রোজাদারের সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত ইফতারের সময়। কারণ এ সময় আল্লাহ তাআলা তাঁর রোজাদার বান্দাদের দোয়া কবুল করেন এবং ইফতারের মাধ্যমেই একজন রোজাদার তাঁর রোজা সম্পন্নের পর মহান আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন করেন।
সারা পৃথিবীতে মুসলমানরা ইসলামের বিধান অনুযায়ী একই নিয়মে রোজা পালন করছেন। রোজাদারের সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত ইফতারের সময়। কারণ এ সময় আল্লাহতাআলা তাঁর রোজাদার বান্দাদের দোয়া কবুল করেন এবং ইফতারের মাধ্যমেই একজন রোজাদার তাঁর রোজা সম্পন্নের পর মহান আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন করেন।
প্রিয় নবী (সা.) খেজুর ও কয়েক ঢোঁক পানি দিয়েই ইফতার শুরু করতেন। সময়ের পরিবর্তনে তাতে যোগ হয়েছে হরেক রকম খাবার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইফতারের ধরন বিভিন্ন রকম। আবার অঞ্চলভেদে একই দেশে বিভিন্ন রকম ইফতার হয়ে থাকে। সাধারণভাবে সব দেশের ইফতারে ফল, জুস, খেজুর, পানি, দুধ বেশ প্রচলিত। এগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয় স্থানীয় কোনো কোনো আইটেম। জেনে নিন বিভিন্ন দেশের মুসলিমরা যেসব ইফতার খেয়ে থাকেন-
বাংলাদেশ
বাংলাদেশে সারাদিনের রোজা শেষে আমাদের প্রধান আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ইফতার। সাধ্যমত সবাই চেষ্টা করি আমাদের ইফতারকে বর্ণাঢ্য করতে। চিকেন রোস্ট, চিকেন ফ্রাই, শামি কাবাব, সুতি কাবাব, শাহি জিলাপি থেকে শুরু করে হরেক রকম খাবার। বাংলাদেশী ইফতারিতে আমরা খেজুর, ছোলা, মুড়ি, পিয়াজু, বেগুনি, জিলাপি, শরবত ইত্যাদির প্রাধান্য দেখতে পাই। পাশাপাশি থাকে নানা ধরনের ফল। এছাড়া অনেকে ভাত, রুটি, বিরিয়ানি ও খিচুড়ির মত ভারী খাবারও খেয়ে থাকেন।

সৌদি আরব
নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দেশ। আর এখানে অন্যরকমভাবে ইফতার আয়োজন করা হবে এটাই তো স্বাভাবিক। সৌদি আরবের মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববীতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ইফতারের আয়োজন হয়ে থাকে। এই ইফতার করতে প্রতিদিন লাখো মানুষ জড়ো হয়। মিলেমিশে ইফতার করার ফলে সৌহার্দ্যও বাড়ে। ইফতারিতে থাকে খেজুর, বিভিন্ন ধরনের ফল, জুস, তামিজ (এক ধরনের রুটি), বোরাক (মাংসের পিঠা), মানডি (মুরগি ও ভাত দিয়ে তৈরি এক ধরনের খাবার) অথবা ভেড়া/মুরগির মাংস দিয়ে তৈরি খাবসা। এছাড়া কোনাফা, ত্রোম্বা, বাছবুচান্ডর নামক নানা রকম হালুয়া। ঘরে-বাইরে বড় এক পেটের ওপর পলিথিন বিছিয়ে খাবার রেখে সবাই মিলে ইফতার করা দেশটির সংস্কৃতির অংশ। এছাড়া প্রচুর ইফতারির প্যাকেট রাস্তাঘাটে ফ্রি দেওয়া হয়। ইফতারের সময় বন্ধ রাখা হয় দোকানপাট।

