুদি দোকানগুলোও ইফতারি আইটেমের সংগ্রহ বাড়িয়েছে। ক্রেতারা ইতোমধ্যে ছোলা, ডাল, ভোজ্যতেল ও খেজুরের মতো পণ্যের কেনাকাটা বাড়িয়ে দিয়েছেন।

জানা গেছে, পহেলা বৈশাখের এই সময়ে বাজারে ইলিশের চাহিদা তৈরি হয়। যদিও মা ইলিশ রক্ষায় কয়েক বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পহেলা বৈশাখের সব অনুষ্ঠানে ইলিশ বর্জনের আহ্বান জানান। এরপর ইলিশ নিয়ে তেমন মাতামাতি না হলেও বৈশাখের আগের দিন নগরবাসী কিছু ইলিশ কিনে থাকেন। কিন্তু করোনার ছোবলে গতবারের মতো এবারো ইলিশ নিয়ে কারো আগ্রহ নেই। আজ বুধবার পহেলা বৈশাখ সারাদেশে হবে নববর্ষ বরণ। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ইলিশ চোখে পড়ে। ক্রেতাদের কাছে চাহিদা না থাকায় অনেকটা সস্তায় বিক্রি হয়েছে জাতীয় মাছ ইলিশ। মাঝারি মানের প্রতিকেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। এছাড়া বড় সাইজের প্রতিকেজি রুপালি ইলিশ ৮০০ থেকে  হাজার টাকায় কিনতে পেরেছেন ভোক্তারা।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, প্রচুর ইলিশ থাকলেও ক্রেতা নেই তেমন। নেই বৈশাখী কোনও আমেজ ও উত্তেজনা। সে কারণে নিত্যদিনের বাজারের চিত্রই ইলিশ মাছের দোকানগুলোতে দেখা যাচ্ছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টাউন হল, কৃষি মার্কেট, সিয়া মসজিদ বাজারসহ আশপাশের মাছ বাজারে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।

শতজনের প্রতীকী মঙ্গল শোভাযাত্রায় বর্ষবরণ

এ বছরই মঙ্গলশোভাযাত্রার তিরিশ বছর পূর্তি হচ্ছে। করোনা মহামারির কারণে এবারও জাতিসংঘের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজনও বাতিল করা হয়েছে। তবে জনসমাগমে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় জনতার ঢলে মঙ্গলশোভাযাত্রার পরিবর্তে এবার প্রতীকীভাবে আয়োজন করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ। ১০০ জনের ‘প্রতীকী’ মঙ্গল শোভাযাত্রা করা হচ্ছে। শোভাযাত্রাটি সীমাবদ্ধ থাকবে চারুকলা অনুষদ চত্বরেই। এক্ষেত্রে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হবে। টেলিভিশন চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার হবে।

এ প্রসঙ্গে চারুকলা অনুষদের ডীন শিল্পী নিসার হোসেন বলেন, বিশ^বিদ্যালয়ের একটা সিদ্ধান্ত ছিল, পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিকও হয়, তবুও জনগণের সম্পৃক্ততা থাকবে না এবারের শোভাযাত্রায়। যদিও আমরা যখন সিদ্ধান্ত নিই তখন মনে হচ্ছিল যে, পরিস্থিতি ভালো হয়ে যাবে। তখনও সিদ্ধান্ত ছিল জনসম্পৃক্ত করা যাবে না। ওই সিদ্ধান্তেই অটল আছি। প্রয়োজনে চারুকলা অনুষদের ভেতরেই শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে একটা ছোটখাট আয়োজন করব। এটাই বিভিন্ন চ্যানেলে ইউটিউবে ভার্চুয়ালি, প্রচারিত হবে।

বাংলা সনের প্রবর্তন হয়েছিল খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে। নববর্ষে বিশেষত গ্রামাঞ্চলে দোকানে দোকানে হালখাতা খোলার রীতি আজও প্রচলিত। বৈশাখী মেলাকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ অর্থনীতিতে এক ধরনের প্রাণসঞ্চার হয় প্রতি বছর। হস্তশিল্পের প্রসারে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। ক্ষুদ্র ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে এ শিল্প। এসব কর্মকাণ্ড আমাদের অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে যুক্ত করছে নতুন মাত্রা। তাই ব্যবসায়ীরা এ দিনটির অপেক্ষায় থাকেন। দুঃখজনক, এবার এসবের কিছুই হবে না বিদ্যমান বাস্তবতায়।

