সেতুর মূল কাঠামো ৬.৫ কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়েছে। এরপরের ধাপে সেতুর ওপর সড়ক ও রেলের স্ল্যাব বসানোর কাজ শুরু হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেছেন, ২০২২ সালের জুন মাসে পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। তবে এই বিশাল কর্মযজ্ঞের পেছনে রয়েছে বহু চ্যালেঞ্জ আর বাধা-বিপত্তির গল্প।
পাঠকের জন্য পদ্মা সেতু সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো যা অনেকেই হয়তো জানেন না:
পদ্মা সেতুর প্রকল্পের নাম- পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প।
পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য- ৬.১৫ কিলোমিটার, তবে ডাঙার অংশ ধরলে এর দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় প্রায় ৯ কিলোমিটার।
পদ্মা সেতুর প্রস্থ- চার লেন সড়কের সেতুটির প্রস্থ ৭২ ফুট।
পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপন করা হবে- নিচ তলায়।
সেতুতে রেলপথ সংযুক্তির সিদ্ধান্ত হয়- ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি।
পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্টের দৈর্ঘ্য- ৩.১৮ কিলোমিটার।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে নদীশাসন দুই প্রান্তে- ১২ কিলোমিটার।
পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়কের দৈর্ঘ্য- দুই প্রান্তে ১৪ কিলোমিটার।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে মোট ব্যয়- মোট খরচ করা হচ্ছে ৩০ হাজার ১৯৩.৩৯ কোটি টাকা।
৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় করা হয়েছে- ২৪ হাজার ১১৫.০২ কোটি টাকা।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে নদীশাসন ব্যয়- ৮ হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা।
পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্ট পিলার- ৮১টি।
পদ্মা সেতুর পাইলিং গভীরতা- ৩৮৩ ফুট।
পানির স্তর থেকে পদ্মা সেতুর উচ্চতা- ৬০ ফুট।
প্রতি পিলারের জন্য পাইলিং- ৬টি।
পদ্মা সেতুর মোট পাইলিং সংখ্যা- ২৬৪টি।
পদ্মা সেতুর পিলার সংখ্যা- ৪২টি।
পদ্মা সেতুতে রেল ছাড়াও আরও রয়েছে- গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অপটিক্যাল ফাইবার লাইন পরিবহন সুবিধা।
পদ্মা সেতুর নির্মাণ সামগ্রী- কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে
পদ্মা সেতু প্রকল্পে চুক্তিবদ্ধ কোম্পানির নাম- চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি।
পদ্মা সেতু রাজধানী ঢাকার সাথে সংযোগ স্থাপন করবে- দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার।
পদ্মা সেতু সংযোগ স্থাপন করেছে- মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় ও শরীয়তপুরের জাজিরায়।
সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের সাথে ঋণ চুক্তি হয়েছিল- ১২০ কোটি ডলারের।
২০১৬-১৭ সালে সেতু প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির আভিযোগ ওঠায় ঋণচুক্তি প্রত্যাহার করে- বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাইকা।
পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়- ৭ ডিসেম্বর ২০১৪ সালে।
পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান বসানো হয়- ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর।