ইন্দোনেশিয়া
এখানে ইফতারকে বলা হয় বুকা। অর্থ শুরু করা। এই দেশের ইফতার অপূর্ণ থেকে যায় কোলাক নামে এক ধরনের মিষ্টি খাবার ছাড়া। এই কোলাক তৈরির বিশেষ উপকরণ হচ্ছে নারকেলের দুধ ও চিনি। ইন্দোনেশিয়ানরা সাধারণত তেল ও মসলা জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলেন ইফতারে।

তবে একেবারেই যে কোনো ভাজাপোড়া থাকে না তা কিন্তু নয়। তাদের ইফতার আইটেমে সাধারণত থাকে ফল এবং ফলের রস, বিভিন্ন ধরনের ফ্রুট ককটেল, ডাবের পানি ইত্যাদি। একটু ভারী খাবারের মধ্যে থাকে কিস্যাক (সিদ্ধ চাল দিয়ে তৈরি খাবার), সোতো পাং কং (সামুদ্রিক মাছ দিয়ে তৈরি খাবার), পাকাথ (সবজি বিশেষ) ইত্যাদি। ইন্দোনেশিয়ায় বেদুক বাজানোর মাধ্যমে ইফতারের সময় নিশ্চিত করার রেওয়াজ রয়েছে। বেদুক অনেকটা আমাদের দেশের সাইরেনের মতো।
ইরাক
মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাকে এখন আর আগের মতো জৌলুশ নেই। আগের মতো জৌলুশ না থাকলেও আপন ঐতিহ্যে রোজাকে স্বাগত জানান তারা। দেশটির ইফতারেও থাকে নানা বৈচিত্র্য। দেশটিতে গরু, মহিষ বা ছাগলের দুধে রোজা ভাঙেন বেশিরভাগ মানুষ। খেজুরের সঙ্গে পান করেন বিশেষ ধরনের শরবত। তাছাড়া মিষ্টি, কাবাব, মুরগির মাংসের নাওয়াশিফ, খেজুর-বাদাম-নারকেল-চিনি-জাফরান মেশানো বিস্কুট ক্লেইচা খুবই জনপ্রিয় তাদের কাছে। থাকে টক দই দিয়ে দিয়ে তৈরি করা বিশেষ এক ধরনের শরবত। মিষ্টান্ন হিসেবে থাকে মাহালাবি। যাকে বলা যায় বিশেষ ধরনের দুধের তৈরি পুডিং। যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী তারা ইফতার করে থাকে। ইরাকিরা একসঙ্গে প্রতিবেশীদের সঙ্গে ইফতার আদান প্রদান করতে বেশি পছন্দ করেন। অনেক সময় তাদের দেখা যায় বাড়ির খোলা আঙিনা বা ছাদে ইফতার করতে।

দুবাই
খেজুর ও দুধ এই দুটি আইটেম ইফতারের ক্ষেত্রে খুবই জনপ্রিয় দুবাইয়ে। তারা বেশ ভারী ইফতার করতে পছন্দ করেন। রোজা ভাঙার পর খেয়ে থাকেন হারিরা নামক ভেড়ার মাংস ও মসুর ডাল দিয়ে তৈরি করা বিশেষ এক ধরনের স্যুপ। এছাড়া আছে মালফুফ। এটি তৈরি করা হয় মাংস, ভেজিটেবল রোলের সাহায্যে। ভেড়ার মাংস দিয়ে তৈরি ‘ওউজি’। রয়েছে আরেকটি জনপ্রিয় খাদ্য নাম কউশা মাহসি। এটি মাছের তৈরি একটি খাবার। এছাড়া মিষ্টান্ন হিসেবে থাকে চিজ দিয়ে তৈরি পেস্ট্রি যার নাম ‘কুনাফেহ’। তাদের এই আয়োজনকে সম্মিলিতভাবে ‘মেজে’ বলা হয়। তবে এলাকাভেদে এদের খাবারের বৈচিত্র্য ও ভিন্নতাও দেখা দেয়।

পাকিস্তান
পাকিস্তানে বেশ উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে পবিত্র রমজান পালন করা হয়। তাদের ইফতারেও থাকে হরেক রকম আয়োজন। ইফতারে যে আইটেম অবশ্যই থাকবে সেটা হলো রুটি ও মাংস। এটা তাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার। তাছাড়া আরও যা যা থাকে সেগুলো হলো ফল, ফলের সালাদ, ফালুদা, জুস, বিভিন্ন ধরনের শরবত, রোল, টিক্কা, তান্দুরি কাটলেট, ঘিলাফি কাবাব, নুডলস কাবাব, সফিয়ানি বিরিয়ানি ইত্যাদি।

ভারত
বিশাল এক দেশ ভারত। মুসলিম প্রধান দেশ না হলেও এই দেশে অনেক মুসলিমের বসবাস। সাধারণত এই দেশের লোকজন তাদের মুঘল আমলের ঐতিহ্যবাহী খাবার দিয়ে ইফতার করতে পছন্দ করেন। তাছাড়া এখানকার একেক রাজ্যে ইফতারির রয়েছে নিজস্ব স্বকীয়তা। যেমন হায়দ্রাবাদের লোকজন খেতে পছন্দ করেন হালিম। তামিলনাড়ু ও কেরালায় ইফতার হয় ননবো কাঞ্জি নামক এক ধরনের খাবার দিয়ে। কলকাতায় আবার দেখা যায় বিভিন্ন ধরনের কাবাবের চল। তাই তাদের ইফতারে খেজুর ও বিভিন্ন ধরনের ফলের পাশাপাশি দেখা যায় চিকেন শর্মা, বটি কাবাব, কাটলেটসহ ইত্যাদি মুখরোচক খাবার।

মিসর
দেশটিতে রোজা শুরু হয় বেশ ধুমধাম করেই। দুপুরের পরই অলিগলিতে বসে ইফতারির পসরা। সাধারণত পানি ও খেজুর দিয়ে রোজা ভাঙেন মিসরীয়রা। তবে প্রধান ইফতার আইটেমে থাকে আটা, মধু, কিশমিশ, বাদাম ছড়ানো কেকজাতীয় কোনাফা ও কাতায়েফ। তাছাড়া খেজুর, খুবানি কালোজাম মেশানো ফলের ককটেল খুশাফ, মলোকিয়াও খুবই জনপ্রিয় দেশটিতে। এক বিশেষ ধরনের পানীয়ও তৈরি করেন মিসরীয়রা, যার নাম কামার আল দিনান্দ আরাসি। শুকনা আখরোট সারা দিন পানিতে ভিজিয়ে রেখে পানীয়টি তৈরি করা হয়। রমজানে তাদের আরেকটি বিশেষত্ব হলো চাঁদ আকৃতির এক ধরনের রুটি তৈরি করা, যার নাম খাবোস রমজান। মিসরীয়দের রেওয়াজ হলো স্বজন ও বন্ধুদের বাসায় ইফতার করার। তবে ক্যাফে বা রেস্তোরাঁতে ইফতার করতে পছন্দ করেন অনেকে। দেশটির বিভিন্ন হোটেলে দেখা যায় বিভিন্ন খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেছেন অনেকে।

মালয়েশিয়া
এই দেশে সাধারণত রোজা ভাঙা হয় শুকনো খাবার বা খেজুর দিয়ে। ইফতারের আইটেমে থাকে তাদের স্থানীয় একটি খাবার নাম বারবুকা পুয়াসা। এটি মূলত আখের রস ও সয়াবিনের দুধ দিয়ে তৈরি এক ধরনের মিষ্টান্ন। এ ছাড়া তাদের ইফতারে থাকে পপিয়া বানাস, নাসি আয়াম, লেমাক লাঞ্জা, আয়াম পেরিক নামে স্থানীয় অন্যান্য খাবার। তাছাড়া পুরো রমজান মাস জুড়ে বুবুর ল্যাম্বাক নামে এক বিশেষ ধরনের খাবার স্থানীয় মসজিদ থেকে রোজাদারদের বিনামূল্যে দেওয়া হয়। নারকেলের দুধ, চাল, মাংশ, ঘি ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করা হয় বিশেষ এই খাবারটি। এই খাবারটি দেওয়ার প্রচলন শুরু হয়েছিল ৫০ বছরের বেশি সময় আগে কুয়ালামপুরের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে।

তুরস্ক
ইফতারের আয়োজন থাকে বেশ জমকালো। ইফতারের লিস্টে থাকে বিখ্যাত পাইড নামক রুটি, খেজুর, জলপাই, বিভিন্ন ধরনের পনির, পাস্তিরমাহ (মসলাই গরুর মাংস), সসেজ, ফলমূল, সবজি ও মধু। খাবার টেবিলে অবশ্যই থাকবে স্যুপ। তাছাড়া রমজান মাসে তাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে বিশেষ ধরনের একটি কাবাব। যার নাম ‘রমজান কিবাবি’। এছাড়া তাদের রয়েছে নিজস্ব এক ধরনের বিশেষ মিষ্টি। যা তৈরি করা হয় আটা কাজুবাদাম, আখরোট ও মধু দিয়ে। এই মিষ্টির সাম সিলুলি। তুরস্কের অধিবাসীদের কাছে এই মিষ্টি খুবই জনপ্রিয়।

আফগানিস্তান
যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান। রমজানকে ঘিরে বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশের মতো আফগানিস্তানেও কমতি নেই আয়োজনের। খেজুরের পাশাপাশি পুঁইশাক, আলু ও অন্যান্য সবজি প্রাধান্য পায় ইফতার আইটেমে।
ব্রুনাই
এখানকার স্থানীয় ভাষায় ইফতারকে সোংকাই বলা হয়। ঐতিহ্যগতভাবেই আঞ্চলিক বা গ্রামীণ মসজিদগুলোতে এর আয়োজন করা হয়। সাধারণত সরকার ও স্থানীয় বাসিন্দারা এই সোংকাইয়ের আয়োজন করে থাকে। এখানে ইফতারের আগে বেদুক নামে এক ধরনের ড্রাম বাজানো হয়, যার মানে হচ্ছে, ইফতারের সময় হয়ে গেছে। এ ছাড়া রাজধানী বন্দর সেরি বেগাওয়ানে সোংকাইয়ের সংকেত হিসেবে কামান থেকে গুলি ছোড়া হয়।
ইরান
এখানকার ইফতার আয়োজনে খুব বেশি কিছু থাকে না। চায়ে (চা), লেভাস বা বারবারি নামের এক ধরনের রুটি, পনির, তাজা ভেষজ উদ্ভিদ, মিষ্টি, খেজুর ও হালুয়া দিয়েই চলে সেখানকার ইফতার।
মালয়েশিয়া : এখানকার স্থানীয় লোকেরা ইফতারে আখের রস ও সয়াবিন মিল্ক খান, যাকে তাদের ভাষায় বারবুকা পুয়াসা বলা হয়। এ ছাড়া স্থানীয় খাবারের মধ্যে থাকে লেমাক লাঞ্জা, আয়াম পেরিক, নাসি আয়াম, পপিয়া বানাস ও অন্যান্য খাবার। মালয়েশিয়ার বেশির ভাগ মসজিদে রোজায় আসরের নামাজের পর স্থানীয়দের ফ্রি রাইস পরিজ দেওয়া হয়।