বাংলা নববর্ষের হাত ধরে প্রায় একই সময়ে উদযাপিত হয় আদিবাসী গোষ্ঠীর বৈসাবি, বিজু ইত্যাদি উৎসব। চৈত্রসংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখের নানা আয়োজন চলে বিভিন্ন পাহাড়ি গোষ্ঠীর মধ্যে। উপমহাদেশের অন্যান্য জাতির নববর্ষও আসে প্রায় একই সময়ে। তবে এবার সর্বত্রই প্রায় অভিন্ন পরিস্থিতি থাকায় সব উৎসবই উদযাপিত হবে সীমিত পরিসরে। এর মধ্যেও আমরা নতুন বছরকে বরণ করে নেব। আমাদের শিল্প-সংস্কৃতির ধারাকে ঋদ্ধ ও বেগবান করার শপথ নেব। সব রোগ-শোক-জরা-গ্লানি ঝেড়ে ফেলে নতুন বছর দেশবাসীর জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধির বার্তা বয়ে আনবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। শুভ হোক ১৪২৮।

Tag :
জনপ্রিয়

এবারও নববর্ষ পালিত হচ্ছে ভিন্ন পরিবেশে, ঘরের ভেতরে

Update Time : ০৮:৫৬:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ এপ্রিল ২০২১

গত বছরের মতো এবারও বাংলা নববর্ষ এসেছে করোনা মহামারিকালে। এ পরিস্থিতিতে আজ থেকে শুরু হয়েছে আট দিনের ‘সর্বাত্মক লকডাউন’। ফলে এবারও নববর্ষ পালিত হচ্ছে ভিন্ন পরিবেশে, ঘরের ভেতরে। সাধারণত বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটি উপলক্ষে দেশজুড়ে চলে নানা উৎসব-আয়োজন। পহেলা বৈশাখ ভোরবেলায় রাজধানীর রমনা বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠান আমাদের বর্ষবরণ উৎসবের অবিচ্ছেদ্য অংশ। নববর্ষ উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে বসে বৈশাখী মেলা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে বের করা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। চলে আরও নানা আয়োজন। এসবের মাঝে বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরার প্রয়াস থাকে। কিন্তু এবার এসবের কিছুই হচ্ছে না। তবে মানুষ ঘরে থাকলেও তাদের অন্তরে থাকবে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার তাগিদ। অনেকে ঘরে বসেই বাঙালি সংস্কৃতি চর্চায় আত্মনিয়োগ করবেন। অন্তত আমরা তেমনটিই আশা করি। সবার ঘরে ঘরে উদযাপিত হোক নববর্ষ।

ঘরে পান্তা ইলিশের আয়োজন নেই

বৈশাখের যে আয়োজন চলে এবার তা নেই। ঘরে ঘরে পান্তা ইলিশের আয়োজনও বলতে গেলে এবার ম্লান করে দিয়েছে করোনা। আনন্দের পরিবর্তে বেদনায় ভারাক্রান্ত বৈশাখে মলিন বাঙালির মুখ। গত বছরের মতো এবারো করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির কারণে পহেলা বৈশাখের দিন থেকেই আসছে কঠোর লকডাউন। আবার নববর্ষের প্রথম দিন থেকেই শুরু হচ্ছে রোজা। সব মিলিয়ে অন্য রকম এক বাংলা নতুন বছর আসছে এবার ।

নিত্যপণ্যের বাজারে বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখের কেনাকাটার ধুম না থাকলেও বেড়েছে ভোজ্যতেল মসুর ডাল পেঁয়াজ ও চালের দাম। বাজারভর্তি ইলিশ কিন্তু কেনার আগ্রহ নেই ভোক্তাদের। গত কয়েক দশকের মধ্যে পরপর দুইবার জৌলুসহীন বৈশাখ দেখছে বাঙালি। কারণ প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস মানুষকে ঘরবন্দী করার পাশাপাশি আনন্দহীন করে তুলেছে। আজ বুধবার থেকে লাগাতার বন্ধ থাকবে মার্কেট, শপিংমল ও ফ্যাশন হাউসসহ সবকিছুই। শুধু নিত্যপণ্যের দোকানগুলো খোলা থাকবে তাও আবার নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। তবে বৈশাখী কেনাকাটা না থাকলেও রমজানের প্রস্তুতি রয়েছে ভোক্তাদের। মুদি দোকানগুলোও ইফতারি আইটেমের সংগ্রহ বাড়িয়েছে। ক্রেতারা ইতোমধ্যে ছোলা, ডাল, ভোজ্যতেল ও খেজুরের মতো পণ্যের কেনাকাটা বাড়িয়ে দিয়েছেন।