নির্মাণের ইতিহাস
AECOM এর নকশায় পদ্মা নদীর উপর বহুমুখী আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্প ‘পদ্মা বহুমুখী সেতুর’ নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল ২০১১ সালে। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৩ সালে। মূল প্রকল্পের পরিকল্পনা করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালের ২৮ আগস্ট। সে সময় ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্প পাস করা হয়। পরে আওয়ামী লীগ সরকার এসে রেলপথ সংযুক্ত করে ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি প্রথম দফায় সেতুর ব্যয় সংশোধন করে। তখন এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। পদ্মা সেতুর ব্যয় আরও আট হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়। ফলে পদ্মা সেতুর ব্যয় দাঁড়িয়েছে সব মিলিয়ে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বাসেক) ২০১০ সালের এপ্রিলে প্রকল্পের জন্য প্রাক যোগ্যতা দরপত্র আহবান করে। প্রথম পরিকল্পনা অনুসারে, ২০১১ সালের শুরুর দিকে সেতুর নির্মাণ কাজ আরম্ভ হওয়ার কথা ছিল এবং ২০১৩ সালের মধ্যে প্রধান কাজগুলো শেষ হওয়ার কথা ছিল।প্রকল্পটি তিনটি জেলাকে অন্তর্ভুক্ত করবে- মুন্সীগঞ্জ (মাওয়া পয়েন্ট/উত্তর পাড়), শরীয়তপুর এবং মাদারীপুর (জঞ্জিরা/দক্ষিণ পাড়)। এটির জন্য প্রয়োজনীয় এবং অধিগ্রহণকৃত মোট জমির পরিমাণ ৯১৮ হেক্টর।
নকশা
পদ্মা বহুমুখী সেতুর সম্পূর্ণ নকশা এইসিওএমের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পরামর্শকদের নিয়ে গঠিত একটি দল তৈরি করে। বাংলাদেশের প্রথম বৃহৎ সেতু প্রকল্প যমুনা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেল তৈরি করা হয়। অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে ১১ সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সভাপতি নিযুক্ত করা হয়। এ প্যানেল সেতুর নকশা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন পর্যায়ে প্রকল্প কর্মকর্তা, নকশা পরামর্শক ও উন্নয়ন সহযোগীদের বিশেষজ্ঞ পরামর্শ প্রদান করে।
কর্মপরিকল্পনা
পদ্মা সেতুর ভৌত কাজকে মূলত পাঁচটি প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে যথা— (ক) মূল সেতু, (খ) নদী শাসন, (গ) জাজিরা অ্যাপ্রোচ রোড, (খ) টোল প্লাজা ইত্যাদি। মাওয়া অ্যাপ্রোচ রোড, টোল প্লাজা ইত্যাদি এবং মাওয়া ও জাজিরা সার্ভিস এরিয়া। প্রকল্পে নিয়োজিত নকশা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘মনসেল-এইকম’ ভৌত কাজের ঠিকাদার নিয়োগের প্রিকোয়ালিফিকেশন বিড ডকুমেন্ট প্রস্তুত, টেন্ডার আহ্বানের পর টেন্ডার ডকুমেন্ট মূল্যায়ন, টেন্ডার কমিটিকে সহায়তাসহ এ-সংক্রান্ত যাবতীয় কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেল নকশা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাজ তদারক করত। ভৌত কাজের বিভিন্ন প্যাকেজের জন্য দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা হয়েছিল। পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি।
পাইলিংয়ের সমস্যা
