গবেষকরা নাম দিয়েছেন “বাংলা মিউটেশন”। ২০২০ সালে বাংলাদেশে ৩৪টি ভিন্ন চরিত্রের সার্স কভ-২ এর জিনোনেমে ৪ হাজার ৬০৪ রকমের ভিন্নতা পাওয়া গেছে। গত বছরের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বাংলাদেশে পাওয়া এমন ইউনিক মিউটেশন পৃথিবীর অন্য কোথাও পাওয়া যায়নি।
রবিবার (২১ মার্চ) আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকাশনা সংস্থা “এলসেভিয়ার” এবং নেদারল্যান্ডসের “ভাইরাস রিসার্চ” জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ চারটি প্রতিষ্ঠানের গবেষকদের বাংলাদেশের ২০২০ সালের জিনোম সিকুয়েন্সগুলো নিয়ে বিশ্লেষণী গবেষণাপত্র।
দেশে সবচেয়ে বেশি নতুন ধারার জিনগত পরিবর্তন তথা ইউনিক মিউটেশন (৩টি করে) পাওয়া যায় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুরে। সবচেয়ে বেশি বৈচিত্র্যময় জিনোম সিকুয়েন্স পাওয়া গেছে চট্টগ্রাম অঞ্চলে। এখানে একইসঙ্গে সৌদি আরব তথা মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া অঞ্চলের ভাইরাসের জিনোম সিকুয়েন্সের সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে বাংলাদেশের ভাইরাসের জিনোমগুলোর। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপ অঞ্চলের ২০২০ সালের সদৃশ জিনোম সিকুয়েন্সের ভাইরাস।
গবেষকরা জানান, পৃথিবীব্যাপী সার্স কভ-২-এর যে পরিবর্তনটিকে ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী ও সংক্রমণশীল বলে বিবেচনা করা হয়েছে, সেই জি৬১৪ডি মিউটেশন ৯৮ শতাংশ বাংলাদেশি সিকুয়েন্সের মধ্যেই ছিল।
গবেষকরা জানান, ডিসেম্বরের শুরুর দিক পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ডাটাবেস “গ্লোবাল ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভিলেন্স অ্যান্ড রেসপন্স সিস্টেম”-এ জমাকৃত বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পূর্ণাঙ্গ ও সম্পূর্ণ জিনোম সিকুয়েন্সগুলো নিয়ে করা এই গবেষণায় বাংলাদেশি সার্স কভ-২-এর জিনোম বিন্যাসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সার্স কভ-২-এর জিনোম সিকুয়েন্সের। বায়োইনফরমেটিক্স ও কম্পিউটেশনাল বায়োলজির বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে এই গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে ভাইরাসের ডি৬১৪জি অংশের মিউটেশন বা পরিবর্তন যেখানে যেখানে দেখা গেছে, সেসব জায়গাতেই জিনগত পরিবর্তনের হার অনেক বেশি এবং এই পরিবর্তনটিই হয়তো বা ২০২০ সালের মাঝামাঝি দেশে সংক্রমণের হার বেশি থাকার অন্যতম কারণ হয়ে থাকতে পারে। এছাড়াও নন-স্ট্রাকচারাল প্রোটিন বা এনএসপি প্রোটিনগুলোতে সবচেয়ে বেশি স্বতন্ত্র জিনগত পরিবর্তন পাওয়া গেছে বাংলাদেশে।
গবেষক দলের মতে, বাংলাদেশের নতুন জিনগত মিউটেশনগুলোর বিরুদ্ধে সম্প্রতি উদ্ভাবিত ও প্রয়োগকৃত টিকা কার্যকর কিনা সেটাও গবেষণাগারে গবেষণা করে দেখা জরুরি। এতে বাংলাদেশের রোগীদের জন্য টিকার নকশায় কোনও রকম পরিবর্তন আনা দরকার কিনা তা খুব দ্রুতই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন গবেষকেরা এবং ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো।