ঢাকা ০৯:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

করোনার ডাবল ডোজ টিকা সনদ না থাকায় ডা. মুরাদ হাসান কানাডা ঢুকতে পারেননি

করোনার ডাবল ডোজ টিকা সনদ না থাকায় দেশ ছেড়ে যাওয়া সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান কানাডা ঢুকতে পারেননি। কানাডায় ঢুকতে চেয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর মুরাদ হাসান দুবাইয়ের ভিসা পাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন। কিন্তু দুবাইয়ের ভিসা না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত দেশে ফিরেন আসেন তিনি। কিন্তু ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট ও কোভিড প্রোটোকল না মেনে মুরাদ কীভাবে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে কানাডায় গেলেন?

এ বিষয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক এ এইচ এম তৌহিদ-উল আহসান বলেন, বিমানবন্দর দিয়ে যে যাত্রীই বাইরের দেশে যান, সেসব বহির্গমন যাত্রীদের স্বাস্থ্য সনদ চেক করা, ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট চেক করার দায়িত্ব সিভিল এভিয়েশনের। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের না। আমরা ইমিগ্রেশন করি, যাত্রীদের সেবা দেই। ইমিগ্রেশন শাখা ইমিগ্রেশন করবে, স্বাস্থ্যের কাজ স্বাস্থ্য করবে। তিনি বলেন, মুরাদের এ সংক্রান্ত তথ্য জানতে হলে আপনাদের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করলে তারা ভালো উত্তর দিতে পারবেন।

আশালীন ও বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো ডা. মুরাদ হাসান কানাডার পর দুবাইয়ে ঢুকতে চেয়ে ব্যর্থ হয়ে দেশে ফিরেছেন।

রবিবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটের দিকে এমিরেটসের ইকে-৫৮৬ নম্বর ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে তিনি। এরপর প্রথমে মুরাদকে ইমিগ্রেশন অফিসে নেয়া হয়। পরে ইমিগ্রেশনে থাকা কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। বিমানবন্দরের একাধিক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ডা. মুরাদ হাসানের কানাডায় প্রবেশ ঠেকাতে ১৭১টি ইমেইল করা হয় দেশটির ইমিগ্রেশন এবং বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সিতে

তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের কানাডায় প্রবেশ ঠেকাতে ১৭১টি ইমেইল করা হয় দেশটির ইমিগ্রেশন এবং বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সিতে। যার ফলে কূটনৈতিক পাসপোর্ট থাকা স্বত্বেও কানাডায় প্রবেশ করতে পারেননি তিনি।

এ তথ্য দিয়েছেন কানাডা প্রবাসী ও ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডির গবেষক মঞ্জুরে খোদা টরিক। গত সেপ্টেম্বরেই কানাডায় গিয়েছিলেন মুরাদ হাসান। অথচ তিন মাসের ব্যবধানে ঘটনার চিত্রই পাল্টে গেল।

মুরাদ হাসানকে কেন আটকে দিল কানাডার বর্ডার সার্ভিস এজেন্সি? এ প্রশ্নের জবাবে গবেষক মঞ্জুরে খোদা টরিক জানান, কানাডায় যাতে মুরাদকে ঢুকতে দেওয়া না হয়, সে জন্য প্রবাসীদের একটি অংশ সক্রিয় ছিল আগে থেকেই।  তাকে রুখতে কানাডার বর্ডার সার্ভিস এজেন্সি বরাবর ১৭১টি ইমেইল গিয়েছে।