প্রথম দিকে পদ্মা নদীর তলদেশের মাটি খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয় সেতু নির্মাণকারী প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞদের। তলদেশে স্বাভাবিক মাটি পাওয়া যায়নি। সেতুর পাইলিং কাজ শুরুর পরে সমস্যা দেখা যায়। প্রকৌশলীরা নদীর তলদেশে কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় মাটির বদলে নতুন মাটি তৈরি করে পিলার গাঁথার চেষ্টা করে। স্ক্রিন গ্রাউটিং নামের এই পদ্ধতিতেই বসানো হয় পদ্মাসেতু। এরকম পদ্ধতির ব্যবহারের নমুনা বিশ্বে তেমন একটা নেই। এ প্রক্রিয়ায় ওপর থেকে পাইপের ছিদ্র দিয়ে কেমিক্যাল নদীর তলদেশে পাঠিয়ে মাটির শক্তিমত্তা বাড়ানো হয়েছে। তারপর ওই মাটিতে গেঁথে দেওয়া হয়েছে পিলার। এমন পদ্ধতির প্রয়োগ বাংলাদেশে এই প্রথম। এ পদ্ধতিতে পাইলের সঙ্গে স্টিলের ছোট ছোট পাইপ ওয়েল্ডিং করে দেওয়া হয়। পাইপের ভেতর দিয়ে এক ধরনের কেমিক্যাল পাঠিয়ে দেওয়া হয় নদীর তলদেশের মাটিতে। কেমিক্যালের প্রভাবে তখন তলদেশের সেই মাটি শক্ত রূপ ধারণ করে। একপর্যায়ে সেই মাটি পাইলের লোড বহনে সক্ষম হয়ে ওঠে। তখন আর পাইল বসাতে কোনো বাধা থাকে না।
নির্মাণব্যয়
পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট খরচ করা হচ্ছে ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা। এসব খরচের মধ্যে রয়েছে সেতুর অবকাঠামো তৈরি, নদী শাসন, সংযোগ সড়ক, ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশ, বেতন-ভাতা ইত্যাদি। বাংলাদেশের অর্থ বিভাগের সঙ্গে সেতু বিভাগের চুক্তি অনুযায়ী, সেতু নির্মাণে ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে সরকার। ১ শতাংশ সুদ হারে ৩৫ বছরের মধ্যে সেটি পরিশোধ করবে সেতু কর্তৃপক্ষ।[৫]
ক্রমিক ব্যয়বৃদ্ধি
২০০৫-এ পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রাথমিক প্রাক্কলন করা হয়েছিল ১২,০০০/- কোটি টাকা। একনেক (Executive Committee of the National Economic Council)-এর সভায় পৃথিবীর অন্যান্য তুলনীয় সেতুর নির্মাণ ব্যযের নিরিখে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী সর্বমোট নির্মাণ ব্যয় ১০,০০০/- কোটি টাকায় সীমিত রাখার পরামর্শ প্রদান করেন।
২০০৭ এর আগস্ট মাসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে একনেক-এর সভায় পদ্মা সেতুর চূড়ান্ত প্রাক্কলন ১০,১৬১/- কোটি অনুমোদন করা হয়।
পরবর্তী কালে বিভিন্ন সময়ে প্রাক্কলন বৃদ্ধি করা হয়। সর্বশেষ অনুমোদিত প্রাক্কলনের পরিমাণ ৩০,১৯৩/- কোটি টাকা যা মূল প্রাক্কলনের চেয়ে ২০,০৩২/- কোটি টাকা বেশী। বলা হয়েছে বাস্তবায়ন বিলম্বিত হওয়াই প্রকল্প ব্যয় এতো বৃদ্ধি পাওয়ার মূল কারণ।
মার্কিন ডলারের হিসাবে ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সড়ক-রেল সেতুর নির্মাণ ব্যয় এগারো বছরে ১.৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ৩.৫৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। চীনের ৬.৪ কিলোমিটার দীর্ঘ উফেনসাং ইয়াংজী সড়ক-রেল সেতু ২০২০ সালের ডিসেম্বরে চালু করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর সঙ্গে তুলনীয় এই সেতুর নির্মাণে ৪ বছর লেগেছে এবং ব্যয় হয়েছে ১.০৫ বিলিয়ন ডরার যা পদ্মা সেতুর এক-তৃতীয়াংশের চেয়েও কম।
নির্মাণের সময়ক্রম
- ২০১৭
- ৩০ সেপ্টেম্বর দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর পদ্মা সেতুতে পিলারের ওপর বসানো হয় প্রথম স্প্যান। শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর ভাসমান ক্রেনের সাহায্যে এই স্প্যান বসানো হয়।