জানা গেছে, পহেলা বৈশাখের এই সময়ে বাজারে ইলিশের চাহিদা তৈরি হয়। যদিও মা ইলিশ রক্ষায় কয়েক বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পহেলা বৈশাখের সব অনুষ্ঠানে ইলিশ বর্জনের আহ্বান জানান। এরপর ইলিশ নিয়ে তেমন মাতামাতি না হলেও বৈশাখের আগের দিন নগরবাসী কিছু ইলিশ কিনে থাকেন। কিন্তু করোনার ছোবলে গতবারের মতো এবারো ইলিশ নিয়ে কারো আগ্রহ নেই। আজ বুধবার পহেলা বৈশাখ সারাদেশে হবে নববর্ষ বরণ। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ইলিশ চোখে পড়ে। ক্রেতাদের কাছে চাহিদা না থাকায় অনেকটা সস্তায় বিক্রি হয়েছে জাতীয় মাছ ইলিশ। মাঝারি মানের প্রতিকেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। এছাড়া বড় সাইজের প্রতিকেজি রুপালি ইলিশ ৮০০ থেকে  হাজার টাকায় কিনতে পেরেছেন ভোক্তারা।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, প্রচুর ইলিশ থাকলেও ক্রেতা নেই তেমন। নেই বৈশাখী কোনও আমেজ ও উত্তেজনা। সে কারণে নিত্যদিনের বাজারের চিত্রই ইলিশ মাছের দোকানগুলোতে দেখা যাচ্ছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টাউন হল, কৃষি মার্কেট, সিয়া মসজিদ বাজারসহ আশপাশের মাছ বাজারে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।

শতজনের প্রতীকী মঙ্গল শোভাযাত্রায় বর্ষবরণ

এ বছরই মঙ্গলশোভাযাত্রার তিরিশ বছর পূর্তি হচ্ছে। করোনা মহামারির কারণে এবারও জাতিসংঘের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজনও বাতিল করা হয়েছে। তবে জনসমাগমে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় জনতার ঢলে মঙ্গলশোভাযাত্রার পরিবর্তে এবার প্রতীকীভাবে আয়োজন করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ। ১০০ জনের ‘প্রতীকী’ মঙ্গল শোভাযাত্রা করা হচ্ছে। শোভাযাত্রাটি সীমাবদ্ধ থাকবে চারুকলা অনুষদ চত্বরেই। এক্ষেত্রে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হবে। টেলিভিশন চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার হবে।

এ প্রসঙ্গে চারুকলা অনুষদের ডীন শিল্পী নিসার হোসেন বলেন, বিশ^বিদ্যালয়ের একটা সিদ্ধান্ত ছিল, পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিকও হয়, তবুও জনগণের সম্পৃক্ততা থাকবে না এবারের শোভাযাত্রায়। যদিও আমরা যখন সিদ্ধান্ত নিই তখন মনে হচ্ছিল যে, পরিস্থিতি ভালো হয়ে যাবে। তখনও সিদ্ধান্ত ছিল জনসম্পৃক্ত করা যাবে না। ওই সিদ্ধান্তেই অটল আছি। প্রয়োজনে চারুকলা অনুষদের ভেতরেই শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে একটা ছোটখাট আয়োজন করব। এটাই বিভিন্ন চ্যানেলে ইউটিউবে ভার্চুয়ালি, প্রচারিত হবে।

বাংলা সনের প্রবর্তন হয়েছিল খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে। নববর্ষে বিশেষত গ্রামাঞ্চলে দোকানে দোকানে হালখাতা খোলার রীতি আজও প্রচলিত। বৈশাখী মেলাকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ অর্থনীতিতে এক ধরনের প্রাণসঞ্চার হয় প্রতি বছর। হস্তশিল্পের প্রসারে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। ক্ষুদ্র ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে এ শিল্প। এসব কর্মকাণ্ড আমাদের অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে যুক্ত করছে নতুন মাত্রা। তাই ব্যবসায়ীরা এ দিনটির অপেক্ষায় থাকেন। দুঃখজনক, এবার এসবের কিছুই হবে না বিদ্যমান বাস্তবতায়।

বাংলা নববর্ষের হাত ধরে প্রায় একই সময়ে উদযাপিত হয় আদিবাসী গোষ্ঠীর বৈসাবি, বিজু ইত্যাদি উৎসব। চৈত্রসংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখের নানা আয়োজন চলে বিভিন্ন পাহাড়ি গোষ্ঠীর মধ্যে। উপমহাদেশের অন্যান্য জাতির নববর্ষও আসে প্রায় একই সময়ে। তবে এবার সর্বত্রই প্রায় অভিন্ন পরিস্থিতি থাকায় সব উৎসবই উদযাপিত হবে সীমিত পরিসরে। এর মধ্যেও আমরা নতুন বছরকে বরণ করে নেব। আমাদের শিল্প-সংস্কৃতির ধারাকে ঋদ্ধ ও বেগবান করার শপথ নেব। সব রোগ-শোক-জরা-গ্লানি ঝেড়ে ফেলে নতুন বছর দেশবাসীর জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধির বার্তা বয়ে আনবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। শুভ হোক ১৪২৮।