মালদ্বীপ
এখানে ইফতার ‘রোয়াদা ভিলান’ নামে পরিচিত। তাদের ইফতারের মূল উপাদান শুকনো বা ফ্রেশ খেজুর। বিলাসবহুল রেস্তোরাঁ বা হোটেলে ইফতার ও ডিনারের বিশেষ আয়োজন থাকে। অন্যদিকে সেখানকার মসজিদগুলোতে ফ্রি খেজুর জুসের ব্যবস্থা করা হয়।

মস্কো
এখানে ইফতার আয়োজনে খেজুর ও অন্য ফল রাখা হয়। এরপর স্যুপ, রুটি ও বিভিন্ন স্থানীয় খাবারের আয়োজন তো রয়েছেই। রাশিয়ান ঐতিহ্যবাহী কাভাসকেও তৃষ্ণা মেটাতে সেরা পানীয় হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

সিরিয়া
হালুয়ার জন্য বিখ্যাত শহর সিরিয়া। কথিত আছে, আরব দেশগুলোর মধ্যে ভালো হালুয়া তৈরি করে সিরিয়ার লোকেরা। তারা এ খাবারকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। তাদের হালুয়া যে কত নকশার হতে পারে, তা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। এ ছাড়া তারা ইফতারের পর দিজাজ সয়াইয়া, খবুজ, সরবা খায়।
ফিলিস্তিন
এখানকার ইফতারির সঙ্গে বাঙালিদের বেশ মিল রয়েছে। তবে পুরনো জেরুজালেমের বাসিন্দারা চিরায়ত ঐতিহ্য অনুযায়ী তাদের জনপ্রিয় পানীয় তামারিন জুস পান করে।

তুরস্ক
‘রমজান কিবাবি’ নামক খাদ্যটির ইফতার হিসেবে আলাদা কদর রয়েছে এখানে। এটা বিশেষ ধরনের কাবাব। এ ছাড়া রোজা ভাঙতে এখানে নানা রকম শরবতের ব্যবহার বেশ পুরনো।

ব্রিটেন
ইফতারিতে ব্রিটিশ রোজাদাররা খেজুর, ফল, স্যুপ, জুস, রুটি, ডিম, মাংস, চা-কফি ইত্যাদি গ্রহণ করে থাকে।
ইতালি
১ শতাংশ মুসলমানের এই দেশে রোজাদাররা বার্গারজাতীয় খাদ্য, নানাবিধ ফল যেমন—মাল্টা, আপেল, আঙুর, বিভিন্ন ফলের রস ইত্যাদি দিয়ে ইফতার করেন।

আমেরিকা
আমেরিকায় ইফতারসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের খেজুর, খুরমা, সালাদ, পনির, রুটি, ডিম, মাংস, ইয়াগার্ট, হট বিনস, স্যুপ, চা ইত্যাদি। জানা যায়, সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের আমল থেকে রমজান মাসে হোয়াইট হাউসেও ইফতারের আয়োজন করা হয়। এটা বর্তমানে সেখানকার একটি প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানে বিভিন্ন দেশের মুসলিম প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

কানাডা
এখানকার মুসলমানদের ইফতারিতে খেজুর, খুরমা, পনির, সালাদ, ফল, স্যুপ, জুস, রুটি, ডিম, মাংস, চা-কফি ইত্যাদি থাকে।

অস্ট্রেলিয়া
২ শতাংশ মুসলমানের এই দেশে ইফতারিতে স্যান্ডউইচ, পনির, মাখন, দুধজাতীয় খাবার, নানাবিধ ফল ও ফলের রস খাওয়া হয়।

দক্ষিণ কোরিয়া
এখানে জনসংখ্যার হারে মুসলমানের সংখ্যা মাত্র ৩ শতাংশ। ইফতারিতে এখানকার মুসলমানরা নুডলস, স্যুপ, ফলের রস, বিভিন্ন প্রকারের ফলফলাদি খেয়ে থাকে। সাহরিতে মাংস ও রুটি।