- ১১ মার্চ ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিয়ারের ওপর বসে তৃতীয় স্প্যান।
- ১৩ মে ৪০ ও ৪১ নম্বর পিয়ারের ওপর চতুর্থ স্প্যান বসানো হয়।
- ২৯ জুন সেতুর পঞ্চম স্প্যান বসানো হয়েছে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা এলাকায়।
- ২০১৮
- জানুয়ারি মাসে জাজিরা প্রান্তের তীরের দিকের ষষ্ঠ শেষ স্প্যান বসে।
- ২৮ জানুয়ারি পদ্মা সেতুর ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারের ওপর দ্বিতীয় স্প্যান ৭বি সুপার স্ট্রাকচার বসানো হয়। প্রথম স্প্যান বসানোর প্রায় চার মাস পর জাজিরার নাওডোবা প্রান্তে তিন হাজার ১৫০ টন ধারণ ক্ষমতার এ স্প্যান বসানো হয়।
- মাওয়া প্রান্তে ৪ ও ৫ নম্বর পিয়ারের ওপর বসে সপ্তম স্প্যান।
- ২০১৯
- ২০ ফেব্রুয়ারি জাজিরা প্রান্তে ৩৬ ও ৩৫ নম্বর পিয়ারের ওপর অষ্টম স্প্যান বসানো হয়।
- ২২ মার্চ সেতুর ৩৫ ও ৩৪ নম্বর পিয়ারের ওপর বসে নবম স্প্যানটি।
- ১০ এপ্রিল মাওয়া প্রান্তে ১৩ ও ১৪ নম্বর পিয়ারের ওপর দশম স্প্যান।
- ২৩ এপ্রিল শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ৩৩ ও ৩৪ নম্বর পিয়ারের ওপর ১১তম স্প্যান বসে।
- ১৭ মে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের মাঝামাঝি স্থানে ২০ ও ২১ নম্বর পিয়ারের ওপর ১২তম স্প্যান বসানো হয়েছিল।
- ২৫ মে ১৪ ও ১৫ নম্বর পিয়ারের ওপর ১৩তম স্প্যান ৩বি বসানো হয়।
- ২৯ জুন ১৪তম স্প্যান বসানো হয়।
- ২২ অক্টোবর জাজিরা প্রান্তে ২৪ ও ২৫ নম্বর পিয়ারের ওপর পদ্মা সেতুর ১৫তম স্প্যান বসানো হয়েছিল।
- ২৭ নভেম্বর মাওয়া প্রান্তে ১৬ ও ১৭ নম্বর পিয়ারের ওপর ১৬তম স্পানটি বসানো হয়।
- ২০১৯ সালেল ৫ ডিসেম্বর পিয়ার ২২ ও ২৩–এর ওপর মূল সেতুর ১৭তম স্প্যানটি বসানো হয়।
- ১১ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর ১৮তম স্প্যান বসানো হয়।
- ১৮ ডিসেম্বর বসানো হয় ১৯তম স্প্যান।
- ৩১ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে ১৮ ও ১৯ নম্বর পিলারের উপরে বসানো হয় পদ্মা সেতুর ২০তম স্প্যান। ধূসর রঙের ‘৩-এফ’ নম্বরের স্প্যানটি খুঁটির উপরে বসানো হয়।
- ২০২০
- ১৪ জানুয়ারি পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৩২ ও ৩৩ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয় ২১তম স্প্যান।
- ২৩ জানুয়ারি মাওয়া প্রান্তের ৫ ও ৬ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয় ২২তম স্প্যান।
- ২ ফেব্রুয়ারি বসেছে ২৩তম স্প্যান।
- ১১ ফেব্রুয়ারি বসেছে ২৪তম স্প্যান।
- ২১ ফেব্রুয়ারি ২৫তম স্প্যান বসানো হয়।
- ১০ মার্চ পদ্মা সেতুর ২৬তম স্প্যান বসানো হয়। শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ২৮ ও ২৯ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয় এই স্প্যান।
- ২০ এপ্রিল ২৭তম স্প্যানটি পিয়ার-২৭ ও ২৮-এর ওপর বসানো হয়।
- ১১ এপ্রিল জাজিরা প্রান্তে বসানো হয় ২৮তম স্প্যান।
- ৪ মে মাওয়া প্রান্তে সেতুর ১৯ ও ২০তম পিয়ারের ওপর ‘৪এ’ আইডি নম্বরে সেতুর ২৯তম স্প্যান বসানো হয়।
- ৩০ মে জাজিরা প্রান্তে সেতুর ২৬ ও ২৭ নম্বর পিয়ারের (খুঁটি) ওপর বসানো হয় ৩০তম স্প্যান।