টরিখের সংগঠনও ইমেইল করেছে। তিনি ‘লুটেরা বিরোধী মঞ্চ’ নামের একটি সংগঠনের সংগঠক।

এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে মঞ্জুরে খোদা টরিক বলেন, ‘মুরাদ হাসানের কানাডা আসার খবরে আমরা এখানে কানাডার বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সির ওয়েবসাইটে গিয়ে ইমেইল করি। বাংলাদেশে মুরাদ হাসানের অপকীর্তির কথা বিস্তারিত লিখি। এর সঙ্গে বিভিন্ন সংবাদ ও মুরাদের ভিডিও ক্লিপ জুড়ে দিই। শুনেছি আমাদের মতো এমন ১৭১ ইমেইল নাকি গেছে এজেন্সিতে। এখানে কর্মরত দুই বাংলাদেশি সাংবাদিক এ তথ্য জানিয়েছে আমাদের।  আমাদের বিশ্বাস, এসব ইমেইলকে গুরুত্ব দিয়ে দেখেছে কানাডা প্রশাসন। মুরাদকে কানাডায় ঢুকতে না দেওয়ার ব্যাপারে এটি কাজে দিয়েছে।’

টরিখ আরো জানান, কানাডায় সব কিছুই খুব নিয়মতান্ত্রিক। অনিয়মের দেখা মিলবে না এ দেশে।  ডা. মুরাদের বিষয়েও হয়তো কোনো অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে এজেন্সি।

অনিয়ম প্রশ্নে ঢাকায় কানাডীয় হাইকমিশন থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে যেসব কাগজপত্র থাকা প্রয়োজন ছিল, তা না থাকায় মুরাদ হাসানকে বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয়।

বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কানাডা বিমানবন্দরে জিজ্ঞাসাবাদে মুরাদকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। পরে তাকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ায়ের একটি বিমানে তুলে দেওয়া হয়। বিপুলসংখ্যক কানাডিয়ান নাগরিক কানাডায় তার প্রবেশের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছেন বলেও তাকে জানানো হয়।

মুরাদ হাসান এরপর মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে ঢোকার চেষ্টা করেন। কিন্তু ভিসা না থাকায় দুবাইয়ে ইমিগ্রেশনও আটকে দেয় সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীকে। দুবাই থেকে অবশেষে আজ রবিবার বিকেল ৫টার দিকে ঢাকায় ফিরেছেন মুরাদ।তথ্যসূত্র: দেশ রুপান্তর

Tag :
জনপ্রিয়

করোনার ডাবল ডোজ টিকা সনদ না থাকায় ডা. মুরাদ হাসান কানাডা ঢুকতে পারেননি

Update Time : ০৩:৪৬:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২১

করোনার ডাবল ডোজ টিকা সনদ না থাকায় দেশ ছেড়ে যাওয়া সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান কানাডা ঢুকতে পারেননি। কানাডায় ঢুকতে চেয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর মুরাদ হাসান দুবাইয়ের ভিসা পাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন। কিন্তু দুবাইয়ের ভিসা না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত দেশে ফিরেন আসেন তিনি। কিন্তু ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট ও কোভিড প্রোটোকল না মেনে মুরাদ কীভাবে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে কানাডায় গেলেন?

এ বিষয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক এ এইচ এম তৌহিদ-উল আহসান বলেন, বিমানবন্দর দিয়ে যে যাত্রীই বাইরের দেশে যান, সেসব বহির্গমন যাত্রীদের স্বাস্থ্য সনদ চেক করা, ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট চেক করার দায়িত্ব সিভিল এভিয়েশনের। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের না। আমরা ইমিগ্রেশন করি, যাত্রীদের সেবা দেই। ইমিগ্রেশন শাখা ইমিগ্রেশন করবে, স্বাস্থ্যের কাজ স্বাস্থ্য করবে। তিনি বলেন, মুরাদের এ সংক্রান্ত তথ্য জানতে হলে আপনাদের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করলে তারা ভালো উত্তর দিতে পারবেন।

আশালীন ও বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো ডা. মুরাদ হাসান কানাডার পর দুবাইয়ে ঢুকতে চেয়ে ব্যর্থ হয়ে দেশে ফিরেছেন।

রবিবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটের দিকে এমিরেটসের ইকে-৫৮৬ নম্বর ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে তিনি। এরপর প্রথমে মুরাদকে ইমিগ্রেশন অফিসে নেয়া হয়। পরে ইমিগ্রেশনে থাকা কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। বিমানবন্দরের একাধিক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ডা. মুরাদ হাসানের কানাডায় প্রবেশ ঠেকাতে ১৭১টি ইমেইল করা হয় দেশটির ইমিগ্রেশন এবং বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সিতে

তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের কানাডায় প্রবেশ ঠেকাতে ১৭১টি ইমেইল করা হয় দেশটির ইমিগ্রেশন এবং বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সিতে। যার ফলে কূটনৈতিক পাসপোর্ট থাকা স্বত্বেও কানাডায় প্রবেশ করতে পারেননি তিনি।

এ তথ্য দিয়েছেন কানাডা প্রবাসী ও ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডির গবেষক মঞ্জুরে খোদা টরিক। গত সেপ্টেম্বরেই কানাডায় গিয়েছিলেন মুরাদ হাসান। অথচ তিন মাসের ব্যবধানে ঘটনার চিত্রই পাল্টে গেল।

মুরাদ হাসানকে কেন আটকে দিল কানাডার বর্ডার সার্ভিস এজেন্সি? এ প্রশ্নের জবাবে গবেষক মঞ্জুরে খোদা টরিক জানান, কানাডায় যাতে মুরাদকে ঢুকতে দেওয়া না হয়, সে জন্য প্রবাসীদের একটি অংশ সক্রিয় ছিল আগে থেকেই।  তাকে রুখতে কানাডার বর্ডার সার্ভিস এজেন্সি বরাবর ১৭১টি ইমেইল গিয়েছে।

টরিখের সংগঠনও ইমেইল করেছে। তিনি ‘লুটেরা বিরোধী মঞ্চ’ নামের একটি সংগঠনের সংগঠক।

এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে মঞ্জুরে খোদা টরিক বলেন, ‘মুরাদ হাসানের কানাডা আসার খবরে আমরা এখানে কানাডার বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সির ওয়েবসাইটে গিয়ে ইমেইল করি। বাংলাদেশে মুরাদ হাসানের অপকীর্তির কথা বিস্তারিত লিখি। এর সঙ্গে বিভিন্ন সংবাদ ও মুরাদের ভিডিও ক্লিপ জুড়ে দিই। শুনেছি আমাদের মতো এমন ১৭১ ইমেইল নাকি গেছে এজেন্সিতে। এখানে কর্মরত দুই বাংলাদেশি সাংবাদিক এ তথ্য জানিয়েছে আমাদের।  আমাদের বিশ্বাস, এসব ইমেইলকে গুরুত্ব দিয়ে দেখেছে কানাডা প্রশাসন। মুরাদকে কানাডায় ঢুকতে না দেওয়ার ব্যাপারে এটি কাজে দিয়েছে।’

টরিখ আরো জানান, কানাডায় সব কিছুই খুব নিয়মতান্ত্রিক। অনিয়মের দেখা মিলবে না এ দেশে।  ডা. মুরাদের বিষয়েও হয়তো কোনো অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে এজেন্সি।

অনিয়ম প্রশ্নে ঢাকায় কানাডীয় হাইকমিশন থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে যেসব কাগজপত্র থাকা প্রয়োজন ছিল, তা না থাকায় মুরাদ হাসানকে বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয়।

বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কানাডা বিমানবন্দরে জিজ্ঞাসাবাদে মুরাদকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। পরে তাকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ায়ের একটি বিমানে তুলে দেওয়া হয়। বিপুলসংখ্যক কানাডিয়ান নাগরিক কানাডায় তার প্রবেশের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছেন বলেও তাকে জানানো হয়।

মুরাদ হাসান এরপর মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে ঢোকার চেষ্টা করেন। কিন্তু ভিসা না থাকায় দুবাইয়ে ইমিগ্রেশনও আটকে দেয় সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীকে। দুবাই থেকে অবশেষে আজ রবিবার বিকেল ৫টার দিকে ঢাকায় ফিরেছেন মুরাদ।তথ্যসূত্র: দেশ রুপান্তর