স্পেন
এটি একসময় মুসলমানদের দেশ থাকলেও বর্তমানে এখানে মুসলমানের সংখ্যা মাত্র ৪.১ শতাংশ। এখানকার মুসলিমরা ইফতারিতে হালাল শরমা, ডোনার কাবাব, হামাস (যা তৈরি করা হয় ছোলা, তিল, জলপাই তেল, লেবু, রসুন ইত্যাদি দিয়ে। এটি মূলত মধ্যপ্রাচ্যের খাবার। ), লাম্ব কোফতা, আলা তুরকা, পাইন অ্যাপেল, টমেটো সালাদ ইত্যাদি খেয়ে থাকেন। এ ছাড়া রয়েছে খিচুড়ি, বিরিয়ানি, যা সেখানে অবস্থানরত ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের প্রবাসীরা খেয়ে থাকেন। এখানকার মুসলমানরা ইফতারি হিসেবে পাস্টার দি নাতা (এক প্রকার কেক) ও সারডিন মাছের কোপ্তা বেশ পছন্দ করে। এ ছাড়া রয়েছে প্রেগোরোজ, ট্রিনচেডো, প্রাউজ (চিংড়ি), স্প্রিং গ্রিল ও স্যুপ।

জর্দান
ইফতারের জন্য তাদের পানীয় সাধারণত মিশ্রিত জ্যুস, স্যুপ ও লাচ্চি। এগুলো দিয়ে তারা রোজা ভঙ্গ করে। এরপর তাদের টেবিল আলোকিত করে ঐতিহ্যবাহী খাবার মানসাফ ও কাতাইফ দিয়ে। মানসাফ, এটি সম্ভবত ভেড়ার মাংসকে হালকা মসলা দিয়ে পাকানো হয়। পরে তার ওপর দই ও কাজুবাদাম দিয়ে সাজানো হয় এবং তা রুটি দিয়ে পরিবেশন করা হয়। আর কাতাইফ; দারুচিনি, পুদিনাপাতা, আখরোট ও চিনির মিশ্রণে তৈরি একটি খাবার, যা মধু দিয়ে খাওয়া হয়।

জাপান
এখানে মুসলমানের সংখ্যা অনেক কম। তাদের ইফতারি আইটেমে রয়েছে জ্যুস, স্যুপ ও মাশি মালফুফ, যা আঙুর, বাঁধাকপির পাতা ও চাল মিশিয়ে বানানো হয়। এ ছাড়া রয়েছে মটরশুঁটি ও গরুর কলিজা মিশ্রিত কিবদা, রুটিতে মোড়ানো মাংসের কিমা ইত্যাদি।

লেবানন
লেবানন সুবিধাবঞ্চিত দেশগুলোর অন্যতম। লেবাননীয় ইফতারে থাকে গোসতের কাবাব। আলুর তৈরি ভিন্ন জাতের খাবার। তবে তাদের ইফতারকে সাজাতে দুধ ও মধুর তৈরি বিভিন্ন খাবারও থাকে বেশ।

পর্তুগাল
সাগর তীরবর্তী দেশ পর্তুগাল। তাদের ইফতারের তালিকা প্রধান হলো এক প্রকার কেক যার নাম পাস্টার দি নাতা ও সারডিন মাছের কোপ্তা বেশ পছন্দ করেন তারা। এ ছাড়া রয়েছে প্রেগোরোজ, ট্রিনচেডো, প্রাউজ (চিংড়ি), স্প্রিং গ্রিল ও স্যুপ।

এছাড়া ইফতারে আরও অনেক খাবারের সঙ্গে থাকে রুটি, স্যুপ, পেঁয়াজু, গোশত তরকারি, ফ্রুট সালাদ, কাবাব, বেগুনি, ফ্রেশ ও শুকনো ফল। দেশটির রাস্তায় রাস্তায় পানি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখা যায় অনেককে যাতে করে রোজা ভাঙতে পারেন রোজদাররা।