- ১০ জুন পদ্মা সেতুর ৩১তম স্প্যান বসানো হয়। সেতুর ২৫ ও ২৬ নম্বর পিয়ারে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ৫-এ স্প্যান বসানো হয়।
- ১১ অক্টোবর পদ্মা সেতুর ৩২তম স্প্যানটি বসানো হয়। পদ্মায় তীব্র স্রোতের কারণে প্রথম দিন বসানো সম্ভব না হলেও প্রকৌশলীদের প্রচেষ্টায় দ্বিতীয় দিনে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সেতুর ৪ ও ৫ নম্বর পিলারের ওপর স্প্যানটি বসানো হয়। বন্যা ও পদ্মা নদীর তীব্র স্রোতের কারণে স্প্যানটি বসানো হয় চার মাস পর।
- ২০ অক্টোবর বসানো হয় সেতুর ৩৩তম স্প্যান।
- ২৫ অক্টোবর ৩৪তম স্প্যান বসানো হয় সেতুর মাওয়া প্রান্তে ৭ ও ৮ নম্বর পিয়ারের ওপর স্প্যান ২-এ।
- ৩১ অক্টোবর ৩৫তম স্প্যান বসানো হয় মাওয়া প্রান্তে ৮ ও ৯ নম্বর পিলারের ওপর স্প্যান ২-বিতে।
- ৬ নভেম্বর পদ্মা সেতুর ৩৬তম স্প্যান বসানো হয় সেতুর মাওয়া প্রান্তের ২ ও ৩ নম্বর পিলারের ওপর।
- ১৩ নভেম্বর ৩৭তম স্প্যান ‘২-সি’ মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে ৯ ও ১০নং পিয়ারের ওপর বসানো হয়।
- ২১ নভেম্বর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের ১ ও ২ নম্বর খুঁটির ওপর ৩৮তম স্প্যানটি সফলভাবে বসানো হয়।
- ২৭ নভেম্বর ৩৯ তম স্প্যান বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়। স্প্যানটি মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের ১০ ও ১১ নম্বর পিলারের ওপর ‘টু-ডি’ স্প্যানটি বসানো হয়।
- ৪ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর ৪০তম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় সেতুর ছয় হাজার মিটার।
- ১০ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর ১২ ও ১৩ তম পিলারে ৪১তম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পুরো পদ্মা সেতু।
- ২০২১
- ২৩ আগস্ট সর্বশেষ সড়ক স্ল্যাব বসানো হয়।
- ১৯ অক্টোবর থেকে পদ্মা সেতুর সড়কপথে পানি নিরোধক রাসায়নিকের স্তর তৈরির কাজ শুরু হয়
চুক্তিবদ্ধ সংস্থা
২০১৪ সালের ১৭ জুন পদ্মা সেতু নির্মানে আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয় বাংলাদেশ সরকার ও চীনা চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে চীনের কোম্পানি পদ্মাসেতুর কার্যাদেশ পায়। পদ্মা সেতু নির্মাণে ২০১০ সালে প্রথম দরপত্র আহবান করা হলে সেখানে প্রি কোয়ালিফিকেশনের জন্য ৪০ টি কোম্পানি অংশ নেয়। বিশ্বব্যাংক, জাইকা ও এডিবির তত্বাবধানে এদের মধ্যে ৫ টি কোম্পানিকে বাছাই করা হয়। পরে বিশ্বব্যাংকের আপত্তির কারনে একটি কোম্পানি বাদ পড়ে যায়। আর্থিক প্রস্তাব আহ্বান করলে শুধুমাত্র চীনের এই কোম্পানিটি আর্থিক প্রস্তাব জমা দেয়। সেতুটি তৈরির জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড এর আওতাধীন চায়না মেজর ব্রীজ নামক একটি কোম্পানী। কাজ শুরু হয় ৭ ডিসেম্বর ২০১৪। এতে ব্যয় হচ্ছে ৩০ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা৷
প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা
পদ্মা সেতুর সড়ক পথের পিচ ঢালাইয়ের কাজ (কার্পেটিং) আজ বুধবার (১০ নভেম্বর) সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে থেকে শুরু হয়েছে।
গণমাধ্যমকে এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবু নাসের টিপু। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এই কাজের তদারকি করছেন বলে জানান উপসচিব।
গত ১৯ অক্টোবর থেকে পদ্মা সেতুর সড়কপথে পানি নিরোধক রাসায়নিকের স্তর তৈরির কাজ শুরু হয়। চার মিলিমিটার পুরুত্বের এই স্তরকে প্রকৌশলীরা ‘ওয়াটারপ্রুফ মেমব্রেন’ নামে অভিহিত করছেন।
এর আগে পরীক্ষামূলকভাবে সেতুর ৪০ নম্বর খুঁটির কাছে ৬০ মিটার অংশে কার্পেটিং হয়েছিল। ইংল্যান্ড ও ইতালি থেকে এই স্তর তৈরির জন্য রাসায়নিক আমদানি করা হয়েছে। সড়কপথে পানি নিরোধক রাসায়নিকের স্তর বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। তারপর শুরু হয়েছে কার্পেটিং।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্টে পানি নিরোধক স্তর বসানো হচ্ছে না। তাই ভায়াডাক্টের ৬০ মিটার অংশে পিচ ঢালাই করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে মূল সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে ৯৫ শতাংশ। প্রায় ৮৯ শতাংশ প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে। আর নদী শাসন কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৮৬ শতাংশ। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে সংযোগ সড়কের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।
আগামী বছরের জুন মাসের আগেই পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য সম্পূর্ণ উপযোগী হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব
প্রস্তাবিত পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প মাওয়া-জাজিরা পয়েন্ট দিয়ে নির্দিষ্ট পথের মাধ্যমে দেশের কেন্দ্রের সাথে দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সরাসরি সংযোগ তৈরি করবে। এই সেতুটি অপেক্ষাকৃত অনুন্নত অঞ্চলের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিল্প বিকাশে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখবে। প্রকল্পটির ফলে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৪৪,০০০ বর্গ কিঃমিঃ (১৭,০০০ বর্গ মাইল) বা বাংলাদেশের মোট এলাকার ২৯% অঞ্চলজুড়ে ৩ কোটিরও অধিক জনগণ প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হবে। ফলে প্রকল্পটি দেশের পরিবহন নেটওয়ার্ক এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। সেতুটিতে ভবিষ্যতে রেল, গ্যাস, বৈদ্যুতিক লাইন এবং ফাইবার অপটিক কেবল সম্প্রসারণের ব্যবস্থা রয়েছে। এই সেতুটি নির্মিত হলে দেশের জিডিপি ১.২ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে।
বিতর্ক ও গুজব
জুলাই ২০১৯ সালে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজে মানুষের মাথা লাগবে বলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে গুজব ছড়ায়। এতে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অপহরণকারী ধারণা করে অনেক মানসিক ভারসাম্যহীনকে মারধরে পুলিশে হস্তান্তর করার ঘটনা ঘটে। পরে এ ঘটনাকে গুজব ও ভিত্তিহীন উল্লেখ করে ৯ জুলাই ২০১৯ তারিখে সেতু নির্মাণ কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমগুলোতে বিজ্ঞপ্তি পাঠায়। এক্ষেত্রে গবেষকরা সেতু কর্তৃপক্ষকে সেতুটি নির্মাণে খুঁটিনাটি সকল তথ্য জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার পরামর্শ দেন।
তথ্য সূত্র: উইকিপিডিয়া, বাংলা ট্রিবিউন, দ্য পদ্মা২৪